Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার : উপ-প্রেস সচিব

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যখনই কোনো ঘটনা ঘটছে তখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আর কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

উপ প্রেস সচিব বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মিটফোর্ডে খুনের ঘটনায় দ্রুত সময়ে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। নির্দেশনা দিয়েছেন, ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উন্নতি করাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা আমাদের উদ্দেশ্য। ভোট দিয়ে মানুষ যাতে ভাল অনুভব করেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।

সভায় এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার শ ম সাজু বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের দ্বারা আমরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের দ্বারা বাধার সৃষ্টি হয়েছে, টেলিফোন পেয়েছি। এগুলো যেন না থাকে। গোপন কক্ষে কে কাকে ভোট দিলো, এটা ছাড়া সব অনিয়ম বা সংবাদ কাভার লাইভ করতে পারি। কালো টাকার ছড়াছড়ি বিষয় থাকে। অতীতে হয়রানির শিকার হয়েছি, গোয়েন্দাদের কাছে টেলিফোন পেয়েছি। তথ্য ছিল, প্রচার করতে পারিনি। সেদিন ধীরগতি না, আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবু কালাম আজাদ বলেন, এগুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগের ৩টা নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো প্রকৃত নির্বাচন ছিল না, জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। আগামীর নির্বাচন সুষ্ঠু যেন হয়, সেটা এনশিওর করা হবে। প্রায় ৪৭ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে, সব কেন্দ্রে পুলিশ রাখা সম্ভব হবে না, তবে আনসার থাকবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বলা হবে। আপনারা (সাংবাদিকরা) কোনো হয়রানির শিকার হবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি থাকে, এবারও থাকবে। আপনারা সেটা ফলো করবেন। এরপরও বাধার সৃষ্টি হলে একজন অফিসারকে ডেজিগনেট করে দেওয়া হবে, তিনি কথা বলে বাধাবিপত্তি দূর করতে কাজ করবেন।

এ সময় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, আগামী নির্বাচনে যারা আসবে, তারাও রাজনীতিবিদ ও তারাও পেশিশক্তির অধিকারী। রাজশাহীতে গত নির্বাচনে একজন সাংবাদিকের গলাটিপে ধরেছিলেন একজন প্রতিমন্ত্রী। অথচ শত শত সীল মারা হয়েছিল নৌকায় বা ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ প্রতীকে। সেখানে তো যেতে হবে আমাদের, ফুটেজ নিতে হবে।

এর জবাবে উপ প্রেস সচিব বলেন, সরকার সব পদক্ষেপ নেবে। সরকারের কারও প্রতি কোনো রাগ অনুরাগ নেই। সাংবাদিকরা কোনো রাজনৈতিক দলের দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, সেটা দেখা হবে। এবার নিরপেক্ষ থাকবে প্রশাসন। আপনারা প্রশাসনকে জানাবেন, অনিয়ম দেখলে দ্বিধাহীন চিত্তে রিপোর্ট করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যাগুলো দ্রুত কেটে যাবে।

বিশিষ্ট নদী গবেষদ ড. মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আম ও পান রাজশাহীতে হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পান রাজশাহীতে উৎপাদন হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগবে। এতে কার্গো বিমানে পণ্য যাবে বিদেশে। ফলে দেশের অর্থনীতি সচল হবে। এ সময় রাজশাহীতে খেলাধুলায় গুরুত্বারোপের দাবি জানান তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিত উপ প্রেস সচিব বলেন, শিগগিরই রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসবে। পাইলট, নাজমুল, শান্তসহ আরও অনেক ক্রিকেটার এসেছে। আমার বিশ্বাস, সরকার যেভাবে ভাবছে, এক্সিকিউট করতে পারলে, আরও ভাল ক্রিকেটার রাজশাহীতে পাব। শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় আগ্রহী তরুণরা জাতীয় পর্যায়ে স্বাক্ষর রাখতে পারবে। এছাড়া শুধু চীন নয়, জাপান সফরেও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আম আমদানি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি তেলের ডিপো স্থাপনের দাবি জানান একজন জ্বালানি ব্যবসায়ী নেতা। আবুল কালাম আজাদ বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অবশ্যই আমরা বক্তব্য পৌঁছে দেব। সংশ্লিষ্টরা যাচাই করে দেখবেন।

রাজশাহীতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের দাবি উঠে। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যাপক বিষয়। সংস্কার আসবে। কারিকুলামের পরিবর্তন পরিমার্জন আসবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম বলেন, একটা সরকার কীভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠলো? স্বৈরাচারের সময় গণমাধ্যমের দায় ছিল, বড় ভূমিকা ছিল। গত ১৫ বছরে ৬১ সহকর্মী সাংবাদিককে হারিয়েছি, গত আন্দোলনেই আমরা ৬ সাংবাদিক হারিয়েছি। সাগর-রুনি খুন হয়ে চলে গেছেন। বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছি। কিন্তু গত এক বছরে আমরা গণমাধ্যমের কোনো সংস্কারই দেখতে পাচ্ছি না। খুন-গুমের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। গণমাধ্যমের যারা মালিক ছিলেন, এখনো তারাই আছেন, তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিগত সরকার ৭-৮টি টিভি বন্ধ করেছিল, আজও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মিডিয়ার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। মফস্বলের সাংবাদিকরা অলরাউন্ডার। তাদের নির্দিষ্ট বিট থাকে না, সব বিটেই কাজ করতে হয়। কিন্তু সে মোতাবেক মূল্যায়ন হয় না।

এসব কথা উত্তরে উপ প্রেস সচিব বলেন, গত এক বছরে গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। হয়রানি আইনের ক্ষেত্রে গত ৫ বছরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করে হয়রানি করা হয়েছিল। সেটা বাতিল করা হয়েছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছিল, সেটাও বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকের নামে হওয়া হয়রানিমূলক মামলাগুলোও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বন্ধ গণমাধ্যম ২/১টি প্রকাশ হতে শুরু হয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনো চ্যানেল বন্ধ হয় নাই, বরং চালু হচ্ছে। এখন সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হয় না। সাংবাদিকতা করার কারণে কোনো মামলা হয়রানি হয় নাই।

এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক ডা. নাজিব ওয়াদুদ বলেন, টাস্কফোর্স করা উচিত। রাজশাহীর মানুষ বেকার। রাজশাহীতে ব্যবসা বাণিজ্য নাই, চাকরি নাই। শিক্ষানগরী বলা হয়, এটা একেবারে ভুয়া কথা। এগুলো বলে জাস্ট সান্ত্বনা দেওয়া হয়। আপনাদের সঙ্গে বসে কিছু হবে বলে প্রত্যাশাও করি না। কারণ এখন সরকারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন। মূল সমস্যা মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বলি, ৭/৮ মাস পর আহামরি পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ইতিহাসের সর্বোচ্চ রক্তক্ষয়ী নির্বাচন হবে বলে শঙ্কা করছি। প্রতিটি পাড়ায় সন্ত্রাসীর রাজত্ব চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃত্ব দৃশ্যমান করতে হবে। এখনো পুলিশ সক্রিয় না। রাজনৈতিক দলগুলো এত আগ্রাসী, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে মনে করি না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে উপ প্রেস সচিব বলেন, আমরা হতাশ না হই, আশাবাদী থাকি।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি শুচিস্মিতা, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহীর উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার : উপ-প্রেস সচিব

প্রকাশের সময় : ০২:০৬:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : 

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যখনই কোনো ঘটনা ঘটছে তখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আর কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

উপ প্রেস সচিব বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। মিটফোর্ডে খুনের ঘটনায় দ্রুত সময়ে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। নির্দেশনা দিয়েছেন, ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি উন্নতি করাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা আমাদের উদ্দেশ্য। ভোট দিয়ে মানুষ যাতে ভাল অনুভব করেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।

সভায় এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার শ ম সাজু বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের দ্বারা আমরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাদের দ্বারা বাধার সৃষ্টি হয়েছে, টেলিফোন পেয়েছি। এগুলো যেন না থাকে। গোপন কক্ষে কে কাকে ভোট দিলো, এটা ছাড়া সব অনিয়ম বা সংবাদ কাভার লাইভ করতে পারি। কালো টাকার ছড়াছড়ি বিষয় থাকে। অতীতে হয়রানির শিকার হয়েছি, গোয়েন্দাদের কাছে টেলিফোন পেয়েছি। তথ্য ছিল, প্রচার করতে পারিনি। সেদিন ধীরগতি না, আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবু কালাম আজাদ বলেন, এগুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগের ৩টা নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো প্রকৃত নির্বাচন ছিল না, জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। আগামীর নির্বাচন সুষ্ঠু যেন হয়, সেটা এনশিওর করা হবে। প্রায় ৪৭ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে, সব কেন্দ্রে পুলিশ রাখা সম্ভব হবে না, তবে আনসার থাকবে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বলা হবে। আপনারা (সাংবাদিকরা) কোনো হয়রানির শিকার হবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি থাকে, এবারও থাকবে। আপনারা সেটা ফলো করবেন। এরপরও বাধার সৃষ্টি হলে একজন অফিসারকে ডেজিগনেট করে দেওয়া হবে, তিনি কথা বলে বাধাবিপত্তি দূর করতে কাজ করবেন।

এ সময় রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, আগামী নির্বাচনে যারা আসবে, তারাও রাজনীতিবিদ ও তারাও পেশিশক্তির অধিকারী। রাজশাহীতে গত নির্বাচনে একজন সাংবাদিকের গলাটিপে ধরেছিলেন একজন প্রতিমন্ত্রী। অথচ শত শত সীল মারা হয়েছিল নৌকায় বা ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ প্রতীকে। সেখানে তো যেতে হবে আমাদের, ফুটেজ নিতে হবে।

