Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়: প্রধানমন্ত্রী

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের প্রতিটি জেলার উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমার হারানোর কিছু নেই। জনগণকে একটি সুন্দর জীবন দেওয়া আমার লক্ষ্য।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরে তারাগঞ্জ ওয়াক্ফ স্টেট সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। এ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। আমিও আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের সেবা করে যাব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কার সরকারের আমলে মানুষের শান্তি থাকে, ঘরে খাবার থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষার আলো পায়, চিকিৎসা পায়, সুন্দর জীবন পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালেও এই মাঠে এসেছিলাম। নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলে, তারাগঞ্জ বদরগঞ্জ, উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দুর্ভীক্ষ নেই। শেখ মুজিব আমার বাবা, দেশ দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে। আমরা উত্তরবঙ্গসহ গোটা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছি। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। বিজয়ের মাসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

আপনাদের সেবা করার আর একটিবার সুযোগ চাই, রংপুরে প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, নৌকা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের খাবার ছিল না, চিকিৎসা ছিল না, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছি। মানুষ যাতে দুই বেলা খেতে পারে, এজন্য খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। ভুর্তকি দিয়ে চাল, ডাল, চিনি দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে যখন প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করা হয়, তখন বিনা জামানতে বির্গাচাষীদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। মাত্র ১০ টাকায় কৃষক যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে সার-বীজ ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষির জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। কৃষি উন্নয়নে সব ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এখন আর কাঠের লাঙল নয়, মেশিনে ধান লাগানো ও কাটা হচ্ছে। সেটার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

এ সময় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, ২০১৩-১৪ সালে কীভাবে আগুনসন্ত্রাস করেছে বিএনপি-জামায়াত। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। তাই আপনারা এবার নৌকায় ভোট দিন। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেজন্যই আমরা আপনাদের ভোট চাই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। ওই দিন সকাল সকাল সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আর নৌকা নূহ নবীর নৌকা মার্কা। সেই মহাপ্লাবনের সময় মানুষকে বাঁচিয়েছিল। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উত্তরবঙ্গ মঙ্গা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন আর মঙ্গা পিরীত নেই। মঙ্গা থেকে মুক্তি পেয়ে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। এই নৌকা মার্কায় আপনাদের জীবন-মান উন্নত করেছে। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার আরও একবার সুযোগ দেবেন। যাতে আপনাদের জীবন সমৃদ্ধ করতে পারি।

নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারে আছি বলেই রংপুরের উন্নয়ন ঘটছে। সার, কীটনাশক, বীজ কিনতে যাতে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেজন্য ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা ও শিক্ষার উন্নয়ন ঘটেছে। উপবৃত্তি থেকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে এই সরকার। সেই সাথে প্রযুক্তি খাতেও উন্নতি ঘটানো হয়েছে।

বাংলাদেশের কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না; গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশ পরিচালনায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষতার মাপকাঠি বোঝাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নয় থেকে তেইশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের উন্নতি করেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১ এ আসতে পারিনি। যারা এসেছিল আবার এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।

তিনি বলেন, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আমরা জয় লাভ করেছি। ৯ (২০০৯) থেকে ২৩ (২০২৩) বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

ছবি: ফোকাস বাংলা

জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গ মানুষের খাবার নেই, হাহাকার, পরনে ছিন্ন কাপড়, রোগের চিকিৎসা নেই। আজকে আর সেই চিত্র নেই। নৌকা মার্কা সরকারে এলে মানুষের শান্তি থাকে, ঘরে খাবার থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষার আলো পান, চিকিৎসা পান, সুন্দর জীবন পান।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইল ফোন যাতে সবার হাতে পৌঁছায়, সেটা উন্মুক্ত করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। আমরা বিনা পয়সায় বই দেই। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে থাকি। গবেষণার জন্য টাকা দেই। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা, প্রযুক্তির শিক্ষা দেওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাবা-মাকে আর টাকা খরচ করে বই কিনতে হয় না। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সব জায়গা করে দিচ্ছি, ৫৬২টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করছি। মন্দির, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মের উন্নয়নে কাজ করছি। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে যেন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক তারা স্মার্ট দক্ষ জনশক্তি হবে, আমরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করব। ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। সে কারণে আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই।

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত করার জন্য সরকারের প্রত্যয় রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

রংপুর-৫ আসনের ভোটারদের আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রাশেক আমাদের প্রার্থী। এতদিন তার বাবা ছিল। এবার তাকে দেওয়া হয়েছে। তারুণ্যই সম্পদ। আপনারা তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আওয়ামী লীগকে জয়ী করে আপনাদের আবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।

লক্ষ্য একটাই, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো : শেখ হাসিনা 

সবশেষে রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের হাত ধরে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই যে আমার প্রার্থী। আপনাদের ছোট ভাই আপনাদের কাছে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি আমার ছেলে জয়ের বয়সী। তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।

বেলা ১১টা ৫২ মিনিটের তারাগঞ্জ ওয়াক্ফ এস্টেট সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।

মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের পথসভায় যোগ দিয়ে তারাগঞ্জে আসেন শেখ হাসিনা। এ সময় রংপুরবাসীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।

তারাগঞ্জে জনসভায় বক্তব্য শেষে তিনি মিঠাপুকুরের জায়গীরহাটে পথসভায় বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর তিনি পীরগঞ্জ উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি জয় সদনে যাবেন। সেখানে তার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন। মধ্যাহ্নভোজনের পর তিনি পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেবেন।

আবহাওয়া

২৪ ঘণ্টায় আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:২০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের প্রতিটি জেলার উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমার হারানোর কিছু নেই। জনগণকে একটি সুন্দর জীবন দেওয়া আমার লক্ষ্য।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুরে তারাগঞ্জ ওয়াক্ফ স্টেট সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। এ বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। আমিও আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের সেবা করে যাব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কার সরকারের আমলে মানুষের শান্তি থাকে, ঘরে খাবার থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষার আলো পায়, চিকিৎসা পায়, সুন্দর জীবন পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালেও এই মাঠে এসেছিলাম। নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলে, তারাগঞ্জ বদরগঞ্জ, উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দুর্ভীক্ষ নেই। শেখ মুজিব আমার বাবা, দেশ দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে। আমরা উত্তরবঙ্গসহ গোটা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছি। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। বিজয়ের মাসে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

আপনাদের সেবা করার আর একটিবার সুযোগ চাই, রংপুরে প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, নৌকা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের খাবার ছিল না, চিকিৎসা ছিল না, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছি। মানুষ যাতে দুই বেলা খেতে পারে, এজন্য খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। ভুর্তকি দিয়ে চাল, ডাল, চিনি দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে যখন প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করা হয়, তখন বিনা জামানতে বির্গাচাষীদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। মাত্র ১০ টাকায় কৃষক যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে সার-বীজ ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষির জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। কৃষি উন্নয়নে সব ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এখন আর কাঠের লাঙল নয়, মেশিনে ধান লাগানো ও কাটা হচ্ছে। সেটার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

এ সময় বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, ২০১৩-১৪ সালে কীভাবে আগুনসন্ত্রাস করেছে বিএনপি-জামায়াত। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। তাই আপনারা এবার নৌকায় ভোট দিন। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেজন্যই আমরা আপনাদের ভোট চাই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। ওই দিন সকাল সকাল সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আর নৌকা নূহ নবীর নৌকা মার্কা। সেই মহাপ্লাবনের সময় মানুষকে বাঁচিয়েছিল। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উত্তরবঙ্গ মঙ্গা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন আর মঙ্গা পিরীত নেই। মঙ্গা থেকে মুক্তি পেয়ে এখন উন্নয়নের সুবাতাস বইছে। এই নৌকা মার্কায় আপনাদের জীবন-মান উন্নত করেছে। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার আরও একবার সুযোগ দেবেন। যাতে আপনাদের জীবন সমৃদ্ধ করতে পারি।

নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারে আছি বলেই রংপুরের উন্নয়ন ঘটছে। সার, কীটনাশক, বীজ কিনতে যাতে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেজন্য ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা ও শিক্ষার উন্নয়ন ঘটেছে। উপবৃত্তি থেকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে এই সরকার। সেই সাথে প্রযুক্তি খাতেও উন্নতি ঘটানো হয়েছে।

বাংলাদেশের কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না; গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশ পরিচালনায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষতার মাপকাঠি বোঝাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নয় থেকে তেইশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের উন্নতি করেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১ এ আসতে পারিনি। যারা এসেছিল আবার এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।

তিনি বলেন, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আমরা জয় লাভ করেছি। ৯ (২০০৯) থেকে ২৩ (২০২৩) বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, প্রযুক্তির বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

ছবি: ফোকাস বাংলা

জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন। এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গ মানুষের খাবার নেই, হাহাকার, পরনে ছিন্ন কাপড়, রোগের চিকিৎসা নেই। আজকে আর সেই চিত্র নেই। নৌকা মার্কা সরকারে এলে মানুষের শান্তি থাকে, ঘরে খাবার থাকে, জীবনের নিরাপত্তা থাকে, শিক্ষার আলো পান, চিকিৎসা পান, সুন্দর জীবন পান।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইল ফোন যাতে সবার হাতে পৌঁছায়, সেটা উন্মুক্ত করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। আমরা বিনা পয়সায় বই দেই। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে থাকি। গবেষণার জন্য টাকা দেই। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা, প্রযুক্তির শিক্ষা দেওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাবা-মাকে আর টাকা খরচ করে বই কিনতে হয় না। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সব জায়গা করে দিচ্ছি, ৫৬২টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করছি। মন্দির, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মের উন্নয়নে কাজ করছি। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে যেন স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে পারি। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক তারা স্মার্ট দক্ষ জনশক্তি হবে, আমরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করব। ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। সে কারণে আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই।

বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত করার জন্য সরকারের প্রত্যয় রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

রংপুর-৫ আসনের ভোটারদের আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রাশেক আমাদের প্রার্থী। এতদিন তার বাবা ছিল। এবার তাকে দেওয়া হয়েছে। তারুণ্যই সম্পদ। আপনারা তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আওয়ামী লীগকে জয়ী করে আপনাদের আবার সেবা করার সুযোগ দেবেন।

লক্ষ্য একটাই, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো : শেখ হাসিনা 

সবশেষে রংপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের হাত ধরে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই যে আমার প্রার্থী। আপনাদের ছোট ভাই আপনাদের কাছে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি আমার ছেলে জয়ের বয়সী। তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।

বেলা ১১টা ৫২ মিনিটের তারাগঞ্জ ওয়াক্ফ এস্টেট সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।

মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের পথসভায় যোগ দিয়ে তারাগঞ্জে আসেন শেখ হাসিনা। এ সময় রংপুরবাসীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।

তারাগঞ্জে জনসভায় বক্তব্য শেষে তিনি মিঠাপুকুরের জায়গীরহাটে পথসভায় বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর তিনি পীরগঞ্জ উপজেলায় শ্বশুরবাড়ি জয় সদনে যাবেন। সেখানে তার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন। মধ্যাহ্নভোজনের পর তিনি পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেবেন।