Dhaka শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বেসিক ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বৈঠক করেন আজ। সেখানে বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য একীভূতকরণ নীতিমালা অনুযায়ী দুটি ব্যাংক একীভূত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, একীভূতকরণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আজ বৈঠক হয়েছে তবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয় আলোচনা হয়েছে কি না জানা নেই। এমন কিছু হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে ।

বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সিটি ব্যাংক ভালো ব্যাংক, এখানে একীভূত হলে বেসিক ব্যাংকের জন্য ভালো হবে। কিন্তু এখানে সিটি ব্যাংকের লাভ কোথায়? তাদের শেয়ারহোল্ডারদের কী হবে? বেসিকের দায় কীভাবে মোচন করবে? একটি লস প্রতিষ্ঠান কেন নিয়েছে, এ বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার করেনি। ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেবে দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক ভালো ব্যাংক ছিল। এ ব্যাংকটি যারা ধ্বংস করেছে তাদের মূলে যারা তাদের কী করবে। একীভূত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেন ছাড়া পেয়ে না যায়। সরকারের দায়িত্ব হলো অনিয়মকারীদের ধরা। কেউ যেন অপকর্ম করে পার পেয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করা। যদি অর্থ আত্মসাৎকারীদের শাস্তি না দেয়, তাহলে এ অনিয়ম ঘটতেই থাকবে।

এ ব্যাপারে জানতে টাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সবল ব্যাংক হিসেবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি-না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যেটাই করি না কেন, আগে ওই দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন করবো এবং ৩ বছর বা তার বেশি সময় পরে দুই ব্যালান্সশিট এক করবো।

তিনি বলেন, এটাই আমাদের ইচ্ছা। পলিসিতে বলা আছে ব্যাংক পুনর্গঠনে ৩ বছর সময় পাবো। ভাল পথে এই তিনটা বছর গেলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ চলছে—এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

বেসিক ব্যাংক ১৯৮৯ সালে কার্যক্রম শুরু করে। বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা থেকে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুরুতে ব্যাংকটি বিসিসি ফাউন্ডেশনের ৭০ শতাংশ শেয়ার এবং বাংলাদেশ সরকারের ৩০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে একটি যৌথ উদ্যোগে শুরু করে। বিসিসি ফাউন্ডেশন অকার্যকর হওয়ায় এবং বিসিসিআই বন্ধ হওয়ার পর ১৯৯২ সালের জুন মাসে সরকার ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা গ্রহণ করে।

বেসিক ব্যাংক এক সময় ভালো ব্যাংক ছিল। ব্যাংকটি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ওই সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বাগেরহাটের একটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। এ বিষয়ে মামলা ও বিচারিক কার্যক্রম এখনও চলছে।

উল্লেখ্য, গেল সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব অচিরেই একীভূত হবে বলে গভর্নরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এমডিদের আলাদা সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন বেসিক ব্যাংককেও একীভূত করার আলোচনা হয়। এবার তা সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দিয়ে গত ২৫ মার্চ সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বেসিক ব্যাংক

প্রকাশের সময় : ০৬:০৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বৈঠক করেন আজ। সেখানে বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য একীভূতকরণ নীতিমালা অনুযায়ী দুটি ব্যাংক একীভূত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, একীভূতকরণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আজ বৈঠক হয়েছে তবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয় আলোচনা হয়েছে কি না জানা নেই। এমন কিছু হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে ।

বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সিটি ব্যাংক ভালো ব্যাংক, এখানে একীভূত হলে বেসিক ব্যাংকের জন্য ভালো হবে। কিন্তু এখানে সিটি ব্যাংকের লাভ কোথায়? তাদের শেয়ারহোল্ডারদের কী হবে? বেসিকের দায় কীভাবে মোচন করবে? একটি লস প্রতিষ্ঠান কেন নিয়েছে, এ বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার করেনি। ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেবে দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক ভালো ব্যাংক ছিল। এ ব্যাংকটি যারা ধ্বংস করেছে তাদের মূলে যারা তাদের কী করবে। একীভূত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেন ছাড়া পেয়ে না যায়। সরকারের দায়িত্ব হলো অনিয়মকারীদের ধরা। কেউ যেন অপকর্ম করে পার পেয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করা। যদি অর্থ আত্মসাৎকারীদের শাস্তি না দেয়, তাহলে এ অনিয়ম ঘটতেই থাকবে।

এ ব্যাপারে জানতে টাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সবল ব্যাংক হিসেবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি-না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যেটাই করি না কেন, আগে ওই দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন করবো এবং ৩ বছর বা তার বেশি সময় পরে দুই ব্যালান্সশিট এক করবো।

তিনি বলেন, এটাই আমাদের ইচ্ছা। পলিসিতে বলা আছে ব্যাংক পুনর্গঠনে ৩ বছর সময় পাবো। ভাল পথে এই তিনটা বছর গেলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ চলছে—এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

বেসিক ব্যাংক ১৯৮৯ সালে কার্যক্রম শুরু করে। বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা থেকে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুরুতে ব্যাংকটি বিসিসি ফাউন্ডেশনের ৭০ শতাংশ শেয়ার এবং বাংলাদেশ সরকারের ৩০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে একটি যৌথ উদ্যোগে শুরু করে। বিসিসি ফাউন্ডেশন অকার্যকর হওয়ায় এবং বিসিসিআই বন্ধ হওয়ার পর ১৯৯২ সালের জুন মাসে সরকার ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা গ্রহণ করে।

বেসিক ব্যাংক এক সময় ভালো ব্যাংক ছিল। ব্যাংকটি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ওই সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বাগেরহাটের একটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। এ বিষয়ে মামলা ও বিচারিক কার্যক্রম এখনও চলছে।

উল্লেখ্য, গেল সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব অচিরেই একীভূত হবে বলে গভর্নরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এমডিদের আলাদা সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়। তখন বেসিক ব্যাংককেও একীভূত করার আলোচনা হয়। এবার তা সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দিয়ে গত ২৫ মার্চ সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে।