নিজস্ব প্রতিবেদক :
২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (১১ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন দুপুর ২টা ২২ মিনিটের দিকে আসামিকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। এরপর দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটের দিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয় বারকাতকে। বিচারক এজলাসে ওঠেন বিকাল ৩টা ৪১ মিনিটে। এ সময় অধ্যাপক বারকাতকে আদালতের বেঞ্চে বসানো হয়। তার পাশে তার মেয়েসহ স্বজনরা বসে ছিলেন। মাঝেমধ্যে নাতিকে কোলে নেন আসামি বারকাত।
এদিকে বিচারক এজলাসে আসার পরে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ আসামিকে ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়নসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের জোর দাবি জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল আউয়াল জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টে (ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কোর্ট) হবে জানিয়ে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে আবুল বারাকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। দুদকের জন্য নির্ধারিত ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থাটির উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নিতাই চন্দ্র নাথ।
এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, জনতা ভবন কর্পোরেট শাখার সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, ব্যাংকের নির্বাহী প্রকৌশলী (এসএমই ডিপার্টমেন্ট) মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক ডিএমডি মো. গোলাম ফারুক ও সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুককে আসামি করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে এননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহাকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি, মিথ্যা রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক খাঁটি হিসেবে ব্যবহার, অপরাধজনক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃক মর্টগেজ নেওয়া জমিতে বাস্তবে কোনো ভবন/স্থাপনা/কারখানা না থাকা সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা মালিক হওয়ার আগেই জমিতে স্থাপনা দেখিয়ে মূল্যায়ন করে। স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ক্রয়কৃত জমিকে ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যায়ন করে অন্যায়ভাবে বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ০৫/২০০৫ এবং এমওইউ এর অনুশাসন ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঋণ অনুমোদনপূর্বক বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক লিমিটেড জনতা ভবন করপোরেট শাখা, ঢাকার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।