শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

সেতু চালু হবে- এটাই বড় কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
সেতু চালু হবে- এটাই বড় কথা
উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু

ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান শিবচরের বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের টার্মিনালে চিপ্স বিক্রি করেন। সঙ্গে বাদাম, কালোজিরা, সরিষা, মেথিসহ নানারকম প্রয়োজনীয় শুকনা খাবারও বিক্রি করেন তিনি। সেতু চালু হলে বন্ধ হয়ে যাবে ঘাট। ছেদ পড়বে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ও। কিন্তু তাতে কষ্ট নেই হাবিবুর রহমানের। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে- এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে এখানে। এখন যেমন বিক্রি হয়, তেমনটা আর হবে না। কিন্তু তাতে কি? পদ্মা সেতু তো আমরা পাইলাম! এই সেতুর কারণে এই এলাকার যে উন্নয়ন হইতাছে তাতে আমাগো ছেলে-মেয়েরা, তাগো ছেলে-মেয়েরা বড় ধরনের উপকার পাইবে। আমাগো জীবন তো শ্যাষের দিকেই!’

হাবিবুর রহমানের মতো ঘাট এলাকার অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা ঘাট বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন কোনো স্থান খুঁজে নিতে হবে তাদের।

নতুন করে আবার শুরু করতে হবে ব্যবসায়-বাণিজ্য। জীবিকা নির্বাহে অনেকটাই ‘ছেদ’ পড়বে। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে গৌরবের শেষ নেই তাদের। পদ্মা সেতুর কল্যাণে পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষ আধুনিক জীবনের সুবিধা পেতে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের অবহেলিত জনপদে পাকা ঝকঝকে রাস্তা, গড়ে উঠছে নানান অবকাঠামো। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠবে ‘মিনিটের ব্যাপার’। এই বিষয়গুলো নিয়ে তারা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত।

হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ৫/৭শ’ টাকার মতো বিক্রি হয়। এই নিয়েই সংসার চলে। বেশ ভালোই আছি। সেতু চালুর পর ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে অন্য কোথাও যাবো। মহাসড়কের আশপাশের কোনো বাজারে দোকানের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ঘাটে ব্যবসায়-বাণিজ্য করে আসছি। হঠাৎ করে ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে; খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পদ্মা সেতুও কম নয়! আমার জীবনে কল্পনাও করিনি এই নদীর ওপর সেতু হবে! পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে ২৫শে জুন। আমাদের সকলের মনেই আনন্দের জোয়ার বইছে। পদ্মা পাড়ের মানুষের ঘরে ঘরে যেন উৎসবের আগমনি বার্তা বইছে। দূরের আত্মীয়-স্বজনেরা বেড়াতে আসছে সেতু দেখতে।’ বাংলাবাজার লঞ্চ টার্মিনালে খাবার হোটেলের মালিক ইস্কান্দার শেখ।

৪০ বছর ধরে খাবার হোটেলের ব্যবসা তার। প্রথমে কাওড়াকান্দি, এরপর কাঁঠালবাড়ী, শেষে বাংলাবাজার ঘাট। পদ্মা সেতু চালু নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই তার। তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীর মন খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবেÑ এমনটা ভাবছেন তারা। এটা আসলে ঠিক ভাবনা নয়। ব্যবসা বন্ধ হবে না, স্থান পরিবর্তন হবে। পদ্মা সেতুর কারণে এই এলাকায় পদ্মার পাড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। পদ্মার পাড়ে যেখানেই দোকান দেই আশা করি চলবে। পদ্মা সেতু চালু হইবে। মনের মধ্যে অটোমেটিক আনন্দ আইসা পড়ে!’ মো. ইউনুস নামের আরেক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘সেতু চালুর পর সেতুর কাছেই হোটেল দিমু। আমাদের বাড়িও জাজিরার টোলপ্লাজার কাছে। সেতুর কারণে আমাদের এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে। শহর হয়ে যাচ্ছে আমাদের এলাকা। বাড়ির কাছে জায়গা আছে, সেখানেই হোটেল দিমু। অনেকেই সেতুর কাছে, মহাসড়কের পাশের বাজারে হোটেল-দোকান নেয়ার চিন্তা করছে।’

আসছে ২৫শে জুন প্রমত্ত পদ্মার ওপর নির্মিত দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মনে বইছে উচ্ছ্বাসের হাওয়া। অপেক্ষার যেন শেষ হচ্ছে না। ঘর থেকে শুরু করে হাটে-মাঠে-ঘাটে বা চলার পথেও এখন পদ্মা সেতুর গল্প। রাজধানী ঢাকায় যেতে নির্বিঘ্নে সেতু পার হওয়ার গল্প! পদ্মা সেতু যেন এক আবেগ পদ্মাপাড়ের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে। তাই ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগের মনেই খুব একটা দুঃখ নেই। ঘাট বন্ধ হলে ব্যবসার জায়গা থাকছে না, আগের মতো বেচাকেনা থাকবে না, কমে যাবে উপার্জনের পথ এই ভাবনা ম্লøান, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার আনন্দের কাছে!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া