নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অগ্নিপরীক্ষার নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। গত ১৪ অক্টোবর ভয়াবহ এক আগুনে মার্কেটটি পুড়ে যায়। এর ৬০ দিন পর মার্কেটটি পুনর্র্নিমাণের কাজ শুরু হলো।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আপনাদেরকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে, আগামী নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারেন, তাহলে এমনভাবে উন্নয়নের সর্বোশিখরে পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন, আমাদের গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে, কিসের জন্য ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা হলো? কিসের জন্য জাস্টিস কোয়াটারে হামলা হলো, কিসের জন্য পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হলো?
নানক বলেন, কেন তাকে (নিহত পুলিশ সদস্যের সন্তানকে) পিতৃহারা করা হলো? শতশত পুলিশকে নির্মমভাবে আহত করা হয়েছে। কিসের স্বার্থে অবরোধ করেছেন? এই অবরোধ জনগণের বিরুদ্ধে অবরোধ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘তারেক রহমান সাব লন্ডনের প্রাসাদে থাকেন। উনি ওখান থেকে লাদেনের মতো বক্তৃতা দেন। তারেক রহমানের লক্ষ্য হলো- আমি যে দেশে থাকতে পারি নাই, সেই দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেবো না। তারেক রহমানের লক্ষ্য হলো, যে দেশে আমি থাকতে পারি না, সেই দেশকে আমি স্থিতিশীল থাকতে দেবো না। তারেক রহমানের লক্ষ্য হলো, আমি যে দেশে শিক্ষা নিতে পারি নাই, ম্যাট্রিক পাশ করতে পারি নাই, সেই দেশে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে দেবো না।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। ওই সময়কার ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্গত মোহাম্মদপুর, আদাবর, বসিলা, শেরে বাংলা নগর এলাকার সড়ক-অবকাঠামো, পানির সরবরাহ, করবস্থান তৈরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
তিনি বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে এই (কৃষি মার্কেট) মার্কেটে আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। সমস্ত মার্কেটটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) জীবনে নেমে আসে এক অনিশ্চয়তা। এই দোকান মালিকদের জীবনে যেমন অনিশ্চয়তা আসে, তেমনি মালিকরা যাদের দোকান ভাড়া দিয়েছেন, সেসব ব্যবসায়ীদের জীবনেও অনিশ্চয়তা নেমে আসে। যারা এসব দোকানে কাজ করতেন তাদের জীবনে নেমে আসে এক দুর্বিসহ পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতে আমরা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করিনি। আমরা আমাদের দায়িত্ব জানি। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের সেবা করেন। মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, ফজরের নামাজ আদায় করেন। মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি দিন রাত পরিশ্রম করেন। সেই মানুষটির কর্মী হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করতে ভুল করিনি। আর ভুল করিনি বলেই মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে আমরা মার্কেটটি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের চরিত্র এমন, আমরা এই মার্কেটে খুঁজতে যাইনি, জরিপ করিনি কে আওয়ামী লীগ করতেন, কে বিএনপি করতেন, কে জামায়াত করতেন, কে জাতীয় পার্টি করতেন। আমরা এই মোহাম্মদপুরে যে উন্নয়ন করেছি, যে রাস্তা করেছি, সেই রাস্তা দিয়ে সব দলের নেতাকর্মী চলাচল করে। এই মোহাম্মদপুরে পানির জন্য হাহাকার ছিল। আমরা পানির পাম্প স্থাপন করেছি। এই মোহাম্মদপুরে বিএনপি-জামায়াতের আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তারা লুটপাট করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছি।
তিনি বলেন, এই মোহাম্মদপুর ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, মাদকের স্বর্গরাজ্য। আমরা সেই মাদকের স্বর্গরাজ্যের কবর রচনা করেছি। যদিও এখন আবার মাথা উঁকিঝুঁকি মারে। এই মোহাম্মদপুরের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যেত না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকতো। গাড্ডায় পড়ে রিকশা উল্টে যেত। সেই রাস্তাঘাট আমরা করে দিয়েছি। যে বসিলার মানুষ মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় বলত, ঢাকা যাচ্ছি। সেই বসিলা এখন তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে। আমরা যা বলি, তা করি। আমাদের নেত্রী যা বলেন, তা করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমউল্লাহ্ সলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ সাদেক খান ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরিক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহীনা আক্তার সাথী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কৃষি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেওয়া হয় এবং কৃষি মার্কেটে পুনরায় মার্কেট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়।