নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে লুটেরাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। বর্গিদের মত আচরণ করছে সরকার। এখন পুরনো মামলায় বিএনপি নেতাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। আইনমন্ত্রী তালিকা করে দিচ্ছেন কার কার বিচার আগে হবে। বিশেষ সেল গঠন করতে বলা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণধিকার পরিষদ একাংশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আর কোনো কথা না বলে কালবিলম্ব না করে দলমত নির্বিশেষে যারা দেশকে ভালোবাসেন দেশকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। ঐক্যের প্রতি অটুট থাকতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নির্বাচন আর হবে না। ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) গাবতলীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নাকি অক্টোবরে ঢাকা অচল করে দেবে। ঢাকা অচল করতে এলে নিজেরাই অচল হয়ে যাবে, ঢাকাবাসী তাদের অচল করে দেবে। তারা নাকি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। বেশি লাফালাফি, নাচানাচি করতে এলে রাশিয়ার ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠান্ডা করে দেবো।
সেতুমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন পড়াশোনা জানা মানুষ তাদের মধ্যে তিনি একজন। আমরা তাই জানতাম। কিন্তু তার কী করুণ অবস্থা হয়েছে, সেটা জানতাম না। ইউরেনিয়াম কী জিনিস তাই জানেন না। এটার জন্যতো বিশেষ কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। আসলে দলে নিজের মনিবের প্রতি তোষামোদি করতে গিয়ে, মনিবকে খুশি করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আগ বাড়িয়ে বিনোদনমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
ফখরুল বলেন, আমার এক জুনিয়ার ফ্রেন্ড বাইরে থাকে। ও আমাকে বলেছে যে, এ ধরনের কথা বলেছে, আপনি কিন্তু এর প্রতিবাদ করতে যাবেন না। কথাগুলো কিন্তু আমাদের জন্য বিনোদনের ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য বিনোদন। আমাদের জীবনতো দুর্বিষহ। এটুকু বিনোদন থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। আর এসব কথা শুনে অতি দুঃখেও খুবই হাসি পায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কাজে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের কথা ভূতের মুখে রাম নাম। আজ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এক মুহূর্তের জন্য এ সরকারকে দেখতে চায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষ বেশি কিছু চায় না, শুধু নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। কিন্তু দেশে নির্বাচনেই তো হয় না। আওয়ামী লীগ বলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে। মানুষ সেসব সবই দেখেছে। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সামনে নির্বাচনেও একই কায়দায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানের দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বিএনপি ভুল করে হলেও কিছুটা বিশ্বাস করে সরকারের সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিল। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দর সুন্দর কথা বলেছিলেন। অথচ আওয়ামী লীগ কথা রাখেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সামনে নির্বাচন, একই কায়দায় আবারও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানের দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজ দেশের সব সূচক নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। রিজার্ভের পরিমাণ এত কমেছে কয়েক মাস পর আমদানি করার টাকা থাকবে না। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চারগুণ বেশি খরচ করেছে শুধু কমিশন খাওয়ার জন্য, দুর্নীতির জন্য। পদ্মাসেতু দিয়ে রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে ভালো কথা, কিন্তু কত টাকা বেশি খরচ করেছে খোঁজ নেন।
ডান-বাম উত্তর-দক্ষিণ বুঝি না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে দেশরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এবার মানুষ জেগে উঠেছে।
রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে আমাদের ঐক্যের ক্ষতি হয়। অনেকের মধ্যে আমরা এই প্রবণতাটা দেখেছি, অনেক সময় মনগড়া কথা সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন। এটা করবেন না। এটা যারা করেন তারা আন্দোলনের জন্য কোনো কাজ করছেন না। আন্দোলনের পেছনে ছুরি মারছেন।
বিগত নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যখন সামনে আসছে তখন একই কায়দায় আজকে আবার বলতে শুরু করেছেন যে, আমার অধীনে নির্বাচন হবে। ওটাই সংবিধান। সংবিধানেতো কাটা-ছেঁড়া করে কিছুই রাখেননি। আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এটাকে তারা যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ভোগ করবে। দেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে।
এসময় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকারের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব) মিয়া মশিউজ্জামান, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, আবদুল মালেক ফরাজি, যুগ্ম সদস্য সচিব আতাউল্লাহ, তারেক রহমান, সহকারী সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদ ইসমাইল বন্ধন, ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম, জাহাঙ্গীর আলম, যুব নেতা ইমরান আল নাজির, ছাত্র নেতা সোহেল মৃধা প্রমুখ।