Dhaka শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১৯০ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। তাতে করে প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও অস্ট্রেলিয়ারকে ২১৬ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেট হারিয়ে ৬০ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে। চতুর্থ দিনে ব্রিসবেনে রোমাঞ্চকর টেস্টে ক্যারিবীয় তারকা সামার জোসেফের বোলিং তোপে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় অজিরা। এতে ৮ রানের জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ করেছে ১-১ ড্র। ফলে খানের কিনারে ডুবতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের জন্য নিশ্চিতভাবেই এসেছে স্মরণীয় দিন।

সিরিজ শুরুর আগের ঘটনায় নজর দেওয়া যাক। যেখানে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ তোপ দেগেছিলেন ক্যারিবীয় দলটির ওপর। কারণ দলের স্কোয়াডে থাকা ৭ ক্রিকেটারের যে তখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি। সেই দলই কিনা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে হারের স্বাদ দিয়েছে। একইসঙ্গে ২০ বছর পর অজিদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টও জিতল ক্যারিবীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাদা পোশাকে জয় পেতে তাদের ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

দুই হাত দু’দিকে ছড়িয়ে শামার জোসেফের দেওয়া দৌড়ের সঙ্গে সঙ্গেই রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের ফল চলে আসে। তখন ধারাভাষ্যকক্ষে আনন্দাশ্রু ঝরছিল ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার চোখে। এমন ম্যাচ দেখে হতবিহবল ছিলেন পাশে থাকা অস্ট্রেলিয়ান অ্যাডাম গিলক্রিস্টও। এরপর কিছুটা আবেগ সামলে লারা বলে ওঠেন ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ফের মাথা তুলে দাঁড়ানোর দিন আজ।’

ম্যাচটিতে ক্যারিবীয়দের অসাধারণ এই জয় এনে দেওয়ার আসল নায়ক জোসেফ। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় দেখা গিয়েছিল তিনি খুড়িয়ে হাঁটছেন। আগের দিন মিচেল স্টার্কের বিধ্বংসী এক ইয়র্কার তার আঙুল থেকে রক্ত ঝরিয়েছিল। ফলে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে রিটায়ার্ড হার্ট হন এই পেসার। ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো তার বোলিং সার্ভিস মিস করতে যাচ্ছে উইন্ডিজরা। তৃতীয় দিন তিনি শেষদিকে ফিল্ডিংয়েও নামেননি। তবে চতুর্থ দিন যা করে দেখালেন, তা অবিশ্বাস্য। টানা ১০ ওভারের স্পেলে বল করেছেন। আগুনঝরা বোলিংয়ে ৬৮ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

এ তো গেল ক্যারিবীয়দের দৃঢ়তা, অজিদের হয়ে একপ্রান্তে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছিলেন ইনিংস শুরু করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। ইনিংস শেষ হলেও তিনি অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। ম্যাচ হারের পরও তার এমন হার মানা ইনিংস হয়তো স্বস্তি জোগাবে ডিফেন্ডিং টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের। একপ্রান্তে যখন সতীর্থ ক্রিকেটাররা যাওয়া-আসার মিছিল করেছেন, অপর পাশে মাটি কামড়ে ১৪৬ বলের ইনিংস খেলেন স্মিথ। ৯টি চার ও এক ছয়ের বাউন্ডারি নিয়ে অপরাজিত এই ব্যাটার শেষ জুটিতে দুই বলের জন্য স্ট্রাইক ছেড়েছিলেন। এর ভেতরই জোসেফের প্রায় ১৪৫ গতির বলে বোল্ড জশ হ্যাজলউড। যার মধ্য দিয়ে ২০৭ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে ২ উইকেটে ৬০ রানের পর থেকে গ্যাবায় চতুর্থ দিন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্মিথের সঙ্গে আগেরদিন অপরাজিত থাকা ক্যামেরন গ্রিন আজ ১১তম ওভারে শামার জোসেফের বলে বোল্ড হন। তার বিদায়ে ভাঙে দুজনের ৭১ রানের জুটি। এই অলরাউন্ডারের ব্যাটে আসে ৪২ রান। পরবর্তী ২৩ রানে স্বাগতিকরা আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায়। মিচেল স্টার্ক ছাড়া সেভাবে আর কেউ বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি স্মিথকে। স্টার্কের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান এসেছে।

তৃতীয়দিন কোনো বল না করা জোসেফ পায়ের চোট নিয়ে এদিন করেছেন ১১.৫ ওভার। ম্যাচ শেষে উর্ধ্বশ্বাসে এমন দৌড়ই তো দেওয়ার কথা তার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার শিকার ৮ উইকেট। যা তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। দুই ম্যাচে ৫৭ রানের পাশাপাশি ১৩ উইকেট শামারকে বানিয়েছে সিরিজ সেরা। বড় হার দিয়ে সিরিজ শুরু করা উইন্ডিজরা এই ম্যাচের পর ১-১ ব্যবধানে সমতা এনেছে।

আর এতে ১৯৯৭ সালেরর পর জোসেফের বোলিংয়ের অনন্য প্রদর্শনীতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর টেস্ট ম্যাচে জয় পেলো ক্যারিবীয়রা। আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় ডান পায়ের আঙুলে চোট যাঁর বোলিং করাই অনিশ্চিত ছিল, সেই শামার জোসেফ ৬৮ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটটি তুলে নিয়ে টেস্ট ম্যাচ শেষও করে দিয়েছেন তিনি। এতে ৮ রানের জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ১-১ ড্র করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের

প্রকাশের সময় : ০২:৪৪:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক : 

ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। তাতে করে প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও অস্ট্রেলিয়ারকে ২১৬ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেট হারিয়ে ৬০ রানে তৃতীয় দিন শেষ করে। চতুর্থ দিনে ব্রিসবেনে রোমাঞ্চকর টেস্টে ক্যারিবীয় তারকা সামার জোসেফের বোলিং তোপে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় অজিরা। এতে ৮ রানের জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ করেছে ১-১ ড্র। ফলে খানের কিনারে ডুবতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের জন্য নিশ্চিতভাবেই এসেছে স্মরণীয় দিন।

সিরিজ শুরুর আগের ঘটনায় নজর দেওয়া যাক। যেখানে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্টিভ ওয়াহ তোপ দেগেছিলেন ক্যারিবীয় দলটির ওপর। কারণ দলের স্কোয়াডে থাকা ৭ ক্রিকেটারের যে তখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি। সেই দলই কিনা অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে হারের স্বাদ দিয়েছে। একইসঙ্গে ২০ বছর পর অজিদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টও জিতল ক্যারিবীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাদা পোশাকে জয় পেতে তাদের ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

দুই হাত দু’দিকে ছড়িয়ে শামার জোসেফের দেওয়া দৌড়ের সঙ্গে সঙ্গেই রোমাঞ্চকর এই ম্যাচের ফল চলে আসে। তখন ধারাভাষ্যকক্ষে আনন্দাশ্রু ঝরছিল ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার চোখে। এমন ম্যাচ দেখে হতবিহবল ছিলেন পাশে থাকা অস্ট্রেলিয়ান অ্যাডাম গিলক্রিস্টও। এরপর কিছুটা আবেগ সামলে লারা বলে ওঠেন ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ফের মাথা তুলে দাঁড়ানোর দিন আজ।’

ম্যাচটিতে ক্যারিবীয়দের অসাধারণ এই জয় এনে দেওয়ার আসল নায়ক জোসেফ। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার সময় দেখা গিয়েছিল তিনি খুড়িয়ে হাঁটছেন। আগের দিন মিচেল স্টার্কের বিধ্বংসী এক ইয়র্কার তার আঙুল থেকে রক্ত ঝরিয়েছিল। ফলে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে রিটায়ার্ড হার্ট হন এই পেসার। ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো তার বোলিং সার্ভিস মিস করতে যাচ্ছে উইন্ডিজরা। তৃতীয় দিন তিনি শেষদিকে ফিল্ডিংয়েও নামেননি। তবে চতুর্থ দিন যা করে দেখালেন, তা অবিশ্বাস্য। টানা ১০ ওভারের স্পেলে বল করেছেন। আগুনঝরা বোলিংয়ে ৬৮ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

এ তো গেল ক্যারিবীয়দের দৃঢ়তা, অজিদের হয়ে একপ্রান্তে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছিলেন ইনিংস শুরু করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। ইনিংস শেষ হলেও তিনি অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। ম্যাচ হারের পরও তার এমন হার মানা ইনিংস হয়তো স্বস্তি জোগাবে ডিফেন্ডিং টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের। একপ্রান্তে যখন সতীর্থ ক্রিকেটাররা যাওয়া-আসার মিছিল করেছেন, অপর পাশে মাটি কামড়ে ১৪৬ বলের ইনিংস খেলেন স্মিথ। ৯টি চার ও এক ছয়ের বাউন্ডারি নিয়ে অপরাজিত এই ব্যাটার শেষ জুটিতে দুই বলের জন্য স্ট্রাইক ছেড়েছিলেন। এর ভেতরই জোসেফের প্রায় ১৪৫ গতির বলে বোল্ড জশ হ্যাজলউড। যার মধ্য দিয়ে ২০৭ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে ২ উইকেটে ৬০ রানের পর থেকে গ্যাবায় চতুর্থ দিন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্মিথের সঙ্গে আগেরদিন অপরাজিত থাকা ক্যামেরন গ্রিন আজ ১১তম ওভারে শামার জোসেফের বলে বোল্ড হন। তার বিদায়ে ভাঙে দুজনের ৭১ রানের জুটি। এই অলরাউন্ডারের ব্যাটে আসে ৪২ রান। পরবর্তী ২৩ রানে স্বাগতিকরা আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায়। মিচেল স্টার্ক ছাড়া সেভাবে আর কেউ বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি স্মিথকে। স্টার্কের ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান এসেছে।

তৃতীয়দিন কোনো বল না করা জোসেফ পায়ের চোট নিয়ে এদিন করেছেন ১১.৫ ওভার। ম্যাচ শেষে উর্ধ্বশ্বাসে এমন দৌড়ই তো দেওয়ার কথা তার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার শিকার ৮ উইকেট। যা তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। দুই ম্যাচে ৫৭ রানের পাশাপাশি ১৩ উইকেট শামারকে বানিয়েছে সিরিজ সেরা। বড় হার দিয়ে সিরিজ শুরু করা উইন্ডিজরা এই ম্যাচের পর ১-১ ব্যবধানে সমতা এনেছে।

আর এতে ১৯৯৭ সালেরর পর জোসেফের বোলিংয়ের অনন্য প্রদর্শনীতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর টেস্ট ম্যাচে জয় পেলো ক্যারিবীয়রা। আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় ডান পায়ের আঙুলে চোট যাঁর বোলিং করাই অনিশ্চিত ছিল, সেই শামার জোসেফ ৬৮ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটটি তুলে নিয়ে টেস্ট ম্যাচ শেষও করে দিয়েছেন তিনি। এতে ৮ রানের জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ১-১ ড্র করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।