Dhaka শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর লোকদেখানো-প্রতারণা : নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায় নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনি ভিত্তি না থাকলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর কেবল লোকদেখানো ও জুলাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা। ঐক্যমত কমিশন আলোচনায় ডাকলে তাতে সাড়া দেবে এনসিপি। নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) এর সঙ্গে জুলাই সনদের কোনো সম্পর্ক নেই।

শনিবর (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের স্বাক্ষর কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়ার কোনো প্রতিফলন গতকালের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঘটেনি বলে আমরা মনে করছি। এরপরও আইনি ভিত্তি না থাকলে এটা জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা হবে।

তিনি বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে তাদের নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, এটা আনুষ্ঠানিকতার জন্য তারা করেছে। তবে এটাকে এখন আইনি ভিত্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সুবিধাভোগীরা আগের কাঠামো ধরে রাখতে ষড়যন্ত্র করেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল সমঝোতা করেছে তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি সেটা করেনি। জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে এনসিপি রাজনীতি থেকে ছিটকে যায়নি। যারা গতকালের অনুষ্ঠানে গেছে তারা গণ-অভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।

এনসিপি এই আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছে তারা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গতকালকের ঘটনায় যে জুলাই যোদ্ধারা আহত হয়েছেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী আখ্যা দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হয়তো তিনি ভুলবশত, তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকমটা বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না, যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে, কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, আতিকুল গাজী যার হাত কাটা গেছে, তাকে যখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, যখন শহীদ মীর মুগ্ধের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, শহীদ ইয়ামিনের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, তাদের যেকোনো দাবির জন্যই দাবির প্রেক্ষিতে সেটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের, খুবই বেদনাদায়ক। আমাদের আহ্বান থাকবে তিনি তার এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করবেন এবং আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারদের কাছে ক্ষমা চাইবেন।

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্পটা শোনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে বসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্পটা শুনবেন, ইতিহাসটা শুনবেন। কারা লড়াই করেছিল, কিভাবে লড়াই করেছিল, কিভাবে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং আজকে আমরা এখানে কথা বলতে পারছি।

তিনি বলেন, এই ৭২-এর সংবিধান যাতে পরিবর্তন না হয় পুরানো ফ্যাসিস্ট কাঠামো যাতে থেকে যায়, তার জন্য নানা অপচেষ্টা দেশের ভেতর এবং বাইরে থেকে করা হচ্ছে। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সুবিধাভোগী আছে নানা জায়গায়। ফলে তাদের জায়গা থেকে চাপ অবশ্যই আছে এবং আমরা মনে করি কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আপোষ করেছে। সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো টিকিয়ে রাখতে, অক্ষুণ্ন রাখতে চেষ্টা করেছে নানাভাবে। কিন্তু এনসিপি ও আরও কিছু রাজনৈতিক দল অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই কিন্তু এই সরকার কমিশন গঠন, ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং জুলাই সনদ নিয়ে এতদূর এসেছে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ৯০-এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে দেখতে চাই না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের এই উপলব্ধি ছিল যে আমাদের এই লড়াই শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয় একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হবে না বরং এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। দ্বিতীয়ত ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে প্রতারণা করা হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেভাবে জাতীয় নেতারা এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে পকেটবন্দি করেছিল আমরা এবার সেটা হতে দেবো না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, সরকার এটাকে আইনি ভিত্তি দেয়নি, অনেক রাজনৈতিক দল এগুলো নিয়ে বলেছে, অনেকে বলে নাই, তারা সই করেছে এটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এখন আমরা বলছি এখন এটার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এটি অর্থবহ হবে। এছাড়া এর কোনও অর্থ থাকবে না। ফলে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি আমাদের এই আহ্বান থাকবে। গতকাল সেখানে জুলাইযোদ্ধা, শহিদ পরিবারদের কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনও প্রতিফলন গতকালকের অনুষ্ঠানে হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি তৈরি করবে এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এবং গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, কেউ ছবিতে আসলো কী আসলো না সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা দায়িত্ব প্রফেসর ইউনূসকে দিয়েছিলাম এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম ছাত্র-জনতা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। একটা নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিন, সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করুন। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দিন। তারা আমাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আমাদের সরকারে প্রবেশ করতে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হয়েছে। ফলে যেই নতুন বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি সেই বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া আসলেই সম্ভব—সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। সেখানে যেকোনও রাজনৈতিক দল, সরকার যদি এগিয়ে আসে আমরা তাদের সমর্থন জানাবো, আমরা তাদের সঙ্গে থাকবো। কিন্তু কেউই যদি না থাকে আমরা এককভাবে আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, গতকাল বেশিরভাগ দল সই অনুষ্ঠানে গেল। তারা সরকারের আমন্ত্রণে গেছেন। কিন্তু পুরো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা জুড়ে সংস্কারের সঙ্গে অনেকগুলো দল আমাদের সঙ্গে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছে। আইনি ভিত্তির কথা কিন্তু গতকাল সইয়ের পরেও বলেছেন। ফলে আমরা মনে করি আমাদের ঐক্যটা আছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সাংবিধানিক এখতিয়ার বৈধতা বর্তমান রাষ্ট্রপতির নেয়। সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হলে তার বৈধতা নিতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে—যেখানে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটেছিল। ফলে জুলাই গণভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি ধারণ করতে পারেন না। তার কাছ থেকে এই আদেশ জারি হলে রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সাহেব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনও প্রতীক নন। বরং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার আহ্বানে সেই সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ছাত্র-জনতার অভিপ্রায় সবকিছু তার কাছে অর্পণ করা হয়েছে। ফলে আমরা বলছি সাংবিধানিক আদেশ যেহেতু বিদ্যমান সংবিধানের ভেতর থেকে দিতে পারবেন না, ফলে তার বাইরে থেকেই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বৈধতার একমাত্র উৎস হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং সেটা একমাত্র জারি করতে পারবেন সরকার প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে তার ওপর দাঁড়িয়ে সনদ আইনি ভিত্তি পাবে।

প্রতীক ইস্যুতে নাহিদ ইসলাম বলেন, শাপলাই হবে এনসিপির মার্কা, এই মার্কা নিয়েই তার দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নজর রাখছে এনসিপি। এমনকি জনপ্রশাসন নিয়েও সন্দেহের কথা।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, এতে কোনো সন্দেহ নেই : ইসি আনোয়ারুল

আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর লোকদেখানো-প্রতারণা : নাহিদ ইসলাম

প্রকাশের সময় : ০২:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায় নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনি ভিত্তি না থাকলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর কেবল লোকদেখানো ও জুলাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা। ঐক্যমত কমিশন আলোচনায় ডাকলে তাতে সাড়া দেবে এনসিপি। নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) এর সঙ্গে জুলাই সনদের কোনো সম্পর্ক নেই।

শনিবর (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের স্বাক্ষর কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়ার কোনো প্রতিফলন গতকালের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঘটেনি বলে আমরা মনে করছি। এরপরও আইনি ভিত্তি না থাকলে এটা জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা হবে।

তিনি বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে তাদের নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, এটা আনুষ্ঠানিকতার জন্য তারা করেছে। তবে এটাকে এখন আইনি ভিত্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সুবিধাভোগীরা আগের কাঠামো ধরে রাখতে ষড়যন্ত্র করেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল সমঝোতা করেছে তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি সেটা করেনি। জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে এনসিপি রাজনীতি থেকে ছিটকে যায়নি। যারা গতকালের অনুষ্ঠানে গেছে তারা গণ-অভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।

এনসিপি এই আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছে তারা গণঅভ্যুত্থান ও জনগণ থেকে ছিটকে গেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গতকালকের ঘটনায় যে জুলাই যোদ্ধারা আহত হয়েছেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারী আখ্যা দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হয়তো তিনি ভুলবশত, তথ্য না থাকার কারণে তিনি এ রকমটা বলেছেন। যেহেতু তিনি দীর্ঘদিন দেশে ছিলেন না, যেহেতু তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশে ছিলেন না, রাজপথে ছিলেন না, সেহেতু হয়তো তিনি জানেন না যে, কে রাজপথে ছিল, কারা লড়াই করেছিল, কারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, আতিকুল গাজী যার হাত কাটা গেছে, তাকে যখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, যখন শহীদ মীর মুগ্ধের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, শহীদ ইয়ামিনের বাবাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়, তাদের যেকোনো দাবির জন্যই দাবির প্রেক্ষিতে সেটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের, খুবই বেদনাদায়ক। আমাদের আহ্বান থাকবে তিনি তার এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করবেন এবং আহত যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারদের কাছে ক্ষমা চাইবেন।

বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্পটা শোনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে বসে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্পটা শুনবেন, ইতিহাসটা শুনবেন। কারা লড়াই করেছিল, কিভাবে লড়াই করেছিল, কিভাবে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং আজকে আমরা এখানে কথা বলতে পারছি।

তিনি বলেন, এই ৭২-এর সংবিধান যাতে পরিবর্তন না হয় পুরানো ফ্যাসিস্ট কাঠামো যাতে থেকে যায়, তার জন্য নানা অপচেষ্টা দেশের ভেতর এবং বাইরে থেকে করা হচ্ছে। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট কাঠামোর সুবিধাভোগী আছে নানা জায়গায়। ফলে তাদের জায়গা থেকে চাপ অবশ্যই আছে এবং আমরা মনে করি কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আপোষ করেছে। সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো টিকিয়ে রাখতে, অক্ষুণ্ন রাখতে চেষ্টা করেছে নানাভাবে। কিন্তু এনসিপি ও আরও কিছু রাজনৈতিক দল অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার চাপেই কিন্তু এই সরকার কমিশন গঠন, ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং জুলাই সনদ নিয়ে এতদূর এসেছে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ৯০-এর পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে দেখতে চাই না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের এই উপলব্ধি ছিল যে আমাদের এই লড়াই শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয় একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হবে না বরং এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। দ্বিতীয়ত ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে প্রতারণা করা হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে যেভাবে জাতীয় নেতারা এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে পকেটবন্দি করেছিল আমরা এবার সেটা হতে দেবো না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, সরকার এটাকে আইনি ভিত্তি দেয়নি, অনেক রাজনৈতিক দল এগুলো নিয়ে বলেছে, অনেকে বলে নাই, তারা সই করেছে এটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এখন আমরা বলছি এখন এটার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এটি অর্থবহ হবে। এছাড়া এর কোনও অর্থ থাকবে না। ফলে সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি আমাদের এই আহ্বান থাকবে। গতকাল সেখানে জুলাইযোদ্ধা, শহিদ পরিবারদের কীভাবে অবমাননা করা হয়েছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনও প্রতিফলন গতকালকের অনুষ্ঠানে হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি তৈরি করবে এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এবং গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, কেউ ছবিতে আসলো কী আসলো না সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা দায়িত্ব প্রফেসর ইউনূসকে দিয়েছিলাম এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম ছাত্র-জনতা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। একটা নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিন, সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করুন। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দিন। তারা আমাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আমাদের সরকারে প্রবেশ করতে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে হয়েছে। ফলে যেই নতুন বাংলাদেশের কথা আমরা বলছি সেই বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া আসলেই সম্ভব—সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। সেখানে যেকোনও রাজনৈতিক দল, সরকার যদি এগিয়ে আসে আমরা তাদের সমর্থন জানাবো, আমরা তাদের সঙ্গে থাকবো। কিন্তু কেউই যদি না থাকে আমরা এককভাবে আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, গতকাল বেশিরভাগ দল সই অনুষ্ঠানে গেল। তারা সরকারের আমন্ত্রণে গেছেন। কিন্তু পুরো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা জুড়ে সংস্কারের সঙ্গে অনেকগুলো দল আমাদের সঙ্গে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছে। আইনি ভিত্তির কথা কিন্তু গতকাল সইয়ের পরেও বলেছেন। ফলে আমরা মনে করি আমাদের ঐক্যটা আছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সাংবিধানিক এখতিয়ার বৈধতা বর্তমান রাষ্ট্রপতির নেয়। সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হলে তার বৈধতা নিতে হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে—যেখানে জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটেছিল। ফলে জুলাই গণভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি ধারণ করতে পারেন না। তার কাছ থেকে এই আদেশ জারি হলে রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সাহেব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কোনও প্রতীক নন। বরং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার আহ্বানে সেই সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ছাত্র-জনতার অভিপ্রায় সবকিছু তার কাছে অর্পণ করা হয়েছে। ফলে আমরা বলছি সাংবিধানিক আদেশ যেহেতু বিদ্যমান সংবিধানের ভেতর থেকে দিতে পারবেন না, ফলে তার বাইরে থেকেই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বৈধতার একমাত্র উৎস হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং সেটা একমাত্র জারি করতে পারবেন সরকার প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে তার ওপর দাঁড়িয়ে সনদ আইনি ভিত্তি পাবে।

প্রতীক ইস্যুতে নাহিদ ইসলাম বলেন, শাপলাই হবে এনসিপির মার্কা, এই মার্কা নিয়েই তার দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নজর রাখছে এনসিপি। এমনকি জনপ্রশাসন নিয়েও সন্দেহের কথা।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।