Dhaka মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতিতে গৃহস্থালির অবৈতনিক কাজের মূল্য ৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৭৮ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, পরিবার পরিচালনা কিংবা শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নেওয়ার মতো অবৈতনিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্য প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে হিসাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে এসব কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬.৭ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৮.৯ শতাংশের সমান। আর নারীদের এই অবৈতনিক কাজের মূল্য ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটরিয়ামে প্রকাশিত ‘আনপেইড হাউজহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অব অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দৈনিক একজন নারী ৫ দশমিক ৯ ঘণ্টা আনপেইড কাজ করেন। যা পুরুষের তুলনায় ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

বিবিএস জানায়, রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, শিশু ও বৃদ্ধের যত্ন নেওয়া কিংবা অসুস্থের সেবা এমন অসংখ্য কাজের ওপরই ভর করে চলে পরিবার ও সমাজ। তবু এতদিন এই কাজগুলো দেশের অর্থনীতির খাতায় লেখা থাকেনি। নতুন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নারীর এই অদৃশ্য শ্রমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব জাতীয় পরিসংখ্যানে ধরা হলো।

প্রধান অতিথি নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুর্শিদ বলেন, নারীর শ্রম দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির ছায়ায় ছিল। আজকের এই প্রতিবেদন সেই অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করলো।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিবিএসের উপপরিচালক আসমা আখতার। তিনি জানান, সময় ব্যবহার জরিপ ২০২১ এবং শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হিসাব তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেনের নুবাইরা জেহেন ‘কেয়ার ক্যালকুলেটর’ নামের সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেখান, একজন মানুষ প্রতিদিন কতটা সময় অবৈতনিক কাজে ব্যয় করেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অবৈতনিক কাজকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যত্ন খাতকে জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন কৌশলে অগ্রাধিকার দেওয়া, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে নীতি প্রণয়ন, বেসরকারি খাতে পরিবারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও যত্নকেন্দ্রিক চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি পুরুষ ও ছেলেদেরকে যত্ন ভাগাভাগিতে উৎসাহিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ মাহিন্থান জোসেফ মারিয়াসিংহাম ভিডিও বার্তায় এই উদ্যোগকে বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রণী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশে বছরে নারী ও পুরুষের গড়ে প্রায় ২,৪৩৫ ঘণ্টা অবৈতনিক গৃহস্থালী ও যত্নমূলক কাজে ব্যয় হয়, যার মধ্যে ৭৯ শতাংশ সময় অবৈতনিক গৃহস্থালী কাজে এবং বাকিটা অবৈতনিক যত্নমূলক কাজে ব্যয় করে থাকে। অবৈতনিক গৃহস্থালী ও যত্নমূলক কাজের মোট সময়ের মধ্যে ৮৮ শতাংশ সময়। (২,১৪৬ ঘণ্টা) নারীরা ব্যয় করে থাকে। এক্ষেত্রে, অবৈতনিক গৃহস্থালী কাজের মধ্যে ৮৯ শতাংশ এবং যত্নমূলক কাজের ৮৬ শতাংশ সময় নারীরা ব্যয় করে থাকে।

লিঙ্গ এবং প্রকারভেদে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক মোট সময় ব্যয় এবং ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার অবৈতনিক কাজে মোট সময় ব্যয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর অদেখা শ্রমের এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং নীতি ও বাজেটে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য এক বড় ভিত্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করার মাধ্যমে দেশ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অর্থনীতিতে গৃহস্থালির অবৈতনিক কাজের মূল্য ৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকা

প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, পরিবার পরিচালনা কিংবা শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নেওয়ার মতো অবৈতনিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্য প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে হিসাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে এসব কাজের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬.৭ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা জাতীয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৮.৯ শতাংশের সমান। আর নারীদের এই অবৈতনিক কাজের মূল্য ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটরিয়ামে প্রকাশিত ‘আনপেইড হাউজহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অব অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দৈনিক একজন নারী ৫ দশমিক ৯ ঘণ্টা আনপেইড কাজ করেন। যা পুরুষের তুলনায় ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

বিবিএস জানায়, রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, শিশু ও বৃদ্ধের যত্ন নেওয়া কিংবা অসুস্থের সেবা এমন অসংখ্য কাজের ওপরই ভর করে চলে পরিবার ও সমাজ। তবু এতদিন এই কাজগুলো দেশের অর্থনীতির খাতায় লেখা থাকেনি। নতুন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নারীর এই অদৃশ্য শ্রমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব জাতীয় পরিসংখ্যানে ধরা হলো।

প্রধান অতিথি নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুর্শিদ বলেন, নারীর শ্রম দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির ছায়ায় ছিল। আজকের এই প্রতিবেদন সেই অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করলো।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিবিএসের উপপরিচালক আসমা আখতার। তিনি জানান, সময় ব্যবহার জরিপ ২০২১ এবং শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হিসাব তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেনের নুবাইরা জেহেন ‘কেয়ার ক্যালকুলেটর’ নামের সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেখান, একজন মানুষ প্রতিদিন কতটা সময় অবৈতনিক কাজে ব্যয় করেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অবৈতনিক কাজকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যত্ন খাতকে জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন কৌশলে অগ্রাধিকার দেওয়া, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে নীতি প্রণয়ন, বেসরকারি খাতে পরিবারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও যত্নকেন্দ্রিক চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি পুরুষ ও ছেলেদেরকে যত্ন ভাগাভাগিতে উৎসাহিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ মাহিন্থান জোসেফ মারিয়াসিংহাম ভিডিও বার্তায় এই উদ্যোগকে বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রণী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশে বছরে নারী ও পুরুষের গড়ে প্রায় ২,৪৩৫ ঘণ্টা অবৈতনিক গৃহস্থালী ও যত্নমূলক কাজে ব্যয় হয়, যার মধ্যে ৭৯ শতাংশ সময় অবৈতনিক গৃহস্থালী কাজে এবং বাকিটা অবৈতনিক যত্নমূলক কাজে ব্যয় করে থাকে। অবৈতনিক গৃহস্থালী ও যত্নমূলক কাজের মোট সময়ের মধ্যে ৮৮ শতাংশ সময়। (২,১৪৬ ঘণ্টা) নারীরা ব্যয় করে থাকে। এক্ষেত্রে, অবৈতনিক গৃহস্থালী কাজের মধ্যে ৮৯ শতাংশ এবং যত্নমূলক কাজের ৮৬ শতাংশ সময় নারীরা ব্যয় করে থাকে।

লিঙ্গ এবং প্রকারভেদে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক মোট সময় ব্যয় এবং ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার অবৈতনিক কাজে মোট সময় ব্যয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর অদেখা শ্রমের এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং নীতি ও বাজেটে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য এক বড় ভিত্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করার মাধ্যমে দেশ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো।