Dhaka বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবশেষে প্রকাশ্যে দেখা মিলল বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার খুনি কানাডায় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে অবশেষে প্রকাশ্যে দেখা গেছে দেশটির একটি টেলিভিশনে। তাকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি।

টেলিভিশনটির অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় শনিবার (বাংলাদেশ সময়) সকাল ৮টায়। প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে দেখানো হয়। এছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে তাকে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দল।

প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর সেখানে থেকে যাওয়া এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার শক্তিশালী বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।

নূর চৌধুরী কোথায় আছেন, কী করছেন, এ নিয়ে জানা থাকলেও তথ্য আকারে সামনে আসেনি তেমন। তার অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডিয়ান সাধারণ জনগণ তাদের পাশের বাসায় থাকা ভয়ানক এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে।

প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে এক ঝলক দেখানো হয়। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় ধরতে পারেন প্রতিবেদক। কিন্তু কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে কেটে পড়েন তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দলটি।

কানাডার টরোন্টো থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এলাকা ইটোবিকো। সেখানে একটি কনডোমিনিয়ামের তিনতলায় থাকেন ৭০ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধু হত্যার এই খুনি। প্রতিদিন বিকেলে ব্যালকনিতে আসেন। কানাডায় মুক্তভাবে জীবনযাপন করলেও প্রথমবারের মতো তার দেখা পাওয়া গেল ক্যামেরায়।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।

বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তিনি পালিয়ে প্রথমে আমেরিকা, পরে কানাডায় ঢোকেন দর্শনার্থী হিসেবে। এরপর ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয়। আপিল করেও হেরে যান নূর চৌধুরী। ২০০৯ সালে কানাডা থেকে নূরকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কানাডিয়ান সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে— এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে সরকারের কাছে ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্ট’র আবেদন করেন নূর চৌধুরী। যেহেতু কানাডা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না, সেহেতু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে মুক্ত জীবনযাপন করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে সচিবালয়ে আসেন কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস। সাক্ষাতের পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে আমাকে হাইকমিশনার জানিয়েছেন।

আমি তাদের অনুরোধ করেছি, বিকল্প পন্থা বের করা যায় কিনা। তাকে বলেছি, একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি এও বলেন, ‘আমি তারপরেও তাকে অনুরোধ করেছি যে, আমাদের আইন এবং যে সব রুলস আছে, আমরা যদি সেগুলো এক্সামিন করি তাহলে কানাডা যাতে ফিরিয়ে দিতে পারে এমন কোনও পন্থা খুঁজে পাবো আমরা।’ এটাও বলেছি, ‘তাকে ওখানে রাখাটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নির্বাচিত সরকার না হলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না : আমীর খসরু

অবশেষে প্রকাশ্যে দেখা মিলল বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর

প্রকাশের সময় : ০১:২০:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার খুনি কানাডায় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে অবশেষে প্রকাশ্যে দেখা গেছে দেশটির একটি টেলিভিশনে। তাকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি।

টেলিভিশনটির অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় শনিবার (বাংলাদেশ সময়) সকাল ৮টায়। প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে দেখানো হয়। এছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে তাকে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দল।

প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর সেখানে থেকে যাওয়া এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার শক্তিশালী বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।

নূর চৌধুরী কোথায় আছেন, কী করছেন, এ নিয়ে জানা থাকলেও তথ্য আকারে সামনে আসেনি তেমন। তার অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডিয়ান সাধারণ জনগণ তাদের পাশের বাসায় থাকা ভয়ানক এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে।

প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে এক ঝলক দেখানো হয়। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় ধরতে পারেন প্রতিবেদক। কিন্তু কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে কেটে পড়েন তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দলটি।

কানাডার টরোন্টো থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এলাকা ইটোবিকো। সেখানে একটি কনডোমিনিয়ামের তিনতলায় থাকেন ৭০ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধু হত্যার এই খুনি। প্রতিদিন বিকেলে ব্যালকনিতে আসেন। কানাডায় মুক্তভাবে জীবনযাপন করলেও প্রথমবারের মতো তার দেখা পাওয়া গেল ক্যামেরায়।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।

বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তিনি পালিয়ে প্রথমে আমেরিকা, পরে কানাডায় ঢোকেন দর্শনার্থী হিসেবে। এরপর ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয়। আপিল করেও হেরে যান নূর চৌধুরী। ২০০৯ সালে কানাডা থেকে নূরকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কানাডিয়ান সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে— এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে সরকারের কাছে ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্ট’র আবেদন করেন নূর চৌধুরী। যেহেতু কানাডা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না, সেহেতু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে মুক্ত জীবনযাপন করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে সচিবালয়ে আসেন কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস। সাক্ষাতের পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে আমাকে হাইকমিশনার জানিয়েছেন।

আমি তাদের অনুরোধ করেছি, বিকল্প পন্থা বের করা যায় কিনা। তাকে বলেছি, একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি এও বলেন, ‘আমি তারপরেও তাকে অনুরোধ করেছি যে, আমাদের আইন এবং যে সব রুলস আছে, আমরা যদি সেগুলো এক্সামিন করি তাহলে কানাডা যাতে ফিরিয়ে দিতে পারে এমন কোনও পন্থা খুঁজে পাবো আমরা।’ এটাও বলেছি, ‘তাকে ওখানে রাখাটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’