Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার আর নেই

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১৮৩ জন দেখেছেন

বিনোদন ডেস্ক : 

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার মারা গেছেন। দুই থেকে তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছেন অভিনেত্রী। অবশেষে সব লড়াইয়ের অবসান ঘটল। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে মারা গেছেন এই অভিনেত্রী। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৫ বছর।

অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টালিউডে। গত ১৩ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যান্সার হাসপালাতে ভর্তি ছিলেন শ্রীলা। তারপর অভিনেত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন শ্রীলা।

শ্রীলার ছেলে সোহেল আব্দি পড়াশোনার সূত্রে লন্ডনে থাকেন। কিন্তু মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।

অভিনেত্রীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ্যে আসার পরই শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা ও পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শ্রীলা দি আর নেই এটা মানতেই পারছি না। নিজের কানকেই প্রথমে বিশ্বাস করিনি। এখনো মনে হচ্ছে যেন দুঃস্বপ্ন দেখছি কোনও।’

তিনি এদিন আরও বলেন, ‘শ্রীলা দি যে এতটা অসুস্থ জানতামই না আমরা। উনি কখনো আমাদের তাঁর অসুস্থতার কথাটা বুঝতে দেননি। তবে শারীরিক ভাবে যে কোনও সমস্যা ছিল সেটা তাঁকে দেখে বোঝা যেত। কোথাও একটা কষ্ট আছে বোঝা যেত। কিন্তু উনি যেহেতু কখনো অসুস্থতার কথা বলেননি তাই সৌজন্য দেখিয়ে আমরাও কখনো জিজ্ঞেস করিনি। উনি কখনো কাজ থেকে বিশ্রাম চাননি, নিজের সবটা উজাড় করে কাজ করে গিয়েছেন। শুটিংয়ে কেমন চাও থাকে সবাই জানেন। তবুও সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি ওই শরীরে কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে করেছেন সেটা এখন ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’

বন্ধু শ্রীলাকে স্মরণ করেছেন গায়ক ও নির্মাতা অঞ্জন দত্ত। ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার, এমনটাই জানালেন তিনি। মৃণাল সেনকেই মেন্টর মনে করতেন দুজন। সে কথাও উঠে এল অঞ্জন দত্তর স্মৃতিকথায়।

বন্ধুর ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, ‘এ দেশের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। এমন দুর্দান্ত অভিনেতাদের খোঁজার একটা দারুণ নেশা ছিল মৃণাল সেনের। তিনিই শ্রীলাকে ইনট্রোডিউস করেছিলেন। ও ভারতীয় সিনেমায় ঝড় তুলেছিল। দেশের কয়েকজন সেরা পরিচালক ও অভিনেতা ওর গুণমুগ্ধ ছিলেন। কালো, তীব্র সুন্দর অভিনেত্রী যার শক্তি ছিল তার চোখ এবং বিরক্তি। আমার সৌভাগ্য যে আমি কিছু সময় ওর সহকর্মী ছিলাম আর পরিচালক ও বন্ধুও ছিলাম।

শেষবার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। তবে পর্দার বাইরে শেষ বার তাকে দেখা যায় গত বছর আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে।

১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি শ্রীলার। তখন শ্রীলা ১৬ বছরের কিশোরী। নাটকের মহড়ায় শ্রীলার অভিনয় দেখেই তাকে নিজের সিনেমার অভিনেত্রী হিসাবে বেছেছিলেন মৃণাল। তার পর ‘এক দিন প্রতি দিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’-এর মতো উল্লেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল, নাসিউরুদ্দিন শাহের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।

শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় কাজ করেছেন ‘আরহণ’, ‘মান্ডির’ মতো সিনেমায়। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ সিনেমায় ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রীলা। পর্দার পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়েও সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নহবত’ নাটকে শ্রীলার অভিনয় নজর কেড়েছিল। বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাতেও কিন্তু শ্রীলার অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।
অঞ্জন চৌধুরির ‘পূজা’ সিনেমায় শ্রীলার অভিনয় মনে ধরেছিল দর্শকের। তেমনি হরনাথ চক্রবর্তীর ‘প্রতিবাদ’ সিনেমাতেও শ্রীলা সমান নজর কেড়েছেন। এই দুটি সিনেমার হাত ধরেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ইদানীং কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলা। খানিকটা অসুস্থতার কারণেই পর্দায় শ্রীলাকে বিশেষ দেখা যাচ্ছিল না।

শ্রীলার সহকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ, দক্ষ এবং পেশাদার অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও পর্দায় তাকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। তবে এ সব নিয়ে অবশ্য কখনোই তেমন সরব হননি শ্রীলা। বরাবরই শান্ত, স্থির ছিলেন। কম কথা বলতেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার আর নেই

প্রকাশের সময় : ০২:২৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক : 

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার মারা গেছেন। দুই থেকে তিন বছর ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছেন অভিনেত্রী। অবশেষে সব লড়াইয়ের অবসান ঘটল। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে মারা গেছেন এই অভিনেত্রী। তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৫ বছর।

অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টালিউডে। গত ১৩ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যান্সার হাসপালাতে ভর্তি ছিলেন শ্রীলা। তারপর অভিনেত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন শ্রীলা।

শ্রীলার ছেলে সোহেল আব্দি পড়াশোনার সূত্রে লন্ডনে থাকেন। কিন্তু মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।

অভিনেত্রীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ্যে আসার পরই শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা ও পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শ্রীলা দি আর নেই এটা মানতেই পারছি না। নিজের কানকেই প্রথমে বিশ্বাস করিনি। এখনো মনে হচ্ছে যেন দুঃস্বপ্ন দেখছি কোনও।’

তিনি এদিন আরও বলেন, ‘শ্রীলা দি যে এতটা অসুস্থ জানতামই না আমরা। উনি কখনো আমাদের তাঁর অসুস্থতার কথাটা বুঝতে দেননি। তবে শারীরিক ভাবে যে কোনও সমস্যা ছিল সেটা তাঁকে দেখে বোঝা যেত। কোথাও একটা কষ্ট আছে বোঝা যেত। কিন্তু উনি যেহেতু কখনো অসুস্থতার কথা বলেননি তাই সৌজন্য দেখিয়ে আমরাও কখনো জিজ্ঞেস করিনি। উনি কখনো কাজ থেকে বিশ্রাম চাননি, নিজের সবটা উজাড় করে কাজ করে গিয়েছেন। শুটিংয়ে কেমন চাও থাকে সবাই জানেন। তবুও সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি ওই শরীরে কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে করেছেন সেটা এখন ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’

বন্ধু শ্রীলাকে স্মরণ করেছেন গায়ক ও নির্মাতা অঞ্জন দত্ত। ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার, এমনটাই জানালেন তিনি। মৃণাল সেনকেই মেন্টর মনে করতেন দুজন। সে কথাও উঠে এল অঞ্জন দত্তর স্মৃতিকথায়।

বন্ধুর ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে অঞ্জন দত্ত লিখেছেন, ‘এ দেশের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার। এমন দুর্দান্ত অভিনেতাদের খোঁজার একটা দারুণ নেশা ছিল মৃণাল সেনের। তিনিই শ্রীলাকে ইনট্রোডিউস করেছিলেন। ও ভারতীয় সিনেমায় ঝড় তুলেছিল। দেশের কয়েকজন সেরা পরিচালক ও অভিনেতা ওর গুণমুগ্ধ ছিলেন। কালো, তীব্র সুন্দর অভিনেত্রী যার শক্তি ছিল তার চোখ এবং বিরক্তি। আমার সৌভাগ্য যে আমি কিছু সময় ওর সহকর্মী ছিলাম আর পরিচালক ও বন্ধুও ছিলাম।

শেষবার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। তবে পর্দার বাইরে শেষ বার তাকে দেখা যায় গত বছর আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে।

১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি শ্রীলার। তখন শ্রীলা ১৬ বছরের কিশোরী। নাটকের মহড়ায় শ্রীলার অভিনয় দেখেই তাকে নিজের সিনেমার অভিনেত্রী হিসাবে বেছেছিলেন মৃণাল। তার পর ‘এক দিন প্রতি দিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’-এর মতো উল্লেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল, নাসিউরুদ্দিন শাহের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।

শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় কাজ করেছেন ‘আরহণ’, ‘মান্ডির’ মতো সিনেমায়। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ সিনেমায় ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রীলা। পর্দার পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়েও সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘নহবত’ নাটকে শ্রীলার অভিনয় নজর কেড়েছিল। বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাতেও কিন্তু শ্রীলার অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।
অঞ্জন চৌধুরির ‘পূজা’ সিনেমায় শ্রীলার অভিনয় মনে ধরেছিল দর্শকের। তেমনি হরনাথ চক্রবর্তীর ‘প্রতিবাদ’ সিনেমাতেও শ্রীলা সমান নজর কেড়েছেন। এই দুটি সিনেমার হাত ধরেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ইদানীং কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলা। খানিকটা অসুস্থতার কারণেই পর্দায় শ্রীলাকে বিশেষ দেখা যাচ্ছিল না।

শ্রীলার সহকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ, দক্ষ এবং পেশাদার অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও পর্দায় তাকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। তবে এ সব নিয়ে অবশ্য কখনোই তেমন সরব হননি শ্রীলা। বরাবরই শান্ত, স্থির ছিলেন। কম কথা বলতেন।