রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

সোশাল মিডিয়ায় হৈচৈ মাহবুব কবীর মিলনকে নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০
সোশাল মিডিয়ায় হৈচৈ মাহবুব কবীর মিলনকে নিয়ে
মাহবুব কবীর মিলন

রেলের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলনকে হঠাৎ করেই ওএসডি করা হয়েছে। সাধারণত কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হলে এ নিয়ে কোনো কথা হয় না। কিন্তু মাহববু কবীরের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই হৈটৈ হচ্ছে। সোশাল মিডিয়ায় চলছে তোলপাড়। অনেকেই কর্মনিষ্ঠ ও বরাবরই সৎ ও জনবান্ধব এ কর্মকর্তাকে আবার স্বপদে বহাল করার দাবি করেছেন।

এ নিয়ে বিবিসি ‘‘মাহবুব কবীর মিলন : এই সরকারি কর্মকর্তার বদলি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কেন হৈচৈ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যোগাযোগের পাঠকদের জন্য তা এখানে তুলে ধরা হলো।
‘শাস্তি দেয়া না হলে বাংলাদেশে কোন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হলে তাকে নিয়ে কোন আলোচনাই হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন যখন বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে জানালেন যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে, তারপর থেকেই তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রবল আলোচনা।

আরও পড়ুন : রেলের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন ওএসডি

এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত তার ঐ পোস্টের ব্যাপারে ৩৫ হাজার রিঅ্যাকশন হয়েছে, ৬ হাজারের মতো কমেন্ট পড়েছে এবং পোস্টটি ছয় হাজার বারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।

মি. কবীরকে হঠাৎ করে ওএসডি করার পেছনে ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় যেমন নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, নানা ধরনের ‘তত্ত্ব’ দেয়া হচ্ছে, তেমনি তাকে সরিয়ে দেয়ার ফলে প্রশাসনে সৎ এবং দক্ষ কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়বেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

যেমন, আরিফ আর হোসেন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “উনি যে মন্ত্রণালয়েই গিয়েছেন, আগাছা সাফ করে সেই মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।”

“উনার জন্য আমার একটুও মন খারাপ লাগছে না, ট্রাস্ট মি। বরং খারাপ লাগছে সেই সকল তরুণদের জন্য যারা আজকে পলিসি মেকারের চেয়ারে বসতে পারার পরেও, ভালো কাজ করার সাহসটুকু হারিয়ে ফেললো।”

তবে সোশাল মিডিয়ায় মাহবুব কবীর মিলনকে নিয়ে কথাবার্তা কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়নি।

রেল মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় তার নেয়া কিছু পদক্ষেপ জন-বান্ধব বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

টিকিট ক্রয়ে এনআইডির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, অনলাইনে যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা এবং রেল বিভাগের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে ফটো বা ভিডিও যুক্ত করে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা চালু করার পর যাত্রীদের জীবন অনেক সহজ হয়েছে বলে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন।

গত ২৫শে মার্চ মি. কবীরকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।

দু’হাজার সতের সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাজ করার সময় তিনি খাদ্যে মাত্রারিক্ত বিষাক্ত ফর্মালিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা সে সময় প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

পাশাপাশি, খাদ্যমান পরীক্ষা নানা ধরনের আজগুবি দাবি করে প্রক্রিয়াজাত খাবারের লেবেলিং এবং বিজ্ঞাপন তৈরির পথ ঐ সংস্থাটি বন্ধ করে দেয়।

শরিফুল হাসান নামে একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “দেখেন, একটা মানুষ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে যোগ দিয়ে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করলেন। এরপর তাকে সরিয়ে রেলে দেয়া হলো।”

“বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে বেশ কয়েকদিন আগে তিনি একটা স্বপ্নের কথা বললেন। ১০ জন অফিসার নিয়ে তিন মাসে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমতি চাইলেন। এই চাওয়াই কি তবে কাল হলো!”

গত ২৭শে জুলাই মাহবুব কবীর মিলন ফেসবুক লাইভে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রশাসন থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য তিনি বিশেষ সেল গঠনের পরামর্শ দেন।

ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ”আমি যদি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতাম তবে বলতাম, স্যার আমাকে ১০ জন অফিসার দিন। এদের আমি চুজ করব, এদের নিয়ে আমি একটা উইং করব। মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য সব মন্ত্রণালয়, সব দফতর, সব অধিদফতরের বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করবো আমরা এই ১০ জন।”

এই কাজে ব্যর্থ হলে তিনি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেয়ার কথাও ঐ ভিডিওতে বলেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের ফেসবুকে কর্মক্ষেত্রে বিপ্লব আনার কথা বলা, কিংবা দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে খোলাখুলি-ভাবে চ্যালেঞ্জ জানানোয় চাকরি বিধির লঙ্ঘন হয় কিনা, বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে মাহবুব কবীর মিলন বলেন, দুর্নীতি দমনের প্রসঙ্গে আলোচনার সময় তিনি শুধু তার মতামত জানিয়েছেন।

“আবেগপ্রবণ হয়েই হয়তো কিছু কথা বলে ফেলেছি। হয়তো কথাগুলো ওখানে, ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।”

তাকে ওএসডি করার বিষয়ে মি. কবীর কোন মন্তব্য করতে চাননি। শুধু এটুকুই বলেছেন যে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তিনি সম্মান জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া