নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে আশপাশের ভবনে আর আগুন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় জানানো হয়েছে।
বাতাসের জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ও বিজিবির চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে ১টার পরে ব্রিফ করা হবে।
এরই মধ্যে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে দেখা দেয় পানির সংকট। আগুন নেভাতে হাতিরঝিল থেকে পানি আনা হচ্ছে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি ফেলা হয়।
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন দমকলকর্মী আহত হন। প্রথমে তারা বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে গিয়ে সাততলা এনেক্স মার্কেট ভবনে প্রবেশ করেন। পরে সেখানেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তারা সেখানে আটকা পড়েন। খবর পেয়ে তাদের আহতাবস্থায় সেখান থেকে বের করে আনা হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল এবং শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আর ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বঙ্গবাজারই দেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ঈদকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর পর থেকেই ধীরে ধীরে জমে ওঠে এ মার্কেটের ব্যবসা। এ বছরও জমতে শুