খুলনা জেলা প্রতিনিধি :
আদালতে বিবাদী পক্ষে আইনজীবীর জামিন আবেদন না থাকায় এবং শুনানি না হওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয় শাহজাদী বেগমকে। এসময় প্রথা অনুযায়ী ১১ দিন বয়সি কন্যাশিশুকে দেখাশোনা করার কেউ না থাকায় শাহজাদীর সঙ্গে তাকেও খুলনা জেলা কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম শাহজাদীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা যায়, বাগেরহাটের রামপালের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহজাদীর সংসারে চার কন্যা রয়েছে। আবারো অন্তঃসত্ত্বা হন শাহজাদী। তবে অনাগত সন্তান যেন ছেলে হয় এমন প্রত্যাশা ছিল স্বামী ও তার পরিবারের। কন্যা হলে বিয়ে বিচ্ছেদের হুমকি দিয়েছিলেন স্বামী। এমন অবস্থায় গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন শাহজাদী। সংবাদ শুনেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন সিরাজুল ইসলাম। পরের দিনগুলোতে তিনি আর হাসপাতালে আসেননি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেননি।
নানামুখী চাপে দিশাহারা শাহজাদী ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে একই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া আরেক নারীর ছেলে সন্তান চুরি করেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় ওইদিন সন্ধ্যায় ছেলে নবজাতক উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমকে (৫৫)।
এ ঘটনায় শাহজাদী ও তার মাকে আসামি করে মানবপাচার আইনে মামলা করেন চুরি যাওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুমন (২৯)। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নার্গিস বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ছয় দিন ধরে শাহজাদীর মা নার্গিস বেগম কারাগারে। আর শাহজাদী হাসপাতালের একটি কক্ষে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ছাড়পত্রের দিনও শিশুর বাবা সিরাজুল ইসলাম আসেননি। দুঃসম্পর্কের এক ভাই শাহজাদীর বিল পরিশোধ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের এসআই শাহীন কবির জানান, আসামি সুস্থ হওয়ায় আইন মেনে তাকে আদালতে তোলা হয়। কিন্তু আদালতে শাহজাদীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। কেউ জামিন আবেদনও করেননি। আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নবজাতকের বিষয়টি পৃথকভাবে কেউ আদালতকে জানাননি। প্রথা অনুযায়ী মায়ের সঙ্গেই তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।