Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুনের সময় শেষ, বাড়ছে চাপ : আইসিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে বিপুল সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল, তা অনেকটা কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সরকার রাজনৈতিক বিভেদ ঠেকাতে এবং প্রতিশ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে এখন যথেষ্ট চাপের মধ্যে আছে। সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়েও সমালোচনা বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) আইসজিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার উল্লাস শুরুতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন অভাবনীয় জনসমর্থন পায়। কিন্তু সেই হানিমুনের (মধুচন্দ্রিমা) সময় শেষ হয়ে গেছে।

আইসিজি আরও মনে করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তার সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক এই উত্তরণে সহায়তা করতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর আগে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিশনও গঠন করেছে। চারটি কমিশন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে তাদের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারকাজ চালানোর সুপারিশ করেছে তারা।

অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও সংকটমুক্ত হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সরকারের সংস্কারের কিছু পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল দেখাতে পারে, যেমন ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থাকলে অর্থনীতি আরও বিপদের মধ্যে পড়তে পারে।

আইসিজির মতে, বাংলাদেশের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক। ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। এসব সমস্যা মোকাবিলায় ইইউ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সামনে নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এগুলো কাজে লাগাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সমর্থন। ইইউ ও তার সদস্য দেশগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন পুরোপুরি শেষ। রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দরকষাকষি করায় এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় এই বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বাড়তে পারে। জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণেও অন্তর্বর্তী সরকার চাপে রয়েছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার হিসেবে তারা পেয়েছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেন, অর্থনীতিকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল বাংলাদেশের জনগণের বাস্তবে পেতে আরও সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখনো টানাপোড়েন রয়েছে আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুনের সময় শেষ, বাড়ছে চাপ : আইসিজি

প্রকাশের সময় : ০২:৪৮:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে বিপুল সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল, তা অনেকটা কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সরকার রাজনৈতিক বিভেদ ঠেকাতে এবং প্রতিশ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে এখন যথেষ্ট চাপের মধ্যে আছে। সেইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়েও সমালোচনা বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) আইসজিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার উল্লাস শুরুতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন অভাবনীয় জনসমর্থন পায়। কিন্তু সেই হানিমুনের (মধুচন্দ্রিমা) সময় শেষ হয়ে গেছে।

আইসিজি আরও মনে করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তার সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক এই উত্তরণে সহায়তা করতে পারে। এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর আগে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিশনও গঠন করেছে। চারটি কমিশন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে তাদের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারকাজ চালানোর সুপারিশ করেছে তারা।

অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও সংকটমুক্ত হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সরকারের সংস্কারের কিছু পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল দেখাতে পারে, যেমন ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা থাকলে অর্থনীতি আরও বিপদের মধ্যে পড়তে পারে।

আইসিজির মতে, বাংলাদেশের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক। ভারতীয় সীমান্তে উত্তেজনা এবং মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। এসব সমস্যা মোকাবিলায় ইইউ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সামনে নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এগুলো কাজে লাগাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সমর্থন। ইইউ ও তার সদস্য দেশগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন পুরোপুরি শেষ। রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দরকষাকষি করায় এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় এই বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বাড়তে পারে। জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণেও অন্তর্বর্তী সরকার চাপে রয়েছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার হিসেবে তারা পেয়েছে।

ক্রাইসিস গ্রুপের এই কর্মকর্তা বলেন, অর্থনীতিকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল বাংলাদেশের জনগণের বাস্তবে পেতে আরও সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখনো টানাপোড়েন রয়েছে আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।