Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগামীতে দেশজুড়ে হবে বাণিজ্য মেলা : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামীতে দেশজুড়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী উপলক্ষে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরে চলবে। আগামীতে জেলায়-জেলায়, উপজেলায়-উপজেলায় বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে নির্ধারণ হবে, বাছাই করা কে ফাইনাল মেলায় (ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা) জায়গা পাবে, কার বুদ্ধি সবচেয়ে বেশি।

বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার নিজের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম যখন এই মেলা শুরু হলো, কয়েকবার যাওয়া সুযোগ হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা; এখানে তিনটি শব্দ। এরমধ্যে কারও আকর্ষণ থাকে আন্তর্জাতিকে, কারও বাণিজ্যে এবং কারও কারও মেলায়। আমি আগ্রহী মেলায়।

তিনি আরো বলেন, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। শ্রমিক না, শ্রমিকটা হলো একটা বিপথে চলে যাওয়া। এটা মানুষের পথ না। মানুষের পথ হলো সৃষ্টি করা। নিজের মনের মধ্যে যা আছে তা সৃষ্টি করা। বাণিজ্য মেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগকে ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

বাণিজ্য মেলায় তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি নানা বয়সের মানুষের অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণরা অসংখ্য রকমের কাজ করে, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি নেই। সরকার, বা ব্যবসায়ী মহলের স্বীকৃতি নেই। কিন্তু তারা ছোট ছোট অনেক কাজ করে। এরমধ্যে শুধু ছেলে তরুণ নয়, মেয়েরাও আছে। গৃহিণী, বয়স্ক নারী, চার পাঁচ ছেলে মেয়ের মা ব্যবসা করছেন। ক্যাটারিং ব্যবসা করছেন। কিন্তু স্বীকৃতি নেই। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও তারা সময় বের করে ব্যবসা করছেন।

ড. ইউনূস বলেন, এই মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎসাহ দেওয়া। এই মেলা সারা দেশে চলবে। ভবিষ্যতের মেলা সারা দেশজুড়ে হবে। জায়গায় জায়গায় হবে। জেলায় জেলায় উপজেলায় হবে। সেখান থেকে বাছাই করে এই মেলায় (ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা) জায়গা পাবে। যারা জায়গা পাবে তাদের সব খরচ সরকার বহন করবে।

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সহযোগিতা করলেও মানুষের বুদ্ধিতেই কৃষির জগতে বিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে কৃষি, প্রযুক্তি, হস্তশিল্পে, কুটির শিল্পে সবক্ষেত্রেই বিবর্তন হচ্ছে। উপজেলা পর্যায় থেকেও যদি সেরা উদ্ভাবন আনা যায়, তবেই প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে।

সেইসঙ্গে বয়স্কদের জন্যও আলাদা একটি অংশ থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময় তিনি ‘রিটায়ার্ড’ শব্দ নিয়েও আপত্তি জানিয়ে বলেন, মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সচল। রিটায়ার্ড শব্দটিকেই ডিকশনারি থেকে বাদ দেওয়া উচিৎ। বুদ্ধি শতবর্ষী মানুষের কাছ থেকেও আসতে পারে, আবার পাঁচ বছর বয়সী শিশুর কাছ থেকেও আসতে পারে।

মানুষকে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একবার যদি বুদ্ধিটা খেটে যায় তাহলে সারা দুনিয়ায় কাজে লেগে যাবে। তরুণদের সঙ্গে বিশ্বের যোগাযোগটা করে দেওয়াই মেলার উদ্দেশ্য।

বয়স্ক নাগরিকদের মূল্যায়ন করে প্রধান উপদেষ্টা বরেন, একজন মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত সচল। তাই রিটায়ার্ড বলতে কিছু নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত চিন্তা করতে পারি, বুদ্ধি দিতে পারি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সচল। বয়স্কদের জন্যও মেলায় সুযোগ থাকবে। সেটাই হবে মেলা, যেখানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার সম্মিলন হবে।

প্রধান অতিথি বলেন, টাকা বুদ্ধির পিছে পিছে ঘুরবে। আমাদের মানুষ তার নিজের দেশ নিজেই সৃষ্টি করবে। উদাহরণ সৃষ্টি করবে দুনিয়ার জন্য।

এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও সাতটি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে।

মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘ছত্রিশ চত্বর’। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে রফতানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।

মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

আগামীতে দেশজুড়ে হবে বাণিজ্য মেলা : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৩:৩৫:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আগামীতে দেশজুড়ে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী উপলক্ষে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরে চলবে। আগামীতে জেলায়-জেলায়, উপজেলায়-উপজেলায় বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে। সেখান থেকে নির্ধারণ হবে, বাছাই করা কে ফাইনাল মেলায় (ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা) জায়গা পাবে, কার বুদ্ধি সবচেয়ে বেশি।

বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার নিজের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম যখন এই মেলা শুরু হলো, কয়েকবার যাওয়া সুযোগ হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা; এখানে তিনটি শব্দ। এরমধ্যে কারও আকর্ষণ থাকে আন্তর্জাতিকে, কারও বাণিজ্যে এবং কারও কারও মেলায়। আমি আগ্রহী মেলায়।

তিনি আরো বলেন, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। শ্রমিক না, শ্রমিকটা হলো একটা বিপথে চলে যাওয়া। এটা মানুষের পথ না। মানুষের পথ হলো সৃষ্টি করা। নিজের মনের মধ্যে যা আছে তা সৃষ্টি করা। বাণিজ্য মেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগকে ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

বাণিজ্য মেলায় তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি নানা বয়সের মানুষের অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণরা অসংখ্য রকমের কাজ করে, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি নেই। সরকার, বা ব্যবসায়ী মহলের স্বীকৃতি নেই। কিন্তু তারা ছোট ছোট অনেক কাজ করে। এরমধ্যে শুধু ছেলে তরুণ নয়, মেয়েরাও আছে। গৃহিণী, বয়স্ক নারী, চার পাঁচ ছেলে মেয়ের মা ব্যবসা করছেন। ক্যাটারিং ব্যবসা করছেন। কিন্তু স্বীকৃতি নেই। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও তারা সময় বের করে ব্যবসা করছেন।

ড. ইউনূস বলেন, এই মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎসাহ দেওয়া। এই মেলা সারা দেশে চলবে। ভবিষ্যতের মেলা সারা দেশজুড়ে হবে। জায়গায় জায়গায় হবে। জেলায় জেলায় উপজেলায় হবে। সেখান থেকে বাছাই করে এই মেলায় (ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা) জায়গা পাবে। যারা জায়গা পাবে তাদের সব খরচ সরকার বহন করবে।

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সহযোগিতা করলেও মানুষের বুদ্ধিতেই কৃষির জগতে বিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে কৃষি, প্রযুক্তি, হস্তশিল্পে, কুটির শিল্পে সবক্ষেত্রেই বিবর্তন হচ্ছে। উপজেলা পর্যায় থেকেও যদি সেরা উদ্ভাবন আনা যায়, তবেই প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে।

সেইসঙ্গে বয়স্কদের জন্যও আলাদা একটি অংশ থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময় তিনি ‘রিটায়ার্ড’ শব্দ নিয়েও আপত্তি জানিয়ে বলেন, মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সচল। রিটায়ার্ড শব্দটিকেই ডিকশনারি থেকে বাদ দেওয়া উচিৎ। বুদ্ধি শতবর্ষী মানুষের কাছ থেকেও আসতে পারে, আবার পাঁচ বছর বয়সী শিশুর কাছ থেকেও আসতে পারে।

মানুষকে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একবার যদি বুদ্ধিটা খেটে যায় তাহলে সারা দুনিয়ায় কাজে লেগে যাবে। তরুণদের সঙ্গে বিশ্বের যোগাযোগটা করে দেওয়াই মেলার উদ্দেশ্য।

বয়স্ক নাগরিকদের মূল্যায়ন করে প্রধান উপদেষ্টা বরেন, একজন মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত সচল। তাই রিটায়ার্ড বলতে কিছু নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত চিন্তা করতে পারি, বুদ্ধি দিতে পারি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সচল। বয়স্কদের জন্যও মেলায় সুযোগ থাকবে। সেটাই হবে মেলা, যেখানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার সম্মিলন হবে।

প্রধান অতিথি বলেন, টাকা বুদ্ধির পিছে পিছে ঘুরবে। আমাদের মানুষ তার নিজের দেশ নিজেই সৃষ্টি করবে। উদাহরণ সৃষ্টি করবে দুনিয়ার জন্য।

এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে শতভাগ স্বচ্ছতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও সাতটি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে।

মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও ‘ছত্রিশ চত্বর’। এছাড়া দেশের তরুণ সমাজকে রফতানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধ করতে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।

মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।