Dhaka মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভিযানের মধ্যেই আবারও বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কাঁচা মরিচের ঝাঁজে দিশেহারা জনগণকে স্বস্তি দিতে ভারত থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পাশাপাশি বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যে কারণে কমেছিল পণ্যটির দাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আবারও কাঁচা মরিচের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এক রাতের ব্যবধানে কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকা।

বুধবার (৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম হাঁকাচ্ছেন ১২০ টাকা। সে হিসেবে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ে ৪৮০ টাকা। অথচ সোমবার ও মঙ্গলবার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি।

এদিকে, মরিচের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ আমদানিকৃত মরিচ বাজারে এলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দেশি মরিচের সরবরাহ কম থাকায় আমদানি দিয়ে দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না।

খিলগাঁও এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী বোরহান বলেন, এখন প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২০৫০ থেকে ২১০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজি পড়ছে ৪৫০ টাকা। এর মাঝে কিছুটা বাদ যাবে, গাড়ি ভাড়া আছে। এরপর যা থাকে সেটা লাভ।

দাম বাড়ার কথা শিকার করেছেন পাইকার ব্যবসায়ীরাও। কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী আবদুল বাসেদ মোল্লা বলেন, সরবরাহ কম হওয়ার কারণে পাইকারিতেও কাঁচা মরিচের দাম আবারও বেড়েছে। কাঁচামালের দাম সরবরাহের উপর ওঠানামা করে থাকে।

তবে ব্যবসায়ীদের কথা মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে বন্দি মরিচ। এ বিষয়ে দক্ষিণ শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, আমদানিকৃত মরিচ বাজারে এসেছে তাহলে দাম কেনো কমছে না। নিশ্চয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে রান্নার অতিপ্রয়োজনীয় মসলা জাতীয় পণ্যটি।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। দাম বাড়বে জানলে তো গতকাল সস্তায় বিক্রি করতাম না। আজকে ডাবল লাভ করতে পারতাম।

তিনি বলেন, কাঁচাবাজারের কোনো মা-বাপ নাই, সকালে একদর, বিকেলে আরেক দর। আজকে কারওয়ান (পাইকারি) বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। আমাদের তো লাভ নেই। বরং গতকাল দুই বস্তা এনেছিলাম, আজকে দাম বাড়ায় এক বস্তা এনেছি।

দাম বৃদ্ধির কারণে জানতে চাইলে রামপুরা বাজারে ব্যবসায়ীর মতো একই সুরে কথা বলেন মধ্য বাড্ডার পাঁচতলা বাজারের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান সুমন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরিচের বাজার আগুন। গতকাল (৪ জুলাই) এক পাল্লা (৫ কেজি) মরিচ এনেছি ১১০০ টাকা দিয়ে। আজকে এনেছি ২৩০০ টাকা পাল্লা। এবার বলুন, আমি কী করব?

তিনি বলেন, শুনলাম ভারত থেকে মরিচ আমদানি হচ্ছে। এই খবরে দাম কমে গেল অর্ধেক, আজকে আবার বাড়ল, বাজারে যে কী হচ্ছে তা বলতে পারছি না।

বাজারটিতে আসা ক্রেতা হাসান পাটোয়ারী বলেন, পেঁয়াজের পর কাঁচা মরিচকে নিয়ে একটা তামাশা চলছে। তা না হলে একদিনের ব্যবধানে মরিচের দাম কেমনে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা হয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করছে, ভোক্তা অধিকার ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ফুয়াদ হোসেন টিটো বলেন, বাজারে মরিচের সংকট। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়তি। তিনি বলেন, ভারত থেকেও আমরা যে পরিমাণ মরিচ আসবে বলে আশা করছিলাম, সে পরিমাণ মরিচ আসেনি। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় মরিচের আমদানি কম বাজারে, তাই দামও বেশি।

এর আগে ভারতের মরিচ আসায় গত ৩ জুলাই রাজধানীর বাজারে মরিচের দাম এক লাফে কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে তার আগের দিন ২ জুলাই ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও হাজার টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রির খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আপস করলে খালেদা জিয়া অনেক আগেই ক্ষমতায় বসতে পারতেন : সেলিমা রহমান

অভিযানের মধ্যেই আবারও বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম

প্রকাশের সময় : ১২:৪৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কাঁচা মরিচের ঝাঁজে দিশেহারা জনগণকে স্বস্তি দিতে ভারত থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পাশাপাশি বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যে কারণে কমেছিল পণ্যটির দাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আবারও কাঁচা মরিচের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এক রাতের ব্যবধানে কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকা।

বুধবার (৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম হাঁকাচ্ছেন ১২০ টাকা। সে হিসেবে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ে ৪৮০ টাকা। অথচ সোমবার ও মঙ্গলবার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি।

এদিকে, মরিচের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ আমদানিকৃত মরিচ বাজারে এলেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে দেশি মরিচের সরবরাহ কম থাকায় আমদানি দিয়ে দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না।

খিলগাঁও এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী বোরহান বলেন, এখন প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২০৫০ থেকে ২১০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজি পড়ছে ৪৫০ টাকা। এর মাঝে কিছুটা বাদ যাবে, গাড়ি ভাড়া আছে। এরপর যা থাকে সেটা লাভ।

দাম বাড়ার কথা শিকার করেছেন পাইকার ব্যবসায়ীরাও। কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী আবদুল বাসেদ মোল্লা বলেন, সরবরাহ কম হওয়ার কারণে পাইকারিতেও কাঁচা মরিচের দাম আবারও বেড়েছে। কাঁচামালের দাম সরবরাহের উপর ওঠানামা করে থাকে।

তবে ব্যবসায়ীদের কথা মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে বন্দি মরিচ। এ বিষয়ে দক্ষিণ শাহজাহানপুরের বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, আমদানিকৃত মরিচ বাজারে এসেছে তাহলে দাম কেনো কমছে না। নিশ্চয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে রান্নার অতিপ্রয়োজনীয় মসলা জাতীয় পণ্যটি।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। দাম বাড়বে জানলে তো গতকাল সস্তায় বিক্রি করতাম না। আজকে ডাবল লাভ করতে পারতাম।

তিনি বলেন, কাঁচাবাজারের কোনো মা-বাপ নাই, সকালে একদর, বিকেলে আরেক দর। আজকে কারওয়ান (পাইকারি) বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। আমাদের তো লাভ নেই। বরং গতকাল দুই বস্তা এনেছিলাম, আজকে দাম বাড়ায় এক বস্তা এনেছি।

দাম বৃদ্ধির কারণে জানতে চাইলে রামপুরা বাজারে ব্যবসায়ীর মতো একই সুরে কথা বলেন মধ্য বাড্ডার পাঁচতলা বাজারের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান সুমন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরিচের বাজার আগুন। গতকাল (৪ জুলাই) এক পাল্লা (৫ কেজি) মরিচ এনেছি ১১০০ টাকা দিয়ে। আজকে এনেছি ২৩০০ টাকা পাল্লা। এবার বলুন, আমি কী করব?

তিনি বলেন, শুনলাম ভারত থেকে মরিচ আমদানি হচ্ছে। এই খবরে দাম কমে গেল অর্ধেক, আজকে আবার বাড়ল, বাজারে যে কী হচ্ছে তা বলতে পারছি না।

বাজারটিতে আসা ক্রেতা হাসান পাটোয়ারী বলেন, পেঁয়াজের পর কাঁচা মরিচকে নিয়ে একটা তামাশা চলছে। তা না হলে একদিনের ব্যবধানে মরিচের দাম কেমনে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা হয়। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করছে, ভোক্তা অধিকার ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ফুয়াদ হোসেন টিটো বলেন, বাজারে মরিচের সংকট। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়তি। তিনি বলেন, ভারত থেকেও আমরা যে পরিমাণ মরিচ আসবে বলে আশা করছিলাম, সে পরিমাণ মরিচ আসেনি। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় মরিচের আমদানি কম বাজারে, তাই দামও বেশি।

এর আগে ভারতের মরিচ আসায় গত ৩ জুলাই রাজধানীর বাজারে মরিচের দাম এক লাফে কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে তার আগের দিন ২ জুলাই ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও হাজার টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রির খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।