Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অবরোধ ছত্রভঙ্গ করে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দুপুরে তাদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ রেললাইন অবরোধ করেন রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।

জানা যায়, সরকারি গেজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রেলপথমন্ত্রী, রেলওয়ে সচিব ও রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়ানি। তাই অস্থায়ী শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দীর্ঘ বিলম্বের পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের রংপুর এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্লাটফর্ম ছেড়েছে।

মাসুদ সারওয়ার বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। আন্দোলনের কারণে কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিলোনা। সন্মানিত যাত্রীরা এখন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমাদের সবগুলো ট্রেন ছেড়ে যাবে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্ব হয়েছে। মাত্র রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। এখন একতা এক্সপ্রেস ছাড়বে, ট্রেনটি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। এরপর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রাজশাহী কমিউটার, চট্টলা এক্সপ্রেস এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এর আগে সকাল থেকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ বন্ধ এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগে রেললাইন অবরোধ করেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে কমলাপুরে আটকা পড়ে অন্তত ৮টি ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।

আন্দোলনকারীরা বলেন, বিভিন্ন সময় অন্তত ৭ হাজার শ্রমিককে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। ৩ বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১৫ বছরেও স্থায়ী হননি অনেকের। উল্টো আউটসোর্সিংয়ের শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৫ মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়।

শ্রমিকেরা বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক হলেও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। ৪ বছর ধরে আন্দোলন করেও সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এদিকে, শ্রমিকদের আন্দোলনে কোনো ট্রেন ঢাকায় ঢুকতে বা ঢাকা থেকে বেরোতে পারেনি। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। শিডিউল বিপর্যয়ে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে টাকাও ফেরত দেয়া হয়।

রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দেলোয়ার বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য গত আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু গত মাসে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমাদের বলে দিয়েছেন- চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা তারা করতে পারবে না। সরকার যদি চায়, তাহলে সরকার নিতে পারবে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারব না।

এর আগে, রেললাইন অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জনভোগান্তি চরমে উঠার পর রেল যোগাযোগ সচল করতে উদ্যোগী হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মালিবাগে রেলগেট এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেল পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় থানা পুলিশ। কিন্তু কথা বলেও রেললাইন থেকে তাদের সরাতে না পারায় লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ, পরে ধাওয়া দিয়ে পুরো মালিবাগ রেললাইন ফাঁকা করা হয়।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের এসপি বলেন, শ্রমিকদের রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মানুষ যাত্রী সাধারণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক করে বোঝানোর পর তাদের রেললাইন থেকে সরানো যায়নি। বাধ্য হয়ে পুলিশ রেলপথে চলাচল স্বাভাবিক করতে লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দেয়। এখন মালিবাগ এলাকা ফাঁকা। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। একটু পরেই রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, অবরোধের সময় রেললাইন থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া রেলের নিরাপত্তার স্বার্থে মালিবাগ-খিলগাঁও পর্যন্ত রেললাইনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

তাৎক্ষনিকভাবে আটকদের পরিচয় জানা যায়নি।

এর আগে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। এরপরই রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রেললাইন ছেড়ে যাবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

অবরোধ ছত্রভঙ্গ করে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু

প্রকাশের সময় : ০৩:৩২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রেলের অস্থায়ী শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দুপুরে তাদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ রেললাইন অবরোধ করেন রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।

জানা যায়, সরকারি গেজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রেলপথমন্ত্রী, রেলওয়ে সচিব ও রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়ানি। তাই অস্থায়ী শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, দীর্ঘ বিলম্বের পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের রংপুর এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্লাটফর্ম ছেড়েছে।

মাসুদ সারওয়ার বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। আন্দোলনের কারণে কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিলোনা। সন্মানিত যাত্রীরা এখন ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমাদের সবগুলো ট্রেন ছেড়ে যাবে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্ব হয়েছে। মাত্র রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে। এখন একতা এক্সপ্রেস ছাড়বে, ট্রেনটি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। এরপর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রাজশাহী কমিউটার, চট্টলা এক্সপ্রেস এবং মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এর আগে সকাল থেকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ বন্ধ এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগে রেললাইন অবরোধ করেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে কমলাপুরে আটকা পড়ে অন্তত ৮টি ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।

আন্দোলনকারীরা বলেন, বিভিন্ন সময় অন্তত ৭ হাজার শ্রমিককে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় রেলওয়ে। ৩ বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা থাকলেও ১০ থেকে ১৫ বছরেও স্থায়ী হননি অনেকের। উল্টো আউটসোর্সিংয়ের শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৫ মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়।

শ্রমিকেরা বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক হলেও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। ৪ বছর ধরে আন্দোলন করেও সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এদিকে, শ্রমিকদের আন্দোলনে কোনো ট্রেন ঢাকায় ঢুকতে বা ঢাকা থেকে বেরোতে পারেনি। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। শিডিউল বিপর্যয়ে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে টাকাও ফেরত দেয়া হয়।

রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দেলোয়ার বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য গত আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু গত মাসে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমাদের বলে দিয়েছেন- চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা তারা করতে পারবে না। সরকার যদি চায়, তাহলে সরকার নিতে পারবে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারব না।

এর আগে, রেললাইন অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জনভোগান্তি চরমে উঠার পর রেল যোগাযোগ সচল করতে উদ্যোগী হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মালিবাগে রেলগেট এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেল পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় থানা পুলিশ। কিন্তু কথা বলেও রেললাইন থেকে তাদের সরাতে না পারায় লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ, পরে ধাওয়া দিয়ে পুরো মালিবাগ রেললাইন ফাঁকা করা হয়।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের এসপি বলেন, শ্রমিকদের রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মানুষ যাত্রী সাধারণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক করে বোঝানোর পর তাদের রেললাইন থেকে সরানো যায়নি। বাধ্য হয়ে পুলিশ রেলপথে চলাচল স্বাভাবিক করতে লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দেয়। এখন মালিবাগ এলাকা ফাঁকা। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। একটু পরেই রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, অবরোধের সময় রেললাইন থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া রেলের নিরাপত্তার স্বার্থে মালিবাগ-খিলগাঁও পর্যন্ত রেললাইনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

তাৎক্ষনিকভাবে আটকদের পরিচয় জানা যায়নি।

এর আগে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। এরপরই রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রেললাইন ছেড়ে যাবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।