নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার খুন করলে সেটা ঠিক। কেউ তার বিরুদ্ধে বললেই হয়ে গেল মানবাধিকার লঙ্ঘন। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কেউ বললে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নির্যাতন ও নিপীড়ন। আজকে আদিলুর রহমান খান শুভ্র একজন ভদ্র লোক ও আইনজীবী। তিনি এই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বিধায় তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এবং সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব গুণী মানুষকে আক্রমণ করছে। ব্যারিস্টার রফিক উল হককে আক্রমণ করেছিল। এখন ড. ইউনূসকে আক্রমণ করছেন।
রিজভী বলেন, তিনি দেশের ছেলে, নোবেল পুরস্কার পেয়ে দেশের সম্মান বয়ে এনেছেন; কিন্তু সরকারের মনে কোথায় যেন ঈর্ষা কাজ করছে। আজকে এই সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাশ হয়।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা চিকিৎসা পায় না। অনেকেই কারাগারে মারা গেছেন। এবার এই সরকারের টার্গেট উপরের দিকে, মূলত তারা নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চান; কিন্তু এবার গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ জেগে ওঠেছে তারা রাস্তায় নেমেছে।
রিজভী বলেন, সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একটা জরিপ করতেন। তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে জরিপ করে দেখতেন যে তিনি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আদিলুর রহমান খানকে যে সাজা দিয়েছেন-তা জনগণ সমর্থন করে কিনা?
তিনি বলেন, আসলে এই সরকার গণতন্ত্রের কোনো মানদণ্ড মানে না। তার মানে হলো- তোরা যে যাই বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই (ক্ষমতা)।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের কীর্তিমান মানুষদের একজন; কিন্তু আমরা তাদের মনে রাখি না। অথচ এসব মানুষ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা।
তিনি বলেন, মানবাধিকারের এবং গণতন্ত্রের কথা বললে আওয়ামী লীগ রিয়্যাক্ট করে। কেন করে? কারণ তারা তো এসব করেছেন। তারা যদি এই কাজগুলো না করতেন তাহলে প্রতিক্রিয়া হবে কেন? ১৫ বছর ধরে তারা গুম ও খুনের শাসন চালিয়েছেন। আমাদের ইলিয়াস আলী কই? চৌধুরী আলম, জাকির ও সুমন তারা সবাই কই? আওয়ামী লীগের এসব কিছুই বিদেশিরা সবাই জানে। তবে এগুলো নিয়ে কথা বলা যাবে না। শেখ হাসিনার সরকার গুম-খুন করলে সেটা ঠিক। আর আমরা যদি মানবাধিকারের কথা বলি তাহলে তারা প্রচণ্ড রেগে যায়। কিন্তু তা বলা যাবে না! সুষ্ঠু নির্বাচন আওয়ামী লীগের চরম শত্রু।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আওয়ামী লীগের চরম শত্রুপক্ষ। এটার বিরুদ্ধে কথা বললেই তার বিচার শুরু হয়ে যাবে আদালতে। গ্রেপ্তার হবেন এবং মামলা হবে। শেখ হাসিনা এবং তার সরকার যদি নির্বাচিত হতো তাহলে তারা একটা সার্ভে করতেন। যে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসসহ যাদের নামে মামলা দিয়েছেন এতে জনগণ আপনার পক্ষে না বিপক্ষে। তিনি তো তা করবেন না, তিনি সার্ভে বিশ্বাস করেন না। গণতন্ত্রের কোনো প্রথা পদ্ধতি তিনি বিশ্বাস করেন না।
জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা করছে এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, জেলখানায় একটার পর একটা বিএনপি নেতা মারা যাচ্ছেন বিনা চিকিৎসায়। হিটলারের ক্যাম্পে যে কায়দায় মানুষ মারা হয়েছে, বিএনপি নেতারা একইভাবে জেলখানায় মারা যাচ্ছে। এখন শেখ হাসিনার টার্গেট ওপরের দিকে। তিনি নির্বাচনকে নিবিঘ্ন করতে চান। এই কারণে তিনি এখন মরণ খেলায় নেমেছেন। কিন্তু এখন আর তিনি তা পারবেন না। কারণ যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে তারা একযোগে রাস্তায় নেমে অবরোধ করে এ সরকারকে রুখে দেবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।