নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অবিলম্বে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে চাইবে না সরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চার্জ গঠন করা হলে ভারত সরকারের কাছে আপাতত তাকে ফেরত চাওয়া হবে না বলেও জানান বর্তমান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, সাজা ঘোষণা হলে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে ফেরাত আনার চেষ্টা করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকতে পারেন না।
উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা (রাজনৈতিক) মেকানিজম তৈরি করেছে, তারা নিজ স্বার্থে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অল্প সময়ের মধ্যে দেশে যে তিনি বা তার দল জায়গা পাবে না, সেই কথাও নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা হবে না, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না।
ড. ইউনূসের মতে আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না, কারণ তারা ‘রাজনৈতিক সরকার নয়।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্যই দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না।
ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের সময় জনগণের স্বাধীনতা ছিল না। রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র তারা দখল করে রেখেছিল। নিজেদের স্বার্থে তারা সবকিছু করেছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি-না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা জানান, বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’র ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই জানিয়ে ড. ইউনূস জানান, তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। বলেন, ‘আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ ঘটেছে এবং ‘খুব অল্প সংখ্যক’ প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাদেরকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘(আগস্টে হামলার শিকার) অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হচ্ছে।’
‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত,’ যোগ করেন তিনি।