অনুমোদিত জনবলের অর্ধেক দিয়ে চলছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এতে করে সারাদেশের সড়ক নেটওয়ার্ক ও সেতু কালভার্ট নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সওজ অধিদপ্তরের ‘মহাসড়কের লাইফ টাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও সংস্থাটির জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অপ্রতুল জনবলের কারণে ঠিকমতো দেশের সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সারাদেশে বাইশ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়কের মালিকানা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের। তাদের আওতাধীন ছোট-বড় সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা ১৯ হাজার ২১৮টি। এসব সড়ক, সেতুর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত সড়ক নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। তবে সওজ অধিদপ্তরের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে জনবল সংকট। মোট অনুমোদিত জনবলের মাত্র অর্ধেক কর্মী নিয়ে সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি।
সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সওজ অধিদপ্তরের মোট পদের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৩১, যার মধ্যে ৪ হাজার ৫৪১টি পদই শূন্য। সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির পদ। ২ হাজার ৫৭০টি তৃতীয় শ্রেণির পদ বর্তমানে শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ক্যাটাগরিতে শূন্য পদের সংখ্যা ১ হাজার ৫২২। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে ২১৪টি। প্রথম শ্রেণিতে শূন্য পদ আছে ২০৪টি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) প্রস্তাব, পদোন্নতি, নতুন করে নিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সওজ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সওজ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির ২০৪টি শূন্য পদের মধ্যে সরাসরি নিয়োগযোগ্য সহকারী প্রকৌশলীর (সিভিল/যান্ত্রিক) ৮৬টি পদ পূরণের প্রস্তাব পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে আরো ছয়টি পদ পূরণের কার্যক্রম চলমান আছে।
আরও পড়ুন : করোনার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপারের রেকর্ড
আর পদোন্নতির মাধ্যমে আটটি পদ পূরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যদিও পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য ৬৩টি পদ পূরণের জন্য সওজ অধিদপ্তরে কোনো যোগ্য কর্মকর্তা নেই। অন্যদিকে নন-ক্যাডারের সাত পদ পূরণের জন্য সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির ৮২টি পদ পূরণের জন্য পিএসসিতে চাহিদাপত্র দিয়েছে সওজ অধিদপ্তর। মামলার কারণে আটকে আছে আরো ৬০টি পদে নিয়োগ, যেগুলো বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা। অন্যদিকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য ২০টি পদে সংস্থাটিতে কোনো যোগ্য কর্মকর্তা নেই। শূন্য ২১৪টি পদের মধ্যে বাকি ৪০টি পূরণের জন্য শিগগির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সওজ অধিদপ্তর সবচেয়ে বেশি জনবল সংকটে ভুগছে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে। এ ক্যাটাগরিতে সংস্থাটিতে শূন্য পদের সংখ্যা ২ হাজার ৫৭০। এসব শূন্য পদের মধ্যে ৬১২টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। তবে যোগ্য কর্মচারীর অভাবে এসব শূন্য পদ পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
আদালতে রিট পিটিশন থাকায় ১৭৩টি পদে ওয়ার্কচার্জড কর্মচারীদের নিয়মিত করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ২৩১ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। তবে যোগ্য কর্মচারীর অভাবে এসব পদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আটটি রিট পিটিশনে আটকে আছে ওয়ার্কচার্জড সংস্থাপনে কর্মরত ৩২৪ কর্মচারীর নিয়মিতকরণ।
সওজ অধিদপ্তরের ‘মহাসড়কের লাইফ টাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও সংস্থাটির জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অপ্রতুল জনবলের কারণে ঠিকমতো দেশের সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপ্রতুল জনবলের কারণে অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলীকে একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে এসব প্রকল্পের কাজে গুণগত মান ঠিক রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। পাশাপাশি জনবল সংকটের কারণে অধিদপ্তরের বিভিন্ন নিয়মিত কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে।
জনবল সংকটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহিরয়ার হোসেন বলেন, শূন্য পদগুলোয় নিয়োগের কার্যক্রম চলমান আছে। পাশাপাশি অধিদপ্তরের নতুন একটি জনবল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। নতুন জনবল কাঠামো অনুমোদন হলে অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো বেশি গতিশীল হবে।