বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন

সুবর্ণচরে মা-মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সুবর্ণচরে মা-মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি : 

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়ন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতার নাম আবুল খায়ের মুন্সি। তিনি কাদির হানিফ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই নারী আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি, আরও একজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে সদর থেকে চরজব্বার থানায় আনা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, রাতে হঠাৎ করে তার বসত ঘরে আলো জ্বলে উঠলে তার ঘুম ভেঙে যায়। এসময় মুন্সি মেম্বার ও তার এক সহযোগী ওড়না দিয়ে তার মুখ, হাত-পা বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এসময় অপর একজন পাশের কক্ষে গিয়ে তার বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বলে যায়, তোর মেয়ের বাঁধন খুলে দিয়েছি। পরে মেয়ে এসে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।

এদিকে সংগঠনবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।

তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে রয়েছেন। সংগঠনের অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু মুন্সি মেম্বার সংগঠনবিরোধী কাজ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই তিনি আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংগঠন থেকে তা কার্যকর করা হবে।

সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সির ভাগিনা মো. দুলাল উদ্দিন কিরণ বলেন, ‘আমার মামার বয়স প্রায় ৭০ বছরের উপরে। তিনি অনেক অসুস্থ মানুষ। তার অপারেশন হয়েছে। তার মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এখন আল্লাহ ছাড়া আর আর কেউ জানেনা সত্য টা কি। সত্য গোপন থাকেনা তা একদিন প্রকাশ হবেই।’

স্থানীয়রা জানায়, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরওয়াপদা ইউনিয়নে নতুন বাড়ি করেন এক দিনমজুর। ওই বাড়িতে স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ বসবাস করতেন তিনি। গত দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। এই সুযোগে রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে একজন। পরে সে ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুজন ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে দুজন ওই গৃহবধূকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। গৃহবধূর হাত-পা ও মুখ বেঁধে ঘরে থেকে একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, নাক ফুল ও নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। গভীর রাতে শিশুদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে গৃহবধূর বাঁধন খুলে দেয় এবং বিষয়টি চরজব্বার থানায় জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ ওই স্থানে ছিল। সকালে অভিযোগকারীদের থানায় আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ওই নারীর স্বামী বলেন, ‘আমি দিনমজুর। কাজের জন্য একেক দিন একেক এলাকায় থাকি। গতকাল আমি বাড়িতে ছিলাম না। গভীর রাতে তিনজনের দল সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে আমার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। আমি তাদের শাস্তি চাই।’

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীল সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া