Dhaka শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভ্যুত্থানের আগে আ. লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতরা এনসিপিতে নয় : সারজিস আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

২৪’র গণঅভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন কেউ জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দলটির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অন্যদলের যে কোনো ভাল মানুষদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দলের ঢাকা জেলা ও দুই মহানগর শাখার সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস বলেন, এনসিপি যদি জুলাইয়ে আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে আজ থেকে দুই বছর পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দলে পরিণত হবে। কেউ যদি মনে করে এনসিপিতে এসে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য পূরণ করবেন, তাহলে এই দল তাদের জন্য না। আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। দলটি তার আর্দশ অনুযায়ীই চলবে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ যেন নিজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য কাউকে টেনে না ধরি। এনসিপির ভেতর লক্ষ্য করা যায়— কাউকে টেনে ধরতে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে। এসব বিষয় থেকে বের হতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া আর তা না হলেও থাকবে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায়, এ কথা বলেন সারজিস আলম বলেন, এনসিপি বাংলাদেশে ৪৬ নম্বর রাজনৈতিক দল হতে আসেনি। আমরা হয় জনগণের হয়ে সরকারি দল হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করব, না হয় শক্তিশালী বিরোধী দল হব। জাতীয় পার্টির মতো পোষা বিরোধী দল হতেও আমরা আসিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জাতীয় পার্টি যখন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ছিল, তখন তারা ‘পোষা’ বিরোধী দল হিসেবে সমালোচিত হতো।

এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কিংবা মহানগর, থানা, ওয়ার্ড, বাংলাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকতে হবে। যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এনসিপি বাংলাদেশের শক্তিশালী দুটি রাজনৈতিক দলের একটি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

কমিটি করার ক্ষেত্রে কিছু ‘ক্রাইটেরিয়া’ বা মানদণ্ডের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, আলাদাভাবে প্রতিটি থানায় গিয়ে সমন্বয় সভা করে সেই থানার আহ্বায়ক কমিটি দিতে হবে। বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে কোনো কমিটি দেওয়া যাবে না। কমিটিগুলোর আহ্বায়ক চল্লিশোর্ধ্ব হতে হবে, সদস্যসচিব কোনোভাবেই ৩৫ বছরের নিচে হবে না। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ এবং তার যেকোনো অঙ্গসংগঠনের পদে ছিল, এমন কেউ এনসিপির কোনো আহ্বায়ক কমিটিতে আসতে পারবে না। নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে রাখা যাবে না।

অন্য সব রাজনৈতিক দলের ভালো মানুষদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা বলে জানান সারজিস। তবে তিনি সেই সঙ্গে বলেন, ‘একদম স্পষ্ট কথা হচ্ছে, কেউ যদি মনে করেন এনসিপিতে এসে আগের বা নিজের কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবেন বা প্রত্যাশা করবেন, তাহলে আপনারা হয় আগের জায়গায় ফিরে যান অথবা এনসিপি থেকে দূরে থাকুন।’

আগামীর বাংলাদেশ যদি জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা সামনে ধারণ করে এগিয়ে চলে, তাহলে দুই বছর পরে এনসিপি বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত, গ্রহণযোগ্য এবং প্রত্যাশিত রাজনৈতিক দল হবে বলে মনে করেন সারজিস। সেই দিকটি মাথায় নিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আওয়ামী লীগের পদবিধারী ও জুলাই বিরোধীরা আহ্বায়ক কমিটিতে থাকতে পারবে না। ইমেজ খারাপ লোকদের দলে নেওয়া হবে না। ক্ষমতা ও পদের অপব্যবহাকারীদের দলে নেওয়া যাবে না। তাদের বিষয়ে প্রয়োজনে ফ্যাক্টচেক করতে হবে। আর অন্য দলের ক্লিন ইমেজধারীদের দলে নেওয়া যাবে। তবে তারা আগের দলের আদর্শ লালন করতে পারবেন না।

এনসিপির এই সমন্বয় সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (দক্ষিণাঞ্চল), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অভ্যুত্থানের আগে আ. লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতরা এনসিপিতে নয় : সারজিস আলম

প্রকাশের সময় : ০৯:২৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

২৪’র গণঅভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন কেউ জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দলটির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অন্যদলের যে কোনো ভাল মানুষদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দলের ঢাকা জেলা ও দুই মহানগর শাখার সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস বলেন, এনসিপি যদি জুলাইয়ে আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে আজ থেকে দুই বছর পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দলে পরিণত হবে। কেউ যদি মনে করে এনসিপিতে এসে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য পূরণ করবেন, তাহলে এই দল তাদের জন্য না। আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। দলটি তার আর্দশ অনুযায়ীই চলবে।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কেউ যেন নিজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য কাউকে টেনে না ধরি। এনসিপির ভেতর লক্ষ্য করা যায়— কাউকে টেনে ধরতে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে। এসব বিষয় থেকে বের হতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া আর তা না হলেও থাকবে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায়, এ কথা বলেন সারজিস আলম বলেন, এনসিপি বাংলাদেশে ৪৬ নম্বর রাজনৈতিক দল হতে আসেনি। আমরা হয় জনগণের হয়ে সরকারি দল হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করব, না হয় শক্তিশালী বিরোধী দল হব। জাতীয় পার্টির মতো পোষা বিরোধী দল হতেও আমরা আসিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জাতীয় পার্টি যখন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ছিল, তখন তারা ‘পোষা’ বিরোধী দল হিসেবে সমালোচিত হতো।

এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কিংবা মহানগর, থানা, ওয়ার্ড, বাংলাদেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকতে হবে। যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এনসিপি বাংলাদেশের শক্তিশালী দুটি রাজনৈতিক দলের একটি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

কমিটি করার ক্ষেত্রে কিছু ‘ক্রাইটেরিয়া’ বা মানদণ্ডের দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, আলাদাভাবে প্রতিটি থানায় গিয়ে সমন্বয় সভা করে সেই থানার আহ্বায়ক কমিটি দিতে হবে। বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে কোনো কমিটি দেওয়া যাবে না। কমিটিগুলোর আহ্বায়ক চল্লিশোর্ধ্ব হতে হবে, সদস্যসচিব কোনোভাবেই ৩৫ বছরের নিচে হবে না। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ এবং তার যেকোনো অঙ্গসংগঠনের পদে ছিল, এমন কেউ এনসিপির কোনো আহ্বায়ক কমিটিতে আসতে পারবে না। নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে রাখা যাবে না।

অন্য সব রাজনৈতিক দলের ভালো মানুষদের জন্য এনসিপির দরজা খোলা বলে জানান সারজিস। তবে তিনি সেই সঙ্গে বলেন, ‘একদম স্পষ্ট কথা হচ্ছে, কেউ যদি মনে করেন এনসিপিতে এসে আগের বা নিজের কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবেন বা প্রত্যাশা করবেন, তাহলে আপনারা হয় আগের জায়গায় ফিরে যান অথবা এনসিপি থেকে দূরে থাকুন।’

আগামীর বাংলাদেশ যদি জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা সামনে ধারণ করে এগিয়ে চলে, তাহলে দুই বছর পরে এনসিপি বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত, গ্রহণযোগ্য এবং প্রত্যাশিত রাজনৈতিক দল হবে বলে মনে করেন সারজিস। সেই দিকটি মাথায় নিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, আওয়ামী লীগের পদবিধারী ও জুলাই বিরোধীরা আহ্বায়ক কমিটিতে থাকতে পারবে না। ইমেজ খারাপ লোকদের দলে নেওয়া হবে না। ক্ষমতা ও পদের অপব্যবহাকারীদের দলে নেওয়া যাবে না। তাদের বিষয়ে প্রয়োজনে ফ্যাক্টচেক করতে হবে। আর অন্য দলের ক্লিন ইমেজধারীদের দলে নেওয়া যাবে। তবে তারা আগের দলের আদর্শ লালন করতে পারবেন না।

এনসিপির এই সমন্বয় সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (দক্ষিণাঞ্চল), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।