নিজস্ব প্রতিবেদক :
এবারের রেলপথের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পরিবর্তে স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়ছেন যাত্রীরা। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ায় ঘরমুখো মানুষের মধ্যে দেখা গেছে স্বস্তির ছাপ। সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে তিনটি ট্রেন ৫ মিনিট বিলম্ব হলেও বিষয়টি হাসিমুখেই মানিয়ে নিয়েছেন যাত্রীরা।
গত ২৬ মার্চ যে-সব যাত্রী অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন, তারাই আজ কমলাপুর থেকে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।
শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশন ছেড়েছে ১৫টি ট্রেন। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাদাৎ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ কোনো শিডিউল বিপর্যয় কিংবা ট্রেন বিলম্বের ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫টি ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে তিনটি ট্রেন কয়েক মিনিট দেরি হয়েছে। আর বাকি সবগুলো যথাসময়ে ছেড়েছে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) আন্তঃনগর ৪২ ও লোকাল-কমিউটার ২৫টি ট্রেন ঢাকা (কমলাপুর) স্টেশন ছেড়ে যাবে।
সকাল ১০টায় ছেড়ে যাবে জামালপুর এক্সপ্রেস, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস, সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, বেলা সাড়ে ১১টায় তারাকান্দির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস।
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনে প্রবেশের জন্য করা হয়েছে আলাদা গেট। বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা এসব অস্থায়ী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা। সেখানেই ঈদযাত্রার জন্য স্টেশনে আসা যাত্রীর টিকিট চেক করে ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
তবে টিকিট ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। এদিকে ভেতরে প্রবেশ করেও টিকিট স্ক্যান করে যাত্রা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীরা স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছেন। কেউ তসবিহ জপছেন, আবার পত্রিকা পড়াতে বা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।
এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসছে সব ট্রেন। সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রায় এখনও ট্রেন নিয়ে অভিযোগ নেই যাত্রীদের।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। অনলাইনের টিকিটও পাওয়া গেছে অনেকটা সহজেই। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকেও ট্রেনে উঠতে ও নিজ আসনে পৌঁছাতে কোনো বেগ পোহাতে হয়নি।
সরিষাবাড়ীগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মিতুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তির মনে হচ্ছে। ভেবেছিলাম বরাবরের মতো এবার বোধহয় অনলাইনে টিকিট কিনতে পারব না। কিন্তু এবার দুবারের চেষ্টাতেই খুব সহজে টিকিট পাওয়া গেছে। স্টেশনে এসে দেখলাম ভিন্ন এক কারবার। প্রথম চেকপোস্টের পর থেকে আমার আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে কোনো ধরনের বেগ পোহাতে হয়নি। অথচ এমনও ঈদ গেছে যেখানে আমার কাছে টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমি আমার আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি মানুষের ভিড়ে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরগামী আরেক যাত্রী মোস্তফা আল ফারুকী বলেন, ঈদ যাচ্ছে… এখন পর্যন্ত কোনো ভিড় দেখছি না। হয়তো ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে বাড়তি নিরাপত্তা থাকায় অন্য লোকজন হয়তো উঠতে পারবে না। কিন্তু এর পরের স্টেশনগুলো থেকে কী হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। আশা করছি অন্তত ভালো একটা যাত্রা শুরু হোক।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। ট্রেন চলাচলের শিডিউলে ৫-১০ মিনিটের মতো সামান্য বিলম্ব থাকলেও বড় ধরনের কোনো বিলম্ব নেই।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অগ্রিম টিকিটের যাত্রায় সব ট্রেন মোটামুটি সময়মতো কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে। ঈদে সার্বিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে একটু সময় লাগবেই। এতে করে যাত্রীরাই সুবিধা পাবেন।
মাসুদ সারোয়ার বলেন, বেশিরভাগ ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দুই মিনিটের জায়গায় চার মিনিট পর্যন্ত যাত্রা বিরতি দিচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে নামতে পারছেন। এখন প্রতিটি ট্রেন ওভারলোড হয়ে যাচ্ছে। ওভারলোড মানে শতভাগ যাত্রী যাচ্ছে প্রতিটি ট্রেনে। এই যাত্রীদের সঙ্গে বাচ্চা, লাগেজ আবার অনেক বৃদ্ধ মানুষ যাতায়াত করছে।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে প্রতি স্টেশনে দুই মিনিট বিরতি দিত এখন সেটা লাগে চার মিনিট। যাতে মানুষ নিরাপদে যেতে পারে। এভাবে দুই মিনিট করে ১০টা স্টপেজে বিরতি দিলে ২০ মিনিট হয়ে যাবে।
স্টেশন ম্যানেজার বলেন, অনেকেই বিলম্বকে শিডিউল বিপর্যয় বলে থাকে। তবে এটা শিডিউল বিপর্যয় না। একটি ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত না হলে কোনো ট্রেনকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না।
তিনি বলেন, সাধারণত এক থেকে দুই ঘণ্টা ছাড়তে দেরি হলে সেটাকে বিলম্ব বলা হয়। যেমন দুই ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি ছেড়ে গেল। এখন ঈদযাত্রায় আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টাকে মার্জিনাল ডিলে বলা হয়।
আট জোড়া বিশেষ ট্রেন সম্পর্কে জানা যায়, ঈদুল ফিতরে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে শুক্রবার থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে পাঁচদিন চালাচল করবে।
এছাড়া, কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে তিনদিন চলাচল করবে।
আর শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার, শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।
ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে ঈদের আগে ৭-৯ এপ্রিল তিনদিন এবং ঈদের পরের দিন থেকে তিনদিন চলাচল করবে।