নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণভোট আইন আমরা খুব দ্রুত করতে যাচ্ছি। আজকে তো বৃহস্পতিবার, ধরেন আগামী তিন চার কার্যদিবসের মধ্যে হয়ে যাবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকে আরেকটা ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেয়েছিলাম। এটা আমাদের ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা বেশ কয়েকটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন দেখেছিলাম। সবসময় দেখতাম ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো এবং এটা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হতো। এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলগুলোর ব্যর্থতা থাকে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে হতো। খুবই আনফরচুনেটলি আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটাকে অবৈধ করা হয়। এরপর এটার সুযোগ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা বাতিল করে।
তিনি বলেন, মাসখানেক আগের একটা রায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি খাইরুল হক সাহেব যেভাবে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধভাবে যে রায় দিয়েছিলেন— তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ। সেই রায়টা বাতিল হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এটা কার্যকর হবে আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই এবং আমাদের উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে যে সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি। যেহেতু উনারা এখন সাজাপ্রাপ্ত, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাজেই আমরা মনে করি ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারত যেন আমাদের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন চুক্তি অনুযায়ী তার বাধ্যবাধকতা পালন করে। সেটা স্মরণ করিয়ে আমরা ভারতকে চিঠি দিচ্ছি।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, একই সঙ্গে এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশের ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক যে অপরাধ আদালত রয়েছে সেখানে আমরা কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারি কিনা, সেটা বিচার বিবেচনা করার জন্য আমরা অচিরেই বসে সিদ্ধান্ত নেব।
ড. আফিস নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এটা এখনই কার্যকর হচ্ছে না।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারদেরকে কন্টোল, নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ আদালত সচিবালয়ের মাধ্যমে করবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ হোক, এই আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের মনে গত ২০-৩০ বছর যাবত রয়েছে। এটা নিয়ে আলোচিত হচ্ছে, অনেক পলিটিক্যাল পার্টি অনেক আশ্বাস দিয়েছেন, অনেক কিছু বলেছেন, আলটিমেটলি আমরা এখন একটা ভালো জায়গায় আসতে পেরেছি। সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এটা আমাদের বিচারীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ছিল। সেখানে এইটা এই প্রস্তাবে ঐকমত্য, কমিশনের অংশগ্রহণকারী, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সব দল এটা সম্মত হয়েছে। সব দল এটা একমত যে, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটা পৃথক সচিবালয় রাখবে, পৃথক সচিবালয়ের একটা আইনের নীতিগত অনুমোদন জন্য এর আগে আমরা এটা উপদেষ্টা মিটিংয়ে করেছিলাম।
আজকে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের যে কন্ট্রোল বা শৃঙ্খলা কন্ট্রোল এবং শৃঙ্খলা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত। রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত মানে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শক্রমে করেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের কাজটা করেন। প্রায়োগিকভাবে নিম্ন আদালতে বিচারকদের যে শৃঙ্খলা এবং কন্ট্রোল যে বিধানগুলা সেটা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ক্ষেত্রে এটা আইন মন্ত্রণালয় করে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ এই অধ্যাদেশ কার্যকরী হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারক যে কন্ট্রোল, কন্ট্রোল বলতে কি বুঝায় যে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা জনিত বিষয়াদি, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়াদি, এমনকি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ, সমস্ত কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে। আইন মন্ত্রণালয় যেটা করতো এটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিচার কাজে নিয়োজিত যারা আছেন, সেই বিচারকদের কন্ট্রোল, শৃঙ্খলা এবং ছুটির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে। কিন্তু অন্য যারা আছেন, বিচার বিভাগে যারা কাজ করেন, বিচারক, তারা অন্য কোন জায়গাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে, আমাদের নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা নিম্ন আদালতের বিচারকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উনারা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে, যে প্রশাসনিক দায়িত্ব নিম্ন আদালতের বিচারকরা পালন করবেন, উনাদের কাজের শৃঙ্খলা, ছুটির বিষয়াদি, কন্ট্রোল এটা কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। শুধুমাত্র নিম্ন আদালতের বিচারক যারা আছে তাদের কন্ট্রোল, নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান, শৃঙ্খলা ত্রুটিজনিত বিষয়টি, উচ্চ আদালতের হাতে চলে যাবে। উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে নিম্ন আদালতে যারা বিচারক থাকতেন, তাদের আইন মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল করতো বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায় নিম্ন আদালতের বিচারকরা জামিন দেবেন কি দেবেন না, সাজা দেবেন কি দেবেন না, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেন। এমন অনেক অভিযোগ আমরা শুনতাম। এমন অনেক কিছু আমরা দেখতাম। এই অবস্থার অবসান ঘটবে। এই অধ্যাদেশ পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয় তথা সরকারের আর কোনো কন্ট্রোল থাকবে না। সম্পূর্ণভাবে এটা উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে।
এখনই কার্যকর হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাকে ফাংশনিং করতে হবে। আমরা বিধান রেখেছি সচিবালয় সম্পূর্ণভাবে কার্যকরী হওয়ার পর সরকার সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর তত্ত্বাবধান আদালতের উপর তত্ত্বাবধান নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলার বিষয়ে উচ্চ আদালতের হাতে ব্যস্ত করা হবে। আশা করছি আমরা উচ্চ আদালতের সচিবালয় কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে। গঠন করা হয়ে যাবে। এরপর থেকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বাবধান শৃঙ্খলা এবং ত্রুটির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। সরকারের আর কোন কন্ট্রোল থাকবে না।
উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের যে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা আর্থিক স্বাধীনতা সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে আমরা কতগুলো বিধান করেছি। বিধান হচ্ছে, আদালতের উচ্চ আদালতের বা নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের উন্নয়ন বা সম্পূর্ণ উচ্চ আদালত বিচার বিভাগের আপনার যে কোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটা যাচাই বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাই বাচাই কমিটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেই প্রকল্প একটা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। পরামর্শের জন্য সেই কমিটির প্রধান থাকবে উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি। অনুমোদন বা সম্মতিতে বা উনি যার নাম রেফার করবেন সেরকম একজন আপিল বিভাগের বিচারকের নেতৃত্বে একটা কমিটি থাকবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকা বা তার কম হয় সেই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন। আর কারো অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না, ৫০ কোটি টাকার যদি বেশি হয় তখন প্রধান বিচারপতি এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিফ্রিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















