Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপহরণের পর হত্যা, অপহরণকারীকে পুলিশ থেকে ছিনিয়ে পিটিয়ে মারল জনতা

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণের ১৪ দিন পর স্কুলছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) নামের এক যুবকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতা উমংচিং মারমা নামে এক অপহরণকারীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হৃদয় উপজেলার ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে।

রাউজান থানার ওসি আবু উল্লাহ আল হারুন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অপহরণ ঘটনায় গত কয়েকদিন আগে আমরা দুই অপহরণকারীকে আটক করে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত রোববার এ ঘটনায় আমরা উমংচিং মারমা নামে আরও এক জনকে আটক করি। তার দেওয়া তথ্যমতে সোমবার ভোরে কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যায়।

আবু উল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, অভিযানে তার দেখানো বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করি। লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক নারীসহ স্থানীয়রা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এছাড়া তারা পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছে। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি বলেন, শিবলী সাদিক হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কদলপুরে একটি মুরগির খামারে চাকরি করতো। গত ২৮ আগস্ট রাতে ওই মুরগির খামার থেকে দিবাগত রাতে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা তার পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরিবার অপহরণকারীদের সাথে কথা বলে ২ লাখ টাকায় রাজি হয়। কয়েকদিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে দুইজন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। অপহরণকারীরা ছেলেকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতো সেখানে সবাই ছিলেন চাকমা যুবক। মুরগির ফার্মে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল হৃদয়ের। গত দুই মাস আগে খামারে চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের ঝগড়াঝাটি হয়। পরে মুরগির খামারের মালিকরা বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।

হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, অপহরণের পর তার স্বামীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি ছিল তার ছেলে হৃদয়ের। ফোনে হৃদয় বলে মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসে। আমি প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা ফোন দিয়েন না।

তিনি আরও বলেন, ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলছে ওরা। এরপর আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবি না। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করি। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী টাকা দিয়ে তাদের পায়ে পর্যন্ত পড়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর

অপহরণের পর হত্যা, অপহরণকারীকে পুলিশ থেকে ছিনিয়ে পিটিয়ে মারল জনতা

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

চট্টগ্রামের রাউজান থেকে অপহরণের ১৪ দিন পর স্কুলছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়ের (২০) নামের এক যুবকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ নিয়ে ফেরার পথে উত্তেজিত জনতা উমংচিং মারমা নামে এক অপহরণকারীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হৃদয় উপজেলার ৮ নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে।

রাউজান থানার ওসি আবু উল্লাহ আল হারুন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অপহরণ ঘটনায় গত কয়েকদিন আগে আমরা দুই অপহরণকারীকে আটক করে আদালতে পাঠালে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত রোববার এ ঘটনায় আমরা উমংচিং মারমা নামে আরও এক জনকে আটক করি। তার দেওয়া তথ্যমতে সোমবার ভোরে কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে যায়।

আবু উল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, অভিযানে তার দেখানো বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করি। লাশ উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে পাঁচ শতাধিক নারীসহ স্থানীয়রা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। এছাড়া তারা পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছে। এতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি বলেন, শিবলী সাদিক হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কদলপুরে একটি মুরগির খামারে চাকরি করতো। গত ২৮ আগস্ট রাতে ওই মুরগির খামার থেকে দিবাগত রাতে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুই দিন পর অপহরণকারীরা তার পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরিবার অপহরণকারীদের সাথে কথা বলে ২ লাখ টাকায় রাজি হয়। কয়েকদিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে দুইজন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। অপহরণকারীরা ছেলেকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, হৃদয় যে মুরগির খামারে চাকরি করতো সেখানে সবাই ছিলেন চাকমা যুবক। মুরগির ফার্মে চাকরি করা চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল হৃদয়ের। গত দুই মাস আগে খামারে চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের ঝগড়াঝাটি হয়। পরে মুরগির খামারের মালিকরা বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।

হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, অপহরণের পর তার স্বামীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি ছিল তার ছেলে হৃদয়ের। ফোনে হৃদয় বলে মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে আসে। আমি প্রায় ১২ ঘণ্টার মতো গাড়িতে ছিলাম। আপনারা ফোন দিয়েন না।

তিনি আরও বলেন, ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলছে ওরা। এরপর আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবি না। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করি। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেয়নি। আমার স্বামী টাকা দিয়ে তাদের পায়ে পর্যন্ত পড়েছেন।