যশোর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বাজেট বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট করেন। স্বৈরাচারী সরকারের লুটপাটের লক্ষ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। সেই বাজেট তো আপনারা এখন করতে পারবেন না। সরকারের পাঁচ মাস তো হলো। এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট করেন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে যশোর চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘খুলনা বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপিকে সংস্কার শেখাতে আসবেন না। দেড় বছর আগে যে ৩১ দফা দিয়েছে বিএনপি তার মধ্যে সংস্কারের সব কিছু রয়েছে। তারও ছয় বছর আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সংস্কারের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, সংস্কার হতে হবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তাদের প্রস্তাবনাগুলো জাতীয় সংসদে আলোচনা করবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সরকার।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় সরকার গঠন বিএনপির অঙ্গীকার। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০০ আসন পেয়েও বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তাহলেও জাতীয় সরকার গঠিত হবে। সবার সহযোগিতায় আগামীর বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে বিএনপি।
তিনি বর্ধিত ভ্যাট ও কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাটের বাজেট ছুড়ে ফেলে দেন। যতটুকু প্রয়োজন জনগণের স্বার্থে ততটুকু নিয়ে অন্তর্র্বতী বাজেট প্রণয়ন করুন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। অনেক মানুষ দুবেলা দু-মুঠো ঠিকমতো খেতেও পারে না। বর্ধিত ভ্যাট ও করের কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। যদি একবার তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায় তাহলে তাদের সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। তাও সম্ভব হবে কি না সন্দেহ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর আদায়নির্ভর অর্থনীতি কখনো নির্ভরশীল হতে পারে না। অর্থনীতি নির্ভরশীল হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে। ব্যবসায়ের যত প্রসার ঘটবে কর তত বেশি জমা হবে। এজন্য অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোর দরকার পড়বে না। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে সুবিধাবাদীদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির মধ্যদিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর পুনরুদ্ধারে গণতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতাদের আলোচনার ভিত্তিতে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সব চেম্বার থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রেখে চেম্বারের গণতন্ত্রায়ণ হবে না।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে চেম্বারসহ সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। আমলাতন্ত্র বা সরকার তখন আর অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনীতিতে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছিলেন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৫ বছর যেসব ব্যবসায়ী ফ্যাসিবাদের হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়ে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে বিশেষভাবে পদক্ষেপ নেবে।
সংস্কারের জন্য বিএনপির কারও কাছ থেকে ছবক নেওয়ার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি সবচেয়ে বেশি উৎসাহী। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না—এসব প্রস্তাব আমরা ছয় বছর আগেই দিয়েছি। সুতরাং সংস্কার বিএনপির জন্য নতুন কিছু না। বিএনপির কারও কাছ থেকে সংস্কারের ছবক নিতে হবে না। আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে ৩১ দফা সংস্কার করব। সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের দরকার হয়। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সংস্কার টেকসই ও গ্রহণযোগ্য হবে না। যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য আছে, সে বিষয়গুলো সংস্কার করুন।
১০৯টি পণ্যে নতুন করারোপের তীব্র সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দিতেই আপনারা ১০৯টি পণ্যে কর ও ভ্যাট আরোপ করেছেন। দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। মধ্যবিত্তদেরও টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। নতুন কর ভ্যাট আরোপে কত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে চিন্তা করতে পারবেন না। সেখান থেকে মানুষকে তুলে আনতে সরকারকে বহু গুণ খরচ করতে হবে। সুতরাং নতুন এই কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার করুন।
খুলনা বিভাগের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বলেন, এক অঞ্চলের অর্থনীতি দেশের অন্য অঞ্চলের অর্থনীতির সাথে মিলবে না। প্রতিটি অঞ্চলকেই তার নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি ও শিল্পোদ্যোক্তা সালিমুল হক কামাল, বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাবুল, বেনাপোল সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান প্রমুখ।