ফেনী জেলা প্রতিনিধি :
সংস্কারের নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা, নজর রাখতে বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই তাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সোনাগাজী ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, হাজার-লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে। যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে, অবশ্যই সেগুলোর বিচার করতে হবে। যদি বিচার না হয়, তাহলে খুন ও গুমকারীরা আরও উৎসাহ পাবে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে যারা হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। যারা এ আন্দোলনে নিহত হয়েছে তাদের পরিবার যেন সঠিক বিচার পায়। দল-মত নির্বিশেষে স্বৈরাচারকে হঠাতে নিজের জীবন বাজি রেখে জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সমাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নিহত ও আহতদের ত্যাগের মর্যদা দিতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশকে গঠন করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, কিছু কিছু মানুষ সংস্কার সংস্কার বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সংস্কারের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না। আমাদের দ্রুত জনগণের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের শাসন নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ সময় দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বিএনপির ৩১ দফার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তারেক রহমান আরও বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপি আড়াই বছর আগেই সংস্কারের কথা বলেছে। কারণ, বিএনপি বিশ্বাস করতো স্বৈরাচারের বিদায় হবেই। খেয়াল করছি, কিছু মানুষ সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে। আমাদের দেখতে হবে, এই সংস্কার সংস্কার বলা কোনো ষড়যন্ত্র কিনা।
তিনি আরও বলেন, যেদিন দেশের মানুষের রাজনৈতিক ফিরিয়ে দিতে পারব, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারব, এবং জনগণের সরকার উপহার দিতে না পারব- ততদিন আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
কিছু মানুষ বিএনপিতে ঢুকে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে সংস্কারের নামে যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর না হয়। সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দ্রব্য মূল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের কী হবে। তাই জনগণের এসব প্রত্যাশার দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।’
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব শহীদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ করা হবে।’
বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো, দেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চায়। কিভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
আমরা বিএনপি পরিবারের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আতিকুরের সভাপতিত্বে ও ফেনী বিএনপি নেতা মেজবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আব্দীন ফারুক, জয়নাল আব্দীন ভিপি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামিম, হারুনর রশীদ হারুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেব খোকা, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহানা আক্তার শানু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, বেলাল আহাম্মদ বেলাল, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভুঞা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু প্রমুখ।
সমাবেশে সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত শহীদ মাসুদের পারিবারকে একটি সেমি পাকা মাসুদ ভিলা নামে একটি ঘর হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে প্রায় এক যুগ পর উপজেলা বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে উপজেলার সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। আজ সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা থেকে বিভিন্ন রং-বেরংঙের ব্যনার-ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে। দুপুর ১২টার আগেই দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।