নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখা মানে শিয়ালের কাছে মুরগি দেয়া- এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবার আশার সঞ্চার হয়েছে, আমরা জয়ী হবোই।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের কনভেনশনে’ তিনি এসব কথা বলেন।
সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের এ ছাত্র কনভেনশন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রতি আস্থা রাখতে। কিন্তু আমি বলবো, তাদের প্রতি আস্থা রাখা মানে হচ্ছে শিয়ালের কাছে মুরগি দেয়া। অনেক হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ।
আ. লীগ সবসময় একটি প্রতারক দল এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, মান্না সাহেব আগে বলতেন ফোর টোয়েন্টি দল। অর্থ্যাৎ, তারা মুখে বলবে একটি, কাজ করবে আরেকটি। গতকাল মার্কিন প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ বলেছে, এখানে নাকি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তারাই এনেছে। গত দুই নির্বাচন তারা নাকি সুষ্ঠুভাবেই করেছে। অথচ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন নির্বাচিত হয়েছিল, ২০১৮-তে আগের রাতে ভোট করেছে। এখন তারা বলছে আমার ওপর আস্থা রাখেন। আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব।
একটি উপকথার উদাহরণ দিয়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তুমি যতই ঘুরো, ঘুরে কোনো লাভ নেই। তোমার চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এদের (সরকার) ওপর দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা চায় দেশের মানুষ।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু, টানেল, উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন। এতকিছু বানিয়েছেন, তবুও ভোট দিতে কেন এত ভয়। ভোট তো জনগণ আপনাকেই দিবে। এতই যদি জনপ্রিয় হোন, দেন না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তা করবেন না। কারণ আপনি জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনার অস্তিত্ব থাকবে না।
সরকারকে দ্রুত একটি নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন দিলে ল্যাঠা চুকে যাবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না। আমাদের পবিত্র দায়িত্ব, মানুষকে এ ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নিঃসন্দেহে এ দানবের, ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা যুদ্ধে নেমেছি, সেই যুদ্ধের কারণ একটি ভয়াবহ দানবীয় শক্তি দেশের ক্ষমতা জোর করে ক্ষমতায় থাকা অর্থাৎ বিচারকের ভাষায়- ‘জাহানামের আগুন’ বানিয়েছে, তাদেরকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে দেয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি।
শুধু ভোটচোর বলেলে হবে না। শেখ হাসিনা নিপাত যাক, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক বলতে হবে। এ ব্যবস্থা ভেঙে যাক।
রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সব কিছু দখল করে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেশে এখন দুই শ্রেণি। একশ্রেণি পাহাড় বানিয়েছে বিত্তের, টাকা-পয়সা সম্পদের। তাদের ছেলেমেয়েরা কেউ এ দেশে পড়ে না, তারা টাকা সব বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আর আমাদের ছেলেমেয়েরা এ দেশে পড়াশোনা করে চাকরি পায় না। অথচ এ সরকার কথা দিয়েছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে।
রিজার্ভ নেমে যাচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কয়েকদিন পর আমদানির টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, ৪২ ভাগ অর্ডার কমে গেছে, কাজ করতে পারছে না। বেতন পাচ্ছে না। বাজারে গেলে তারা চাল-ডাল নিত্যপণ্য কিনতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম কিনে দিতে পারছে না। আর তারা অনেক আনন্দে আছেন। মানুষ বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের চুরি, দুর্নীতি, নির্যাতন, যন্ত্রণা, রাষ্ট্রকে সব কিছু থেকে ধ্বংস করে দেওয়া- এসব থেকে মানুষ বাঁচতে চায়।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। আমার মাকে (বিএনপি চেয়ারপারসন) তারা অসহায় অবস্থায় বন্দি করে রেখেছে, চিকিৎসা করাতে দিচ্ছে না। আমার ভাইকে মেরে আহত করছে। আমার ৬৪৮ জন ভাইকে তারা গুম করেছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে তারা জুডিশিয়াল কিলিং করে হত্যা করেছে। এক বছরে ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আমাদেরকে বিদ্রোহ করতে হবে। তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র কনভেনশন আজ আমাদেরকে আশা জাগিয়েছে। এ দেশে যা কিছু অর্জন সব তার এই ছাত্ররা করেছে।
সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে পুলিশি নির্যাতনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই, এ লজ্জা আমাদের সকলের। বিশেষ করে এ লজ্জা তোমাদের (বর্তমান ছাত্রনেতারা)।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এ্যানীকে যেভাবে মেরেছে আগামীকাল আপনাদের সঙ্গেও এসব হতে হবে। তরুণদের ক্ষোভটা মোবাইল সেটে। একটি স্ট্যাটাস দিলেই শেষ। ক্ষোভটা মোবাইল সেটে দিলে হবে না, রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে, রুখে দাড়াতে হবে। জেগে উঠতে হবে। রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন করে এ সরকারকে নামাতে হবে।
ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে একপ্রকার হতাশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মুখে কুলুপ এটে বসে থাকবেন না, জেগে উঠতে হবে। হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। নিজে বাঁচতে দেশ বাঁচাতে বাবা মা বন্ধুদের বাঁচাতে জেগে উঠতে হবে। অন্যথায় তারা (আ. লীগ) মাথায় উঠে বসেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অনেক আশাবাদী। এ দেশে যা কিছু কল্যাণকর ঘটেছে, যা কিছু মহৎ ঘটেছে, যা কিছু বদলে দিয়েছে তার সবই ছাত্র ও যুবকদের দ্বারা। আর সেজন্যই আমার অত্যন্ত আশার দিন। আমরা একটি বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটি হচ্ছে একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে, স্বপ্নগুলো ভেঙে খানখান করে, আপনজনদের দূরে সরে নিয়ে, আজ গুম করেছে। ১ বছরের মধ্যে ২২ জন ছাত্রনেতা, যুবনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক নেতাকর্মীদের রাস্তায় গুলি করে মেরেছে। কোথায় বিদ্রোহ, সেই বিদ্রোহ আনতে হবে।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাংবাদিক নেতা আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।
ছাত্র কনভেনশন উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজজামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, বর্তমান সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহ মো: আদনান প্রমুখ।