বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

হাওরে উড়াল সড়ক প্রকল্প : এ মাসেই একনেকে অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
হাওরে উড়াল সড়ক প্রকল্প : এ মাসেই একনেকে অনুমোদন
হাওরের ছবি

হাওরের ভেতর দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোণা পর্যন্ত হবে উড়াল সড়ক। প্রায় সাড়ে ১৩ কি. মি. দৈর্ঘ্যের এই দৃষ্টিনন্দন সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এই মাসেই একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেবেন। কারণ হাওরের প্রকৃতি বিবেচনা করে এমন বিরল উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রস্তাবের কাজ তার মাথা থেকেই এসেছে। তিনি আমাদেরকে এমন পরামর্শ দেওয়ার পর আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।

গত ৬ সেপ্টেম্বর সকালে শান্তিগঞ্জস্থ মন্ত্রীর হিজল বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় নানা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এসব কথা জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল পুরোপুরি ব্যবসা ও পর্যটনের জন্য খুলে যাবে। সহজেই পর্যটকরা সুনামগঞ্জে প্রবেশ করে হাওরের উড়াল সড়ক দিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকা চলে যেতে পারবেন। এই কাজ করতে পারলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা হোটেল-মোটেল নির্মাণ, হাওরে ঘুরার জন্য নৌকা-স্পিডবোটসহ নানা কিছু করবে।

তিনি বলেন, হোটেল-মোটেল সরকারিভাবে করব না। কারণ এসব করলে আমরা যাদের নিয়োগ দেব তারা সাহেব হয়ে বসে থাকবে। জনগণ তাদের দেখা পাবে না। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে না। আমরা এই অঞ্চল ব্যবসা ও পর্যটনের জন্য পুরোপুরি খুলে দিতে যা প্রয়োজন তাই করব।

উড়াল সড়কে দৃষ্টিনন্দন কিছু যুক্ত করা হবে কি না বা সরকারিভাবে পর্যটকদের জন্য কি সুযোগ সুবিধা থাকবে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে উড়াল সড়কের দুই পাশে কিছু দূর দূর আমরা কিছু ‘ইয়ূথ হোস্টেল’ করে দেব। টিনসেডের বাংলো টাইপের হোস্টেল। হাওরে দেখতেও সুন্দর লাগবে। ভবনের নকশায় কোনো ফুটানি থাকবে না। পরিষ্কার পানি ও রান্নাবান্নার ব্যবস্থা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে- মেয়েরা হাওরের উড়াল সড়কে ঘুরতে আসবে। হাওরের বাউরি বাতাসে অবগাহন করবে তারা।

পর্যটকরা (নারী-পুরুষরা) এসব ইয়ুথ হোস্টেলে আলাদাভাবে থাকবে, নিজেরা রান্না করে খাবে। তাদের কাছ থেকে অল্প টাকা রাখা হবে। এরকম একটি পরিকল্পনা রয়েছে আমার। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ এতদিন কুমারি ছিল। সম্পদ ও সম্ভাবনা থাকলেও সুযোগের অভাবে সুনামগঞ্জকে ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। তাই এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সময় এসেছে উন্নয়নের। আমরা এখন সুনামগঞ্জকে খুলে দিতে চাই। যাতে সারা দেশ এখানে প্রবেশের সুযোগ পায়। ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটন সম্প্রসারণ হয়।

আরও পড়ুন : পুরোদমে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ

কবে প্রকল্পটি অনুমোদন হবে এবং কবে শেষ হবে বা উড়াল সড়কে আর কি কি যুক্ত থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আশা করছি এ মাসেই প্রকল্পটি একনেকে ওঠবে। এবং এই প্রকল্পের পরিকল্পনাকারী প্রধানমন্ত্রী এটির অনুমোদন দেবেন। তিনি বলেন, সাড়ে ১৩ কি.মি দৈর্ঘ্যের এই উড়াল সড়ক নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

‘হাওর এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’-প্রকল্প নিয়ে এখন কাজ চলছে। এই প্রকল্পে প্রাথমিক প্রাক্কলন ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। মন্ত্রী জানালেন, এই প্রকল্পে প্রায় ১০৭ কি.মি. দৃষ্টিনন্দন সড়ক হবে। আরো প্রায় ২৮ কি. সড়ক ডুবন্ত নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে আরো কয়েক কি.মি ডুবন্ত সড়ক, ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক থাকবে। উপজেলা সড়কে ২ হাজার ৯৮৭ মিটার ও ইউনিয়ন সড়কে আরো ৬৮৫ মিটার সেতু এবং ৭৭৫ মিটার কালভার্টও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সবকিছুই হবে দৃষ্টিনন্দন ও চোখ ধাঁধানো।

প্রকল্প পরিকল্পনাটি কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিপিপি চূড়ান্ত করার পর এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের বিভিন্ন দিক যাছাই-বাছাই করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে এ মাসেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপনের। আশা করি চলতি মাসেই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে।

দেশের জন্য মাইলফলক ও বিরল এমন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা থেকে আসায় তার নামেই নামকরণের যুক্তিকথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা যখন হাওরের যোগাযোগ উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সহযোগিতা কামনা করেছিলাম তখন তিনি হাওরের প্রকৃতি বিবেচনা করে যাতে ঢেউয়ে অক্ষত থাকে এমন প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন হাওরের ওপর দিয়ে উড়াল সড়ক তৈরি করা যায় কিনা চিন্তা করার। আমাদের মাথায় এ বিষয়টি ছিল না। তিনি আমাদের মধ্যে এই আইডিয়া দেওয়ার পর কাজ শুরু করি। এ কারণে তার নামেই ‘শেখ হাসিনা উড়াল সড়ক’ হিসেবে আমরা নামকরণ করে হাওরবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তবে তার কানে নামকরণের বিষয়টি আমরা এখনো তুলিনি। একনেকে অনুমোদনের পরে আমরা নেত্রীর নামে নামকরণের হাওরবাসীর জোরালো দাবির বিষয়টি নিয়ে যাব।

হাওরের ভেতর দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণে হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে কি না বা এ বিষয়টি কিভাবে দেখা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, হাওরের প্রাণ ও প্রকৃতির রক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। তিনি আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রাণবৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে হাওরের কোনো উন্নয়ন হবে না। তার নির্দেশনা মাথায় রেখেই আমরা হাওরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য উড়াল সড়কের জন্য পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চিন্তা করছি। উড়াল সড়কে যানবাহনের শব্দ থেকে হাওরে প্রাণবৈচিত্র্যের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য শব্দ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উড়াল সড়কের পাশাপাশি যোগাযোগ বিড়ম্বিত হাওরের যোগাযোগ উন্নয়নে আর কি পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এক সময় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়া যেত না। রাস্তাঘাট-কালভার্ট ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে লন্ডভন্ড হয়ে গেলেও অফিসাররা আসতেন না। কারণ তাদের কাজের পরিধি ও ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা ছিল না। তবে এখন চিত্র বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্টসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। তিনি বলেন, দিরাই থেকে শাল্লা, আজমিরিগঞ্জ-বানিয়াচং-হবিগঞ্জহ হয়ে হাওরের বুক চিরে একটি মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাশ হওয়ার পর কাজও শুরু হয়ে গেছে।

মোহনগঞ্জ-নেত্রকোণার সঙ্গে একটি এবং দিরাই-হবিগঞ্জের সঙ্গে আরেকটি মহাসড়ক হলে হাওরের যোগাযোগ চিত্র পাল্টে যাবে। বলতে গেলে খুলে যাবে সুনামগঞ্জের সব সম্ভাবনার দ্বার। ব্যবসা-বাণিজ্য-যোগাযোগ এবং পর্যটনখাতেও বিরাট পরিবর্তন আসবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া