Dhaka বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্ধশতাধিক সরু সেতু যেন গলার কাঁটা

ধামরাই উপজেলা প্রতিনিধি : 

ছয় ফুট প্রশস্ত ও ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল এবং অটোরিকশা-ভ্যান ছাড়া যেতে পারে না অন্য কোনো যানবাহন। সেতুর সামনে দুই পাশের রেলিং ভাঙা। রড বেরিয়ে আছে। ঢালু সেতু উঠতে গিয়ে প্রায়ই অটোরিকশা দুর্ঘটনায় পড়ছে। প্রায় ৩৫ বছর আগে নির্মাণ হওয়া এ সেতু এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আশপাশের সাত-আটটি গ্রামের মানুষের। সেতু থাকলেও তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। ঢাকার ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের বানেশ্বর এলাকার গাজীখালি নদীর ওপর এই সেতুর অবস্থান।

শুধু বানেশ্বর এলাকা নয়, উপজেলায় এরকম অর্ধশতাধিক সরু সেতু রয়েছে। যেগুলোর জন্য এখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত ধামরাইয়ের গ্রামীণ জনপদ। কালামপুর বাসস্ট্যান্ড খাল, নান্নার, সোমভাগ, সুয়াপুর, সুতিপাড়া, বেলিশ্বর, গাংগুটিয়া, সানোড়া, কুশুরা, বাইশাকান্দা, যাদবপুর, আমতা, চৌহাট ও ভাড়ারিয়া এলাকায় রয়েছে এমন সরু সেতু।

জানা গেছে, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে এলজিইডি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উদ্যোগে ধামরাইয়ের বংশী, গাজীখালি নদী ও বিভিন্ন খালের ওপর পাঁচ থেকে ছয় ফুট প্রশস্ততার অর্ধশতাধিক সেতু নির্মিত হয়। ওইসব সেতু দিয়ে ট্রাক-বাস চলাচল করতে পারে না। ধামরাইয়ের বানেশ্বর গ্রামের লোকমান হোসেন জানান, বানেশ্বরে পৈতৃক ভিটায় দোতলা একটি বাড়ি ও বড় গরুর খামার করার ইচ্ছা তাঁর দীর্ঘদিনের। কিন্তু তাঁর বাড়ি যাওয়ার দেড় কিলোমিটার পূর্বে ও পশ্চিমে গাজীখালি নদীর ওপর যে সেতু রয়েছে, সেটি খুবই সরু। ইট, বালুর ট্রাক এ সেতুতে উঠতে পারে না। ১০০ ফুট লম্বা সেতুটি পাঁচ-ছয় ফুট প্রশস্ততার। এটি দিয়ে শুধু রিকশা-ভ্যান চলতে পারে। ভ্যানে করে সেতুর ওপার থেকে ইট, বালু এনে বাড়ি করতে চাইলে তাঁর যাতায়াত খরচ চারগুণ বেশি লাগবে। এ জন্য তাঁর আর বড় বাড়ি করা হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কোরবান আলী বলেন, এই সেতুর ওপর দিয়ে বানেশ্বর, শোকুরিয়া, রঘুনাথপুর, নওগাঁও, নান্নারসহ সাত-আটটি এলাকার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। সরু সেতুর কারণে অধিকাংশ রাস্তাই এখনও কাঁচা রয়েছে। যাতায়াতের ভালো সুবিধা না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির নায্য দামও পাচ্ছে না।

স্থানীয় মিজানুর রহমান, আব্দুল মতি মিয়া জানান, একটি রিকশা সেতুতে উঠলে একজন মানুষও পাশ দিয়ে সহজে যেতে পারে না। রেলিং ভাঙা, ঝুঁকিপূর্ণ সরু এই সেতু এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

সানোড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, নয়াচর গাজীখালি নদীর ওপর ৩০-৩৫ বছর আগে ছয় ফুট প্রশস্ততা ও ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটির ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করতে না পারায় নয়াচর, শোলধন, নওহাটা, মহিশাষী, ধলকুন্ড, মাকড়খোলা, শ্রীরামপুর, নওগাঁওহাটি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে আছেন।

সুয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকুল এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, শিয়ালকুল নদীর ওপরের সেতুটি ছয় ফুট চওড়া। এ কারণে শিয়ালকুল, মাধবপুর, ফাড়িরচর, নারিকলি, জয়নগরসহ ছয়-সাতটি গ্রামের মানুষকে ভোগতে হচ্ছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, এসব সরু সেতুর কারণে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম বলেন, ধামরাইয়ে যেসব সরু সেতু রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি ভেঙে সেখানে বড় সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে অন্য সরু সেতুগুলোও বড় করে নির্মাণের প্রক্রিয়া করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অর্ধশতাধিক সরু সেতু যেন গলার কাঁটা

প্রকাশের সময় : ১২:২৬:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ধামরাই উপজেলা প্রতিনিধি : 

ছয় ফুট প্রশস্ত ও ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল এবং অটোরিকশা-ভ্যান ছাড়া যেতে পারে না অন্য কোনো যানবাহন। সেতুর সামনে দুই পাশের রেলিং ভাঙা। রড বেরিয়ে আছে। ঢালু সেতু উঠতে গিয়ে প্রায়ই অটোরিকশা দুর্ঘটনায় পড়ছে। প্রায় ৩৫ বছর আগে নির্মাণ হওয়া এ সেতু এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আশপাশের সাত-আটটি গ্রামের মানুষের। সেতু থাকলেও তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। ঢাকার ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের বানেশ্বর এলাকার গাজীখালি নদীর ওপর এই সেতুর অবস্থান।

শুধু বানেশ্বর এলাকা নয়, উপজেলায় এরকম অর্ধশতাধিক সরু সেতু রয়েছে। যেগুলোর জন্য এখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত ধামরাইয়ের গ্রামীণ জনপদ। কালামপুর বাসস্ট্যান্ড খাল, নান্নার, সোমভাগ, সুয়াপুর, সুতিপাড়া, বেলিশ্বর, গাংগুটিয়া, সানোড়া, কুশুরা, বাইশাকান্দা, যাদবপুর, আমতা, চৌহাট ও ভাড়ারিয়া এলাকায় রয়েছে এমন সরু সেতু।

জানা গেছে, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে এলজিইডি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উদ্যোগে ধামরাইয়ের বংশী, গাজীখালি নদী ও বিভিন্ন খালের ওপর পাঁচ থেকে ছয় ফুট প্রশস্ততার অর্ধশতাধিক সেতু নির্মিত হয়। ওইসব সেতু দিয়ে ট্রাক-বাস চলাচল করতে পারে না। ধামরাইয়ের বানেশ্বর গ্রামের লোকমান হোসেন জানান, বানেশ্বরে পৈতৃক ভিটায় দোতলা একটি বাড়ি ও বড় গরুর খামার করার ইচ্ছা তাঁর দীর্ঘদিনের। কিন্তু তাঁর বাড়ি যাওয়ার দেড় কিলোমিটার পূর্বে ও পশ্চিমে গাজীখালি নদীর ওপর যে সেতু রয়েছে, সেটি খুবই সরু। ইট, বালুর ট্রাক এ সেতুতে উঠতে পারে না। ১০০ ফুট লম্বা সেতুটি পাঁচ-ছয় ফুট প্রশস্ততার। এটি দিয়ে শুধু রিকশা-ভ্যান চলতে পারে। ভ্যানে করে সেতুর ওপার থেকে ইট, বালু এনে বাড়ি করতে চাইলে তাঁর যাতায়াত খরচ চারগুণ বেশি লাগবে। এ জন্য তাঁর আর বড় বাড়ি করা হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কোরবান আলী বলেন, এই সেতুর ওপর দিয়ে বানেশ্বর, শোকুরিয়া, রঘুনাথপুর, নওগাঁও, নান্নারসহ সাত-আটটি এলাকার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। সরু সেতুর কারণে অধিকাংশ রাস্তাই এখনও কাঁচা রয়েছে। যাতায়াতের ভালো সুবিধা না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির নায্য দামও পাচ্ছে না।

স্থানীয় মিজানুর রহমান, আব্দুল মতি মিয়া জানান, একটি রিকশা সেতুতে উঠলে একজন মানুষও পাশ দিয়ে সহজে যেতে পারে না। রেলিং ভাঙা, ঝুঁকিপূর্ণ সরু এই সেতু এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

সানোড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, নয়াচর গাজীখালি নদীর ওপর ৩০-৩৫ বছর আগে ছয় ফুট প্রশস্ততা ও ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটির ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল করতে না পারায় নয়াচর, শোলধন, নওহাটা, মহিশাষী, ধলকুন্ড, মাকড়খোলা, শ্রীরামপুর, নওগাঁওহাটি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে আছেন।

সুয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকুল এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, শিয়ালকুল নদীর ওপরের সেতুটি ছয় ফুট চওড়া। এ কারণে শিয়ালকুল, মাধবপুর, ফাড়িরচর, নারিকলি, জয়নগরসহ ছয়-সাতটি গ্রামের মানুষকে ভোগতে হচ্ছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, এসব সরু সেতুর কারণে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম বলেন, ধামরাইয়ে যেসব সরু সেতু রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি ভেঙে সেখানে বড় সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে অন্য সরু সেতুগুলোও বড় করে নির্মাণের প্রক্রিয়া করা হবে।