খুলনা জেলা প্রতিনিধি :
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান আন্দোলন ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে ক্যাম্পাসে পৌঁছেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল দশটায় শিক্ষা উপদেষ্টা ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এই মুহূর্তে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা চলছে।
জানা যায়, উপদেষ্টা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। সার্বিক পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে সরাসরি শুনছেন এবং আলোচনা করছেন।
তবে উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া কোনোভাবেই অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েটে যান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভঙ্গ করে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি দল বেলা ১১টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।
আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আরও ৪ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনশনে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হলেন। আর ২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে নিয়ে যায় তাদের পরিবার।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে টানা অনশনরত অন্য ২১ শিক্ষার্থীও শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এদিকে কুয়েটের আবাসিক হল ও বাইরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে জড়ো হন । উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
এর আগে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ‘লাল কার্ড’ দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িতদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল থেকে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকাল ৪টা থেকে আমরণ অনশনে বসেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে।