জামালপুর জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাই না। এই সরকার একটি দুর্বল সরকার এবং সম্মিলিত সকলের ফসল। আমরা চাই না আবার ফ্যাসিবাদ কোনোভাবে এ সরকার ব্যর্থ প্রমাণ করে দিক। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খেলাফত মজলিস ধৈর্য ধারণ করছে। এই ধৈর্য ধারণকে যদি দুর্বলতা ভাবা হয় তাহলে সরকারের বোকামি হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামালপুর শহরের সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জামালপুর জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জামালপুর জেলা শাখা শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এই গণ সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, সরকারকে বলতে চাই শিক্ষা কমিশন নামে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে এর মধ্যে সমকামিতার প্রোমোটকারী যারা রয়েছে, তাদেরকে শিক্ষা কমিশন থেকে বাদ দিন। ইসলামী শিক্ষাবিদ, আলেম, ওলামাদের প্রতিনিধি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করুন। এটা আমাদের অধিকারের কথা। আজ জেলা শহরের মঞ্চ থেকে বলছি, কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে বলব। এরপর শাপলা চত্বরে যাব, এরপরও যদি আমাদের কথা কর্ণপাত না করা হয় তাহলে গণভবন-বঙ্গভবন কোনো কিছুই ছাড়বো না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, সরকারকে বলতে চাই, শিক্ষা কমিশন নামে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, এর মধ্যে সমকামিতার প্রমোটকারী যারা রয়েছেন তাদের শিক্ষা কমিশন থেকে বাদ দিন। ইসলামি শিক্ষাবিদ, আলেম, ওলামাদের প্রতিনিধি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করুন। এটা আমাদের অনুরোধ নয়, আমাদের অধিকারের কথা। আজ জেলা শহরের মঞ্চ থেকে বলছি, কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে বলবো। এরপরে শাপলা চত্বরে যাবো, এরপরও যদি আমাদের কথায় কর্ণপাত না করা হয় তাহলে গণভবন বঙ্গভবন কোনোকিছুই ছাড়বো না।’
তিনি বলেন, বিগত সরকার যে সকল আইন পাস করেছে, সেখানে কোথায় কোথায় কোরআনবিরোধী ধারা রয়েছে সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। নতুন করে যদি ইসলামবিরোধী, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনও ধারা আইনে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয় তাহলে শাপলা চত্বরে নতুন কারবালা হবে। বন্ধুত্বের জন্য আমরা অনেকের দিকে হাত বাড়াতে পারি, কিন্তু কেউ যদি প্রভুত্বের দৃষ্টি দেয় আমরা সে চোখ উপড়ে ফেলতে প্রস্তুত আছি। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে শুধুমাত্র আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য। বাংলাদেশকে নিজেদের দেশের করতলগত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের দাদাবাবুরা এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, সার্বভৌমত্বের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদিরা তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তাদের একতরফা প্রশ্রয়ের সুযোগ নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারা একটিবারের জন্য চিন্তা করে নাই এদেশের মানুষের অভিপ্রায় কী, চাওয়া কী, এদেশের মানুষ তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায়নি। শুধু ভারতের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য এদেশের মানুষের অধিকারকে, চাওয়া-পাওয়াকে, ভোটের অধিকারকে তারা তাদের দুই পায়ে পিষ্ট করেছে। তারা বাংলাদেশে স্বাধীন প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়নি, তারা একজন মুখ্যমন্ত্রী বসাতে চেয়েছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সারকারের পতন নিয়ে তিনি বলেন, এদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন রক্তে রঞ্জিত হলো, রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রক্ত দিলো কলেজের ছাত্ররা, রক্ত দিলো স্কুলের ছেলেরা, রক্ত দিলো মাদরাসার ছাত্ররা। এরপর রক্তের বন্যা বইলো, রক্তের মধ্য দিয়ে অর্জিত হলো স্বাধীন বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা তার তলপিতল্পা গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। শেখ হাসিনা এমন এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, আমার দুঃখ হয়, আফসোস হয়, একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য, তারা কী করে আবার এদেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাবে। কোন মুখে তারা আবার আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করবে। বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলনের মুখে আরও অনেক সরকারকে পরিবর্তন হতে দেখেছে। এর আগে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া বছরের পর বছর কারাগারে থেকেছেন, কিন্ত পালিয়ে যান নাই। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা কী করলেন? দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। একটি বারও বাংলাদেশের মানুষ ও নেতাকর্মীদের কথা ভাবলেন না।
ভারতে মহানবী (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদ জানিয়ে মামুনুল হক বলেন, ভারতের মুম্বাইতে মহানবী (সা.) বিরুদ্ধে জঘন্য কটূক্তি করা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেটাকে প্রমোট করেছে। মহানবী (সা.) সারা বিশ্বের নবী। আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) এর ইজ্জতের প্রশ্নে আমরা কারো চেহারার দিকে তাকিয়ে কথা বলবো না। বাংলাদেশ সরকারকে বলবো, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আজই এ ব্যাপারে যেন তাদেরকে সতর্ক করা হয়। যদি এ সেই ব্যাপারা তারা (ভারত) পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে বাংলাদেশ সরকার যেন যাথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক হাফেজ মওলানা মুহাম্মদ আলী খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওলানা জালালুদ্দীন, মওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মওলানা আবুল হাসানাত জালালীসহ দলীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।