Dhaka শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ২-৩ বছর হওয়া উচিত, মত সম্পাদকদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৯৮ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ২ বছরের মতো হতে পারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এমন মত দিয়েছেন সম্পাদকরা।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক শেষে এই প্রস্তাবের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘যৌক্তিক সময়’ পর্যন্ত থাকে। এই যৌক্তিক সময় আসলে কতটুকু? এ বিষয়ে ড. ইউনূস দেশের শীর্ষ সম্পাদকদের কাছে জানতে চেয়েছেন। এই অন্তর্র্বতী সরকারকে কী কী কাজ করতে হবে, ন্যূনতম কতটুকু কাজ করতে হবে- এসব প্রশ্ন রেখেছেন।

সম্পাদকদের মতামত তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন রকম কথা এসেছে, সর্বনিম্ন যে সময়টা এসেছে- ২ বছর যাতে এই অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ হয়। অনেকে আবার দুই থেকে তিন বছরের কথা বলেছেন।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তবর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় সংবিধানে এখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু সরকার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্র্বতী সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

কিন্তু এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সরকারের কর্ম-পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছিলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ নিয়ে (সম্পাদকদের) বেশির ভাগই বলেছেন, যেসব এজেন্ডার বাস্তবায়ন বা যে কাজ অন্তর্র্বতী সরকার করবে, সেই কাজটাই আসলে নির্ধারণ করবে এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ প্রসঙ্গে সম্পাদকদের বক্তব্যে যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে, তাও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন শফিকুল আলম।

‘অনেক কথা এসেছে, সংবিধান সংশোধন, সংবিধান নতুন করে লেখা, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, পুলিশের জন্য কমিশন, পুলিশকে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য। রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য, যা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।’

অন্তর্র্বতী সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের বলেছেন, ‘আপনারা লিখবেন, প্রচুর লেখেন, আপনারা জানান। আমাদের যদি দোষ-ত্রুটি থাকে এগুলো নিয়েও আপনারা বলেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে শুনতে চাই।’

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বার বার বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন এবং ‘ভাইব্রেন্ট’ মিডিয়া দেখতে চান। সম্পাদকগণ বলেছেন, মিডিয়াতে যেসব কালা কানুন আছে সেই কালাকানুনগুলো যাতে বাদ দেওয়া হয়; সংশোধন করা হয়।’

মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক কোনো অসুবিধায় না পড়ে, সে বিষয়ে একটা মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি অন্তর্র্বতী সরকারের বিবেচনাধীন আছে।’

প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব জানান, মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ইত্তেফাক তাসমিমা হোসেন, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের হাসান হাফিজ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তরের মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

এ ছাড়া দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ২-৩ বছর হওয়া উচিত, মত সম্পাদকদের

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ২ বছরের মতো হতে পারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এমন মত দিয়েছেন সম্পাদকরা।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক শেষে এই প্রস্তাবের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘যৌক্তিক সময়’ পর্যন্ত থাকে। এই যৌক্তিক সময় আসলে কতটুকু? এ বিষয়ে ড. ইউনূস দেশের শীর্ষ সম্পাদকদের কাছে জানতে চেয়েছেন। এই অন্তর্র্বতী সরকারকে কী কী কাজ করতে হবে, ন্যূনতম কতটুকু কাজ করতে হবে- এসব প্রশ্ন রেখেছেন।

সম্পাদকদের মতামত তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন রকম কথা এসেছে, সর্বনিম্ন যে সময়টা এসেছে- ২ বছর যাতে এই অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ হয়। অনেকে আবার দুই থেকে তিন বছরের কথা বলেছেন।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তবর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় সংবিধানে এখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু সরকার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্র্বতী সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

কিন্তু এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সরকারের কর্ম-পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছিলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ নিয়ে (সম্পাদকদের) বেশির ভাগই বলেছেন, যেসব এজেন্ডার বাস্তবায়ন বা যে কাজ অন্তর্র্বতী সরকার করবে, সেই কাজটাই আসলে নির্ধারণ করবে এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ প্রসঙ্গে সম্পাদকদের বক্তব্যে যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে, তাও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন শফিকুল আলম।

‘অনেক কথা এসেছে, সংবিধান সংশোধন, সংবিধান নতুন করে লেখা, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, পুলিশের জন্য কমিশন, পুলিশকে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য। রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য, যা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।’

অন্তর্র্বতী সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের বলেছেন, ‘আপনারা লিখবেন, প্রচুর লেখেন, আপনারা জানান। আমাদের যদি দোষ-ত্রুটি থাকে এগুলো নিয়েও আপনারা বলেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে শুনতে চাই।’

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বার বার বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন এবং ‘ভাইব্রেন্ট’ মিডিয়া দেখতে চান। সম্পাদকগণ বলেছেন, মিডিয়াতে যেসব কালা কানুন আছে সেই কালাকানুনগুলো যাতে বাদ দেওয়া হয়; সংশোধন করা হয়।’

মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক কোনো অসুবিধায় না পড়ে, সে বিষয়ে একটা মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি অন্তর্র্বতী সরকারের বিবেচনাধীন আছে।’

প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব জানান, মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ইত্তেফাক তাসমিমা হোসেন, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের হাসান হাফিজ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তরের মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

এ ছাড়া দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।