Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে চারদিকে হাহাকার। দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশের মানুষ। ধার-দেনায়ও সংসার চালাতে পারছেন না।

রোববার (২১ জানুয়ারি) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সাজানো পাতানো ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী ডামি সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ফেলেছে। জনগণের কথা শোনার কেউ নেই। দেশে চারদিকে হাহাকার-দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধার-দেনায়ও সংসার চালাতে পারছে না।

কাঁচা মরিচ থেকে সোনার বাজারদর আকাশ স্পর্শ করেছে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে একদিকে বাসা বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছে না, অপরদিকে একের পর এক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাসের অভাবে গাজীপুরে অর্ধেক শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার সংবাদটি আজকের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

খাদ্যমন্ত্রীকে চাল মিলের মালিক বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চালের দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫ দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো—কোনও চেষ্টায় কাজ হবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একদিকে অর্ধাহার অনাহার, অপরদিকে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতের যাতনা। অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ফ্যাসিবাদী সরকার উষ্ণতা অনুভব করলেও শীত কাতর, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের প্রতি দখলদার সরকারের ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই। যেহেতু নিপীড়ক শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এ কারণেই তিনি জনগণকে বন্দী, পরাধীন এবং বেঁধে রাখতে চান স্বৈরশৃঙ্খলে।’

সরকারের শপথের পরদিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫৫-৬৫ টাকার নীচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো-কোন চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। ডামি সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক।’

সরকারের টপ টু বটম সিন্ডিকেট করে দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘জনগণ চরম অসহায়। দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ আয় বাড়েনি।’

যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘তারা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। নির্বাচনের আগে গরুর মাংস কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা করা হয়েছিল। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর দিনই এক লাফে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে একদিনেই হাটে-খামারে গরুর দাম বেড়ে গেল? সিন্ডিকেট করে যে সব কিছুর দাম বাড়ানো হয় গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কত রকমারি প্রতারণা জানে এই ডামি সরকার।’

রিজভী বলেন, ‘মানুষ ইলিশ মাছ-গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। এক দেড় বছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা, এখন তা ১৪০-১৪৫ টাকা, ডিমের হালি এখন ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। শীতের ভরা মৌসুমেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকার নীচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তারা বলেছিল আলু খেতে, কিন্ত এখন চালের চেয়েও আলু’র দাম বেশী।’

এই সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট করে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আবারও শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেয়া হয়েছে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই, কিন্তু লুটপাটের টাকা আছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ আওয়ামী নেতাদের কাছে। বিএসইসি’র এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তে আবারও অসংখ্য বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএসইসি’র এই সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস পুনর্বহালের জোর আহবান জানাই।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের জনগণকে উপেক্ষিত রেখে জনপ্রতিনিধিত্বহীন একনায়ক সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশী রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধর্না দিয়ে কাকুতি মিনতি করছেন। ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে। ধর্না দিয়ে অভিনন্দন বার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়।’

তিনি আরও বলেন,‘আমরা আর মামুদের’ ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনও মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, অবৈধ সংসদ বিলুপ্তসহ এক দফা দাবি’তে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকলে জেলা সদরে ও শনিবার সকলে মহানগরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আবহাওয়া

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি তরুণীর পা বিচ্ছিন্ন

আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ : রিজভী

প্রকাশের সময় : ০১:৪১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে চারদিকে হাহাকার। দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন দেশের মানুষ। ধার-দেনায়ও সংসার চালাতে পারছেন না।

রোববার (২১ জানুয়ারি) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, সাজানো পাতানো ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী ডামি সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে বাংলাদেশকে পরাজিত করে ফেলেছে। জনগণের কথা শোনার কেউ নেই। দেশে চারদিকে হাহাকার-দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট কবলিত দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধার-দেনায়ও সংসার চালাতে পারছে না।

কাঁচা মরিচ থেকে সোনার বাজারদর আকাশ স্পর্শ করেছে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে একদিকে বাসা বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলছে না, অপরদিকে একের পর এক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিং সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গ্যাসের অভাবে গাজীপুরে অর্ধেক শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার সংবাদটি আজকের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

খাদ্যমন্ত্রীকে চাল মিলের মালিক বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, চালের দাম সর্বোচ্চ ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫ দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো—কোনও চেষ্টায় কাজ হবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একদিকে অর্ধাহার অনাহার, অপরদিকে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতের যাতনা। অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ফ্যাসিবাদী সরকার উষ্ণতা অনুভব করলেও শীত কাতর, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের প্রতি দখলদার সরকারের ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই। যেহেতু নিপীড়ক শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এ কারণেই তিনি জনগণকে বন্দী, পরাধীন এবং বেঁধে রাখতে চান স্বৈরশৃঙ্খলে।’

সরকারের শপথের পরদিনই চালসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করা অভিসন্ধিপ্রসূত বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও ৫৫-৬৫ টাকার নীচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘যাকে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে তিনি চাল মিলের মালিক। খাদ্যমন্ত্রী চাল সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে দায়সারা তদারকির নামে চুনোপুঁটি ধরতে ব্যস্ত প্রশাসন। রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবতা হলো-কোন চেষ্টায় কাজ হবে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙবে না। ডামি সংসদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। মজুতদার, মিল মালিক, লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী সব সরকারের লোক।’

সরকারের টপ টু বটম সিন্ডিকেট করে দেশ লুটেপুটে খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘জনগণ চরম অসহায়। দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ আয় বাড়েনি।’

যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘তারা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। নির্বাচনের আগে গরুর মাংস কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা করা হয়েছিল। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর দিনই এক লাফে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাহলে একদিনেই হাটে-খামারে গরুর দাম বেড়ে গেল? সিন্ডিকেট করে যে সব কিছুর দাম বাড়ানো হয় গরুর মাংস তার বড় উদাহরণ। ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কত রকমারি প্রতারণা জানে এই ডামি সরকার।’

রিজভী বলেন, ‘মানুষ ইলিশ মাছ-গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। এক দেড় বছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা, এখন তা ১৪০-১৪৫ টাকা, ডিমের হালি এখন ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। শীতের ভরা মৌসুমেও ১০০ থেকে ১৫০ টাকার নীচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তারা বলেছিল আলু খেতে, কিন্ত এখন চালের চেয়েও আলু’র দাম বেশী।’

এই সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ার বাজার লুট করে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আবারও শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। দীর্ঘদিন মার্কেটকে ধরে রাখা ফ্লোর প্রাইস হুট করে তুলে দেয়া হয়েছে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধায় শেয়ার ক্রয়ের জন্য। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নেই, কিন্তু লুটপাটের টাকা আছে শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ আওয়ামী নেতাদের কাছে। বিএসইসি’র এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার হঠকারী সিদ্ধান্তে আবারও অসংখ্য বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএসইসি’র এই সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই এবং অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস পুনর্বহালের জোর আহবান জানাই।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের জনগণকে উপেক্ষিত রেখে জনপ্রতিনিধিত্বহীন একনায়ক সরকার যেকোনো উপায়ে বিদেশী রাষ্ট্রের সমর্থন জোগাড় করতে ব্যস্ত। দেশে দেশে ধর্না দিয়ে কাকুতি মিনতি করছেন। ডামি ভোটের নকল সরকার হীনম্মন্যতায় ভুগছে। ধর্না দিয়ে অভিনন্দন বার্তা আনা দেশের জন্য সম্মানজনক নয়।’

তিনি আরও বলেন,‘আমরা আর মামুদের’ ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় বাকশাল সরকারের বৈধতা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জনগণ এই নির্বাচন, এই অবৈধ সংসদ কখনও মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ডামি সরকারের পতন ঘটাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি, অবৈধ সংসদ বিলুপ্তসহ এক দফা দাবি’তে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকলে জেলা সদরে ও শনিবার সকলে মহানগরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মীর নেওয়াজ আলী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।