এর জবাবে উপ প্রেস সচিব বলেন, সরকার সব পদক্ষেপ নেবে। সরকারের কারও প্রতি কোনো রাগ অনুরাগ নেই। সাংবাদিকরা কোনো রাজনৈতিক দলের দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, সেটা দেখা হবে। এবার নিরপেক্ষ থাকবে প্রশাসন। আপনারা প্রশাসনকে জানাবেন, অনিয়ম দেখলে দ্বিধাহীন চিত্তে রিপোর্ট করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যাগুলো দ্রুত কেটে যাবে।

বিশিষ্ট নদী গবেষদ ড. মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আম ও পান রাজশাহীতে হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পান রাজশাহীতে উৎপাদন হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগবে। এতে কার্গো বিমানে পণ্য যাবে বিদেশে। ফলে দেশের অর্থনীতি সচল হবে। এ সময় রাজশাহীতে খেলাধুলায় গুরুত্বারোপের দাবি জানান তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিত উপ প্রেস সচিব বলেন, শিগগিরই রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসবে। পাইলট, নাজমুল, শান্তসহ আরও অনেক ক্রিকেটার এসেছে। আমার বিশ্বাস, সরকার যেভাবে ভাবছে, এক্সিকিউট করতে পারলে, আরও ভাল ক্রিকেটার রাজশাহীতে পাব। শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় আগ্রহী তরুণরা জাতীয় পর্যায়ে স্বাক্ষর রাখতে পারবে। এছাড়া শুধু চীন নয়, জাপান সফরেও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আম আমদানি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি তেলের ডিপো স্থাপনের দাবি জানান একজন জ্বালানি ব্যবসায়ী নেতা। আবুল কালাম আজাদ বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অবশ্যই আমরা বক্তব্য পৌঁছে দেব। সংশ্লিষ্টরা যাচাই করে দেখবেন।

রাজশাহীতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের দাবি উঠে। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যাপক বিষয়। সংস্কার আসবে। কারিকুলামের পরিবর্তন পরিমার্জন আসবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম বলেন, একটা সরকার কীভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠলো? স্বৈরাচারের সময় গণমাধ্যমের দায় ছিল, বড় ভূমিকা ছিল। গত ১৫ বছরে ৬১ সহকর্মী সাংবাদিককে হারিয়েছি, গত আন্দোলনেই আমরা ৬ সাংবাদিক হারিয়েছি। সাগর-রুনি খুন হয়ে চলে গেছেন। বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে ৪৪ ধাপ পিছিয়েছি। কিন্তু গত এক বছরে আমরা গণমাধ্যমের কোনো সংস্কারই দেখতে পাচ্ছি না। খুন-গুমের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। গণমাধ্যমের যারা মালিক ছিলেন, এখনো তারাই আছেন, তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিগত সরকার ৭-৮টি টিভি বন্ধ করেছিল, আজও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। মিডিয়ার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। মফস্বলের সাংবাদিকরা অলরাউন্ডার। তাদের নির্দিষ্ট বিট থাকে না, সব বিটেই কাজ করতে হয়। কিন্তু সে মোতাবেক মূল্যায়ন হয় না।

এসব কথা উত্তরে উপ প্রেস সচিব বলেন, গত এক বছরে গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। হয়রানি আইনের ক্ষেত্রে গত ৫ বছরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করে হয়রানি করা হয়েছিল। সেটা বাতিল করা হয়েছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছিল, সেটাও বাতিল করা হয়েছে। সাংবাদিকের নামে হওয়া হয়রানিমূলক মামলাগুলোও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বন্ধ গণমাধ্যম ২/১টি প্রকাশ হতে শুরু হয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনো চ্যানেল বন্ধ হয় নাই, বরং চালু হচ্ছে। এখন সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হয় না। সাংবাদিকতা করার কারণে কোনো মামলা হয়রানি হয় নাই।

এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক ডা. নাজিব ওয়াদুদ বলেন, টাস্কফোর্স করা উচিত। রাজশাহীর মানুষ বেকার। রাজশাহীতে ব্যবসা বাণিজ্য নাই, চাকরি নাই। শিক্ষানগরী বলা হয়, এটা একেবারে ভুয়া কথা। এগুলো বলে জাস্ট সান্ত্বনা দেওয়া হয়। আপনাদের সঙ্গে বসে কিছু হবে বলে প্রত্যাশাও করি না। কারণ এখন সরকারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন। মূল সমস্যা মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বলি, ৭/৮ মাস পর আহামরি পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ইতিহাসের সর্বোচ্চ রক্তক্ষয়ী নির্বাচন হবে বলে শঙ্কা করছি। প্রতিটি পাড়ায় সন্ত্রাসীর রাজত্ব চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃত্ব দৃশ্যমান করতে হবে। এখনো পুলিশ সক্রিয় না। রাজনৈতিক দলগুলো এত আগ্রাসী, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে মনে করি না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে উপ প্রেস সচিব বলেন, আমরা হতাশ না হই, আশাবাদী থাকি।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ এসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি শুচিস্মিতা, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহীর উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।