Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমরা দাবি করছি, নির্বাচন চাই। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। দেশে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেই পরিবেশ সামনের দিকে দেশকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির সাংস্কৃতিক পার্টির আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি। তবে তার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, ভুয়া মামলা প্রত্যাহার, সভা-সমাবেশের অধিকারসহ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার চায় জাতীয় পার্টি। হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে। শাস্তি দেওয়ার নামে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে গণঅভ্যুত্থানের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

জি এম কাদের বলেন, যেভাবে হানাহানি ঘটছে তাতে আগামীতে দেশ আবারও অন্ধকারে যেতে পারে। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসার হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানান তিনি।

জিএম কাদের বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ করছি সারা দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক, আরেকটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে তারা দেশ প্রেমিক। এদের সংখ্যা কম নয়, অর্ধেকের কাছাকাছি হতে পারে। বাকি যারা নির্যাতিত হননি, তারা দেশ প্রেমিক নন, আর যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা দেশদ্রোহী।

তিনি বলেন, দেশ প্রেমিকদের ফ্রি হ্যান্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে– যেকোনো ধরনের মিথ্যা মামলা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের গালাগালি করা, বাড়িঘরে আক্রমণ ও লুটতরাজ করা, তাদের (যারা নির্যাতিত হননি) সহায়-সম্পত্তি দখল করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, মিল ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া, পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া, তাদের কোনোরকম কাজ করতে না দেওয়া।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাদের অনেকে সৎ, দেশের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের কাজের মধ্যে থাকছে। মনে হচ্ছে তারা একরকম কাজ করছেন, হচ্ছে আরেক রকম।

জিএম কাদের বলেন, পুলিশ, প্রশাসন এবং জুডিশিয়ারি তারা যেসব কাজ করছে, তা মনে হচ্ছে বাধ্য হয়ে করছে। কাজেই দেশকে শুধু দু’ভাগে ভাগ করা হয়নি, এক ভাগকে আরেক ভাগের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘাত পূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাতময় আবহাওয়ায় অর্ধেক লোক এক পাশে আরেক ভাগ অপর পাশে। এই বিভাজন আপনি যদি ধরে রাখতে চান আপনি ধরে রাখেন। এটা দুই-চার দিন-দশ দিন এক বছর। এটাতে দেশে কখনোই স্থিতিময় পরিবেশ আসবে না। যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতিহিংসা আমাদের শেষ করতে হবে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শেষ করবেন আর বাকি অর্ধেক নিয়ে দেশ চালাবেন এটা কি সম্ভব হবে? যারা এই দিবা স্বপ্ন দেখছেন তাদের আমি বলব সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন কোথায় কি হয়। আমাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দিন, সমস্ত বিষয়াবলী প্রেসে আসতে দিন।

আগামী নির্বাচনে লেভেল ফিল্ড তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে গেছি, কাল বক্তব্য শুনে মনে হলো আপনারা সংস্কার করতে পারছেন না। সংস্কার করতে গেলে এটা পার্লামেন্টে করতে হবে এবং পার্লামেন্টে সব দলের সহযোগিতা ছাড়া এটাকে পাস করানো সম্ভব হবে না।

ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না দাবি করে জিএম কাদের বলেন, ২৪’ এর আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতা কি চেয়েছিল? শেখ হাসিনার পতন এবং একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। তার মাধ্যমে সরকার গঠন ও একটি শাসন ব্যবস্থা। যেখানে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে যাতে দানব তৈরি করা না হয়, সেরকম একটি শাসন ব্যবস্থা। এটাই ছিল তাদের চাওয়া।

তিনি বলেন, ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, আমরা যুদ্ধ করেছি এটা মুসলমান দেশ, ইসলাম কায়েম করব। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। সেখানে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশি তারা কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ধর্মকর্ম পালনে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক কিন্তু একেবারে ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো, ইসলামী রুট হিসেবে চালানোর জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের সংস্কারের জন্য প্রয়োজন হয় জাতীয় ঐক্যের। জাতিকে বিভাজিত করে বড় কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। বিচারের নামে কোনো প্রহসন চাই না। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন, একটি হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে পারেন। ১০/১৫ বছর পর যখন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন আবার ঠিকই সেই মামলা সামনে চলে আসবে। এই সময় যারা হত্যা মামলার কথা বলছেন, এই সময়ের আগের এবং পরের সকল হত্যা মামলার সঠিক বিচার হবে। তাই, তাড়াহুড়া করার কোনো দরকার নাই। শহীদদের আত্মত্যাগকে মিথ্যা মামলা বানিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। শহীদদের হত্যা মামলা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে ও সামাজিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে শহীদগণ আত্মত্যাগ করেছে, সে উদ্দেশ্য সফল হলেই শহীদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামে এখনো মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দু’জন এখনো জেলে আছে। মাঠেঘাটে সভাসমাশে করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে আমরা সেল্ফ সেন্সরশীপ দেখতে পাচ্ছি। যারা শেখ হাসিনার দেওয়া মিথ্যা মামলায় পলাতক ছিল তাদেরকেও এখন হত্যা মামলায় আমার সাথে আসামি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা বাদী প্রত্যাহার করেছে, কিন্তু একটি দলীয় আইনজীবীরা চাপ সৃষ্টি করেছে জিএম কাদের এর নাম দিতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ বৈষম্য মুক্তির যুদ্ধ নামে পরিচিত। এটা বাঙালির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা আবারো বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এবছর জুলাই-আগস্ট মাসে আমাদের সন্তানরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েছে। তাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম। যারা আহত হয়েছে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানচ্ছি। এই আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান কোনদিনই অস্বীকার করা যাবে না, যে জনতা ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল তাদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না। দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। একই সাথে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতাকর্মী নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনকে সফল করেছে। তাদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না।

তিনি বলেন, একাত্তরকে বাদ দিয়ে কোনো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারবেন না। ২০২৪ সালে বাঙালি জাতি যখন আবার নিগৃহীত হলো, নিষ্পেষিত হলো তখন ছাত্রদের নেতৃত্বে বাঙালি আবার রুখে দাঁড়ালো। তখন ছাত্ররা চেয়েছিল শেখ হাসিনার পতন ও অবাধ-সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার গঠন। সেই সরকারের জন্য একটি শাসন ব্যবস্থা। যে শাসন ব্যবস্থায় এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে না এবং তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দানবে পরিণত করবে না।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো- চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) আনিসুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : জিএম কাদের

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমরা দাবি করছি, নির্বাচন চাই। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। দেশে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেই পরিবেশ সামনের দিকে দেশকে একটা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির সাংস্কৃতিক পার্টির আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি। তবে তার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, ভুয়া মামলা প্রত্যাহার, সভা-সমাবেশের অধিকারসহ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার চায় জাতীয় পার্টি। হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে। শাস্তি দেওয়ার নামে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে গণঅভ্যুত্থানের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

জি এম কাদের বলেন, যেভাবে হানাহানি ঘটছে তাতে আগামীতে দেশ আবারও অন্ধকারে যেতে পারে। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে আসার হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানান তিনি।

জিএম কাদের বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ করছি সারা দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশপ্রেমিক, আরেকটি ভাগকে বলা হচ্ছে দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে তারা দেশ প্রেমিক। এদের সংখ্যা কম নয়, অর্ধেকের কাছাকাছি হতে পারে। বাকি যারা নির্যাতিত হননি, তারা দেশ প্রেমিক নন, আর যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা দেশদ্রোহী।

তিনি বলেন, দেশ প্রেমিকদের ফ্রি হ্যান্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে– যেকোনো ধরনের মিথ্যা মামলা, ব্যক্তিগতভাবে তাদের গালাগালি করা, বাড়িঘরে আক্রমণ ও লুটতরাজ করা, তাদের (যারা নির্যাতিত হননি) সহায়-সম্পত্তি দখল করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, মিল ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া, পার্টি অফিসে আগুন দেওয়া, তাদের কোনোরকম কাজ করতে না দেওয়া।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাদের অনেকে সৎ, দেশের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের কাজের মধ্যে থাকছে। মনে হচ্ছে তারা একরকম কাজ করছেন, হচ্ছে আরেক রকম।

জিএম কাদের বলেন, পুলিশ, প্রশাসন এবং জুডিশিয়ারি তারা যেসব কাজ করছে, তা মনে হচ্ছে বাধ্য হয়ে করছে। কাজেই দেশকে শুধু দু’ভাগে ভাগ করা হয়নি, এক ভাগকে আরেক ভাগের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংঘাত পূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। সংঘাতময় আবহাওয়ায় অর্ধেক লোক এক পাশে আরেক ভাগ অপর পাশে। এই বিভাজন আপনি যদি ধরে রাখতে চান আপনি ধরে রাখেন। এটা দুই-চার দিন-দশ দিন এক বছর। এটাতে দেশে কখনোই স্থিতিময় পরিবেশ আসবে না। যেকোনো সময় স্থিতিশীলতা ভেঙে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতিহিংসা আমাদের শেষ করতে হবে, অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে শেষ করবেন আর বাকি অর্ধেক নিয়ে দেশ চালাবেন এটা কি সম্ভব হবে? যারা এই দিবা স্বপ্ন দেখছেন তাদের আমি বলব সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন কোথায় কি হয়। আমাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দিন, সমস্ত বিষয়াবলী প্রেসে আসতে দিন।

আগামী নির্বাচনে লেভেল ফিল্ড তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে না দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে গেছি, কাল বক্তব্য শুনে মনে হলো আপনারা সংস্কার করতে পারছেন না। সংস্কার করতে গেলে এটা পার্লামেন্টে করতে হবে এবং পার্লামেন্টে সব দলের সহযোগিতা ছাড়া এটাকে পাস করানো সম্ভব হবে না।

ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না দাবি করে জিএম কাদের বলেন, ২৪’ এর আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতা কি চেয়েছিল? শেখ হাসিনার পতন এবং একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। তার মাধ্যমে সরকার গঠন ও একটি শাসন ব্যবস্থা। যেখানে এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে যাতে দানব তৈরি করা না হয়, সেরকম একটি শাসন ব্যবস্থা। এটাই ছিল তাদের চাওয়া।

তিনি বলেন, ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, আমরা যুদ্ধ করেছি এটা মুসলমান দেশ, ইসলাম কায়েম করব। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। সেখানে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশি তারা কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। ধর্মকর্ম পালনে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আন্তরিক কিন্তু একেবারে ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে জীবন চালানো, ইসলামী রুট হিসেবে চালানোর জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

তিনি আরো বলেন, বড় ধরনের সংস্কারের জন্য প্রয়োজন হয় জাতীয় ঐক্যের। জাতিকে বিভাজিত করে বড় কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। বিচারের নামে কোনো প্রহসন চাই না। আজকে আপনি ক্ষমতায় আছেন, একটি হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে পারেন। ১০/১৫ বছর পর যখন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন আবার ঠিকই সেই মামলা সামনে চলে আসবে। এই সময় যারা হত্যা মামলার কথা বলছেন, এই সময়ের আগের এবং পরের সকল হত্যা মামলার সঠিক বিচার হবে। তাই, তাড়াহুড়া করার কোনো দরকার নাই। শহীদদের আত্মত্যাগকে মিথ্যা মামলা বানিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। শহীদদের হত্যা মামলা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে ও সামাজিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে শহীদগণ আত্মত্যাগ করেছে, সে উদ্দেশ্য সফল হলেই শহীদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামে এখনো মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দু’জন এখনো জেলে আছে। মাঠেঘাটে সভাসমাশে করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে আমরা সেল্ফ সেন্সরশীপ দেখতে পাচ্ছি। যারা শেখ হাসিনার দেওয়া মিথ্যা মামলায় পলাতক ছিল তাদেরকেও এখন হত্যা মামলায় আমার সাথে আসামি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা বাদী প্রত্যাহার করেছে, কিন্তু একটি দলীয় আইনজীবীরা চাপ সৃষ্টি করেছে জিএম কাদের এর নাম দিতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ বৈষম্য মুক্তির যুদ্ধ নামে পরিচিত। এটা বাঙালির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা আবারো বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এবছর জুলাই-আগস্ট মাসে আমাদের সন্তানরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে বিজয়ী হয়েছে। তাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম। যারা আহত হয়েছে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানচ্ছি। এই আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান কোনদিনই অস্বীকার করা যাবে না, যে জনতা ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল তাদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না। দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। একই সাথে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতাকর্মী নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনকে সফল করেছে। তাদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না।

তিনি বলেন, একাত্তরকে বাদ দিয়ে কোনো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারবেন না। ২০২৪ সালে বাঙালি জাতি যখন আবার নিগৃহীত হলো, নিষ্পেষিত হলো তখন ছাত্রদের নেতৃত্বে বাঙালি আবার রুখে দাঁড়ালো। তখন ছাত্ররা চেয়েছিল শেখ হাসিনার পতন ও অবাধ-সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার গঠন। সেই সরকারের জন্য একটি শাসন ব্যবস্থা। যে শাসন ব্যবস্থায় এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকবে না এবং তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দানবে পরিণত করবে না।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো- চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, মেজর (অব.) আনিসুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।