নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাদের হারাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। এ দুটি বিষয় বাঙালি কখনোই ভুলবে না। তারা অমর থাকবেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে এক সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে রুট নিয়ে কত সমস্যা! সেখানে শেখ হাসিনা এ সমস্যারও সমাধান করে দিয়েছেন। এই উড়াল সড়ক, মেট্রোরেলের রুট, সবই তার দেখানো ডিজাইনে করা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে কত লোক। লোকে লোকারণ্য। পথে পথে মানুষ আর মানুষ। কত যে মানুষ। এটা হয়ে গেছে মহাসমুদ্র। জনতার মহাসমুদ্রের গর্জনধ্বনি শুনতে পাচ্ছি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে দলীয় শপথ ও প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবো, এটাই আমাদের শপথ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘চোর ও লুটেরা’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই চোরকে বাংলাদেশের মানুষ মানে? না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো শেখ হাসিনা। তোমাদের (বিএনপির) প্রধানমন্ত্রী কে? বাংলার মানুষ তো চোরা তারেককে মানেনি, মানবেও না। এদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, এক কাপুরুষ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কি পালিয়ে যায় নাই? তারেক রহমান কি বলে পালিয়েছিল? মুচলেকা দিয়ে, আর রাজনীতি করবে না। অর্থপাচারের জন্য দণ্ড নিয়ে লন্ডন শহরে আছে। সে নাকি বাংলাদেশের বীর নেতা, আন্দোলনের নেতা। এই চোরকে, এই লুটপাটকারীকে বাংলাদেশের মানুষ মানে?’
এরপর সমাবেশস্থল থেকে উচ্চস্বরে নেতাকর্মীরা বলেন, ‘মানে না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খেলা হবে। সামনে লড়াই, ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা। জিততে হবে। জিততে পারবেন। কারণ, ওদের হাতে শোকের পতাকা। আমাদের হাতে শেখ হাসিনার বিজয়ের পতাকা। আমরা বিজয়ের সোনালি বন্দরে পৌঁছে যাবো।
বিরোধীদের প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিষেধাজ্ঞা আর ভিসানীতির কথা বলে। সিয়েরা লিওনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিয়েও বিএনপিতে উল্লাস। আমি বলি- সিয়েরা লিওন যা করলো, সেটা তো তোমরাই করেছ। মাগুরা মার্কা নির্বাচন, এক কোটি ভুয়া ভোটার তালিকা তোমরাই করেছ।
বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের ওপর কেন ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞা আসবে না? আমরা তো অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এখানে বিদেশি বন্ধুরা আছে, আমরা কথা দিতে চাই- অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা করবো। এটাই আমাদের শপথ। আমাদের সিয়েরা লিওনের কথা বলে লাভ নেই।
তিনি বলেন, তাদের (বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) দাবি একটাই, শেখ হাসিনাকে হঠাতে হবে। কোন দুঃখে? কেন পদত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা? কোনো দেশের নির্বাচনী নীতিতে এটা আছে?
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বড় বড় কথা বলে। এলিভেটেড, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল আরও কত কি। মেট্রো যাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল। বেশি দূরে নয়। হায়রে জ্বালা, অন্তর জ্বালাৃ অন্তর জ্বালা বাড়ে। তোমরা কি দিলা? দেশ শাসন করলা, হাওয়া ভবনের লুটপাট, পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন (দুর্নীতিতে), সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দোসর। তোমরা কি দিয়েছ? ঘোড়ার ডিম, ঘোড়ার ডিম। শত সেতু শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। অপেক্ষা করুন, কয়েকদিন পরেই আসছে আরও ১৫০ সেতু। ডেট দিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। ১৫০ সেতু একদিনেই উদ্বোধন হবে। বিএনপি নেতারা কোথায় আছ? ঘরে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখ? আন্দোলন তো নাই। মাঝে মাঝে আন্দোলনে গ্যাপ দেয়। তখন ঘরে বসে বসে আনন্দে এয়ার কন্ডিশন রুমে হিন্দি সিরিয়াল দেখে আর বাইরে পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করে। এ হচ্ছে কাপুরুষ নেতা।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ কত লোক! লোকে লোকারণ্য। পথে পথে মানুষ আর মানুষ। কত যে মানুষ! বাইরে কয়েকটা সমুদ্র। এখানে হয়ে গেছে মহাসমুদ্র। জনতার মহাসমুদ্র থেকে আমি গর্জন শুনতে পাই। গতকাল ছাত্রলীগের সমাবেশ দেখে ওদের (বিএনপি) ঘুম নেই। আজকের এ ছবি দেখলে মূর্ছা যাবে। এই মহাসমুদ্রের ছবি দেখলে ওরা হারিয়েও যেতে পারে।
আগামী ডিসেম্বরে ‘ফাইনাল খেলা’ হবে জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেই খেলা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা মাঠের খেলা নয়, রাজনীতির খেলা।
সুধী সমাবেশে আরও উপস্থিত আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ।
এর আগে আজ শনিবার বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।