নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনৈতিক চর্চা শিক্ষা ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করে। যার ফলে শিক্ষার মান খারাপ হয় এবং ঝরে পড়ার হার বাড়ে। সেই সাথে অবৈধ আয়ে পরিচালিত রাজনীতি স্বাভাবিকভাবেই চাঁদাবাজি ও শক্তির প্রদর্শনকে উৎসাহিত করে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পর্যটন ভবনে আয়োজিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মূল নিবন্ধ উপস্থাপনকালে এ তিনি এ কথা বলেন।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জুলাইয়ের অস্থিরতার পর দেশের প্রধান জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস করা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও আমরা এখনও বাধ্য হচ্ছি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই উন্নয়নকে প্রধান করে দেখতে– এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়েকটি সূচক উন্নত হলেই সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত হয় না। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি ছাড়া সংস্কার বাস্তব ফল বয়ে আনতে পারে না।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, রাজনীতিতে অবৈধ ভাড়া বা সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা (রেন্ট-সিকিং) শুধু আইন দিয়ে দমন করা যায় না। কোনো দেশ এত দরিদ্র নয় যে তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সম্পদের অভাব মূল সমস্যা নয়—আমাদের ঘাটতি সদিচ্ছার।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে অবৈধ ভাড়া বা সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা শুধু আইন করে বন্ধ করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
ড. মাহমুদের ভাষায়, কোনো দেশই এত গরিব নয় যে তার মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। সমস্যাটা সম্পদের অভাবে নয়, সমস্যাটা হলো সদিচ্ছার অভাব।
টেকসই উন্নয়ন ও ন্যায্য অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক আন্তরিকতা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং সুশাসনের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ১৯৯৬ সালে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতার চেয়ে এখনকার (অন্তর্বর্তী সরকার) দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা অনেক খারাপ।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তখন প্রশাসনিক কাজ করার ক্ষেত্রে সচিবরা সব কাজ করে ফেলতো। কোনো কিছু দেখিয়ে দিতে হতো না। আমার সময়ে আকবর আলী খান, সাদাত হোসেনরা সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিল। তারা অনেক দক্ষ ছিল। এখন কাজ করার অভিজ্ঞতা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। এখন সবকিছু নিজেকে পড়ে দেখতে হয়, পরীক্ষা করতে হয়।
দেশে গণতান্ত্রিক উন্নয়নের বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, শুধুমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতে পারে না। এখানে রাজনৈতিক অর্থনীতি করতে হবে। রাজনীতি যদি জনকল্যাণমুখী না হয়ে সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য হয়, তাহলে যুব সমাজ ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতিকে বেছে নেবে। এছাড়া সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একটা সুবিধাভোগী বলয় তৈরি করে জনকল্যাণমুখী নীতি নির্ধারণে বাঁধা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পৌঁছানোর লক্ষ্য ছিল তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া। এক, কার্যকর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো। দুই, সেই গণতন্ত্র ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং সর্বশেষ গুণগত উন্নয়ন, যা ন্যায্য সমাজ, বৈষম্য ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে এখন সীমিত প্রত্যাশা হলো কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখজনক বিষয় হলো, স্বাধীনতার এতদিন পর কার্যকর বন্দোবস্ত সীমিত হওয়াটা দুঃখজনক। তবুও নতুন দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের প্রচেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা বলেন, আগে বিবিএসের উৎপাদিত পরিসংখ্যান মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে করতে হত, ফলে নানা ধরনের সন্দেহ আছে। জিডিপি ভালো হলেই জনকল্যাণ হবে, এমন কোনো কথা নেই। বিবিএসের সংস্কার নিয়ে আমরা ভাবছি। তাদেরকে স্বাধীন করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? বিবিএসের স্বাধীনতা থেকেও তাদের উৎপাদিত তথ্যের স্বচ্ছতা জরুরি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যায্য ও বৈষম্যবিরোধী অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তা থাকতে হবে বলে মনে করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















