নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ দিনের কর্মসূচি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী- আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার (২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর) টানা তিনদিন ঢাকাসহ সারাদেশে গণসংযোগ এবং রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের পক্ষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, এক দফার দাবিতে নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো একই কর্মসূচি পালন করবে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে এবং দুর্নীতি, মহাদুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রতিবাদে বিএনপির চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।
তিনি জানান, অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে, খালেদা জিয়াসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
এর আগে দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে বলা হয়-
১. আপনারা আগামী ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন করুন। নির্বাচনের নামে ৭ জানুয়ারি’র ‘বানর খেলা’র আসরে অংশ নেবেন না। আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। এটি আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
২. নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি কাকে এমপি ঘোষণা করবে গনগণভবনে সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং, ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনে’ ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মকর্তা কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালনে বিরত থাকুন।
৩. বর্তমান অবৈধ সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন।
৪. ব্যাংকগুলো এই অবৈধ সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং, ব্যাংকে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কি না সেটি ভাবুন।
৫. মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মী আপনারা আজ থেকে আদালতে মামলায় হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের প্রতি সুবিচার করার আদালতের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদী সরকার কেড়ে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। এর আগে ১১ দফায় ২১ দিন অবরোধ ও চার দফায় ৫ দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করতে না পারার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ, তৃতীয় দফায় ৮ ও ৯ নভেম্বর, চতুর্থ দফায় ১২ ও ১৩ নভেম্বর, পঞ্চম দফায় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর, ষষ্ঠ দফায় ২২ ও ২৩ নভেম্বর, সপ্তম দফায় ২৬ ও ২৭ নভেম্বর, অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর, নবম দফায় ৩ ও ৪ ডিসেম্বর, দশম দফায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর এবং একাদশ দফায় ১২ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা অবরোধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী এবং ১৮ ডিসেম্বর সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি।