নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবৈধ কর্তৃপক্ষ কখনোই বৈধ কাজ করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার কখনো বৈধ পথে কোনো কিছু করতে পারে না। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাকে অবৈধ পন্থায় যেতে হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার পথরেখা অনুসরণ করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের কারাগারগুলো এখন ভয়াবহ নিপীড়ন-নির্যাতনের আয়নাঘর। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর রাখা হয় কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে। দিনরাত তাদের লকআপে রাখা হয়। ডাকাতি ও খুনের অপরাধীরা কারাগারে যে অধিকার ভোগ করে সেটুকুও বিএনপি নেতাকর্মীদের নেই।
তিনি বলেন, পুলিশের সর্বগ্রাসী গ্রেফতারি অভিযানের পরও সরকার শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না বলেই আনসার বাহিনীকেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আনসার বাহিনীকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়াকে নজিরবিহীন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মধ্যে চূড়ান্তভাবে বন্দি করা হলো। বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই আওয়ামী বন্দিশালা বানানো হলো। আওয়ামী লীগ ক্ষয়িষ্ণু ও দুর্দশাগ্রস্ত একটি দল বলেই এখন আনসারকেও গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের কর্মসূচি সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে যে এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত। তা সত্ত্বেও আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তারা জনমনে নানা আতঙ্কের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রমাগত হুমকির মাধ্যমে। কয়েকদিন ধরেই চলছে নির্বিচারে গ্রেফতার। ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী জেলাগুলোতে নেতাকর্মীরা বাড়িঘর, পরিবারছাড়া হয়ে দিগ্বিদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের যেখানেই পাচ্ছে সেখানেই নির্বিচারে আটক করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন দমন করতেই সরকার গ্রেফতার ও সাজা দেওয়ার পথ অবলম্বন করেছে।
তিনি বলেন, গায়েবি মামলায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়। এরপর গ্রেফতারদের ওই অজ্ঞাতনামা আসামির জায়গায় নাম বসিয়ে দেওয়া হয়। গায়েবি ককটেল আর গায়েবি বিস্ফোরক ধারার গায়েবি মামলায় অধিকাংশ গ্রেফতারের নামে অভিযোগ আনা হয়। সরকার এখন গায়েবি সাক্ষ্যও চালু করেছে। বানানো সাক্ষীকে গায়েবি সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ সাক্ষী দিতে শেখানো কথা না বললে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশের সদর দফতর থেকে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, পুলিশ প্রশাসন এখন জনগণের প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিতে নব্য বাকশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দেশটাকে চিরতরে আওয়ামী কর্তৃত্বের অধীনে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের উইং হিসেবে তৈরি করেছেন সরকারপ্রধান। সেই কারণে তারা ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে সমাধিস্থ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন একটি দৈনিকে যথার্থই বলেছেন, ‘যারা অবৈধ কাজ করছে তাদের সবধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খুলনায় বলেছেন, সংবিধান মেনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। তার এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কার্বন কপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও যে শেখ হাসিনা বিচারক, পুলিশ ও প্রশাসনের মতো আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন আহসান হাবিবের বক্তব্যে তাদের মুখোশ খুলে পড়েছে। এই নির্বাচন কমিশন জনগণের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বাকশালী প্রতিষ্ঠান, তার বক্তব্যে একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে। এ কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই হবে না, এখানে ভোটের নামে ‘নির্বাচনবাজী’ হবে। সেই কারণেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের প্রচণ্ড অনাস্থা। এরা জনগণের নজরদারি নস্যাৎ করে আরেকটি নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তিরই বন্দোবস্ত করছে।
তিনি বলেন, বাস্তবিকই বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখন ভয়াবহ নিপীড়ণ-নির্যাতনের আয়নাঘর। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানের পর রাখা হয় কারাগারের দমবন্ধ করা সেলে। দিনরাত তাদের লকআপে রাখা হয়। ডাকাতি ও খুনের ভয়ঙ্কর অপরাধীরা কারাভ্যন্তরে যে অধিকারটুকু ভোগ করে সেটুকুও বিএনপি নেতাকর্মীদের নেই। কেরানীগঞ্জ কারাগারে শাপলা বিল্ডিংয়ে বেশিরভাগ বিএনপি নেতাকর্মীদের দিনরাত আটকিয়ে রাখা হয়। পাশাপাশি অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয় যেগুলো গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য। নিজের টাকা দিয়ে খাবার কেনারও নিয়ম থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সেই অধিকারটুকুও দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক শোষণ-বঞ্চনা করা হচ্ছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল বিপজ্জনক জঙ্গি অপরাধীদের জন্য। সেখানেই বিএনপির নেতাকর্মী, ইউনিভার্সিটি, কলেজের ছাত্রদের গাদাগাদি করে রাখা হয়। এমনিতেই পিসিতে (প্রিজনার্স ক্যান্টিন) একটা খাদ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৫/৬ শ’ গুণ বেশি। বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে শোষণ-বঞ্চনা করা হচ্ছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল বিপজ্জনক জঙ্গি অপরাধীদের জন্য। সেখানেই বিএনপি’র নেতাকর্মী, ইউনিভার্সিটি, কলেজের ছাত্রদের গাদাগাদি করে রাখা হয়। হিটলালের গ্যাস চেম্বার আর এ সরকারের কারাগারের গ্যাস চেম্বারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) নিয়ে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আইজি প্রিজন হচ্ছেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক বিশ্বস্ত সহচর। তিনি সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গতিবিধি নজরদারি করেন, সেলে সার্বক্ষণিক আটকিয়ে রাখার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী রাত শেষে সকালে লকআপ খুলে দেওয়া হয়। দিনের বেলায় কারাগারের প্রাঙ্গণে বিচরণের বিধান আছে, অথচ বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাগ্যে সেই সুযোগটুকু এখন নেই।
এসময় তিনি সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশিদ হারুন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী ও মৎস্যজীবী দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রনি আকতারকে সোমবার গভীর রাতে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন,সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল ইসলাম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।