নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন মেট্রোরেলের গত রোববার (৩০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি কোচ আগারগাঁও থেকে উত্তরা-উত্তর স্টেশনে যাওয়ার পথে রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। সোমবার (১ মে) রাতে মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের বাদী হয়ে মেট্রোরেল আইন-২০১৫-এর ৩৫ ও ৪৩ ধারাসহ দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলায় উল্লিখিত ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি, পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকার জরিমানা আর সর্বনিম্ন শাস্তি হচ্ছে দুই বছরের কারাদণ্ড।
মেট্রোরেলে ঢিল নিক্ষেপকারীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেদিকে নজর রাখছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তারা চান, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের গর্হিত অপরাধে না জড়ায়।
সোমবার (১ মে) রাতে রাজধানীর কাফরুল থানায় মেট্রোরেলের জানালায় ঢিল ছোড়ার ঘটনায় মেট্রোরেলের লাইন অপারেশন শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল কাদের বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে মেট্রোরেলের প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পুলিশ বলছে, ঢিল ছোড়ার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) আরও কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে।
মেট্রোরেল আইন ২০১৫ এর ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি মেট্রোরেল ও উহার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা বিঘ্নিত হইবার সম্ভাবনা থাকে এইরূপ কোনো কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
আইনটির ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেন বা ষড়যন্ত্র করেন এবং উক্ত ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনার ফলে সংশ্লিষ্ট অপরাধটি সংঘটিত হয়, তাহা হইলে উক্ত সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী বা প্ররোচনাদানকারী উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪২৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতিসাধন করে এবং তদ্বারা পঞ্চাশ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ অর্থের অনিষ্ট করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডের, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
ঘটনাস্থলের পাশে বহুতল ভবন রয়েছে। পূর্বপাশের কোনও ভবন বা ছাদ থেকে কোনও দুর্বৃত্ত ঢিল ছুড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, একটি চক্র তৈরি হয়েছে, যারা মেট্রোরেলে ঢিল ছোড়ে। এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। আমরাও দুষ্কৃতকারীদের খুঁজছি, তারা সবাই এখন বাড়িছাড়া। তাদের আমরা এমন শাস্তি দেবো, ভবিষ্যতে যেন মেট্রোরেলে কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমান বলেন, রোববার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনগামী ট্রেন কাজীপাড়া স্টেশনে ঢোকার সময় ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে একটি জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাটি কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের ঠিক দক্ষিণ প্রান্তে ঘটে। যখন ট্রেনটি স্টেশনের ঢুকতে যাচ্ছে, ঠিক এমন সময় বিকট একটি আওয়াজে জানালার কাচ ভেঙে যায়। ট্রেন ছিল পশ্চিম দিকের ট্র্যাকে। পূর্ব দিক থেকে ঢিল আসে। ফলে ট্রেনের পূর্ব দিকের একটি কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।