নিজস্ব প্রতিবেদক :
বগুড়ার আদমদীঘির রক্তদহ বিলে সান্দিড়া-বোদলার খেয়াঘাট। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা এখন দুই উপজেলার মানুষের প্রাণের দাবি। দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে বিল পাড়ের মানুষেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়ে কাজ শেষে নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসেন আপন ঠিকানায়। সেখানে একটি ব্রিজের অভাবে এপারের লোকজন ওপারে আত্মীয়তাও করতে চান না। এই অবস্থায় কেটে গেল স্বাধীনতার ৫২ বছর। এই খেয়াঘাটটি নওগাঁর রাণীনগরের বোদলা, পালশা ও তেবারিয়াসহ ১১ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের দুর্ভোগ যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খেয়া ঘাটে দু-পাড়ের মানুষের অর্ধশত বছরের কাঙ্ক্ষিত একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে কমে যাবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রচেষ্টার পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে খেয়াঘাটের ব্রিজটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেসময় এলাকায় আনন্দের জোয়াড় বইতে শুরু করে। পরবর্তীতে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন সাধারণ মানুষের মাঝে দুঃখ নেমে এসেছে।
সান্তাহার পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বোদলা-সান্দিড়া পারঘাটে ব্রিজটি নির্মাণ হলে দু-পারের মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হবে। খুলে যাবে ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার, ঘুচে যাবে বেকারত্ব। কৃষক সহজেই ধানসহ অন্য শস্য ঘরে তুলতে পারবে।
বোদলা গ্রামের বাসিন্দা দাউদুল হক বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু জেতার পর কেউ আর খোঁজ রাখে না। বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের কাছে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বহুবার দাবি জানানো হয়েছিলো। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি ফের উত্থাপনের পর খেয়াঘাটে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন হয়। এরপর সেখানে মাটি পরিক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।
তেবারিয়া গ্রামের বুলবুল হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে রোগী বহন করতে গেলে খেয়াঘাটে একবার নৌকা মিস করলে বা ছেড়ে গেলে প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ফলে রোগীর অবস্থা হয় আশঙ্কাজনক। এখানে ব্রিজ নির্মাণ হলে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে এই এলাকার ১১গ্রামের মানুষ।
বোদলার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার বলেন, রানীণগর উপজেলা সদরে পৌঁছাতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। অথচ খেয়াঘাটে একটি ব্রিজ হলে মাত্র ৫ কিলোমিটার অতিক্রম করলে সান্তাহার কলেজে পৌঁছানো সম্ভব। ফলে শিক্ষারর্থীদের প্রায় ১১ কিলোমিটার পথ কমে যাবে, কমে যাবে পথের দুর্ভোগ।
আদমদীঘি উপজেলা প্রকৌশলী রিপন কুমার সাহা জানান, ব্রিজটি রাণীনগর উপজেলার মধ্যে হওয়ায় নির্মানের দায়িত্ব তাদেরই। আমার জানা মতে ব্রিজের জন্য মাটি পরিক্ষা করা হয়েছে। তবে সেখানে খাল খননসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে আমারা সেগুলোর প্রস্তাবপত্র পাঠিয়েছি।
রানীনগর উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাঈল হোসেন জানান, ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবপত্র পাঠানো রয়েছে। ব্রীজটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর মাটি পরিক্ষা করা হয়েছিলো। ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে ব্রিজটি আরো সম্প্রসারণ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সকল বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে অর্থ বরাদ্দ পেলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। তবে আমি আশাবাদী এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর দ্রুতই পাওয়া যাবে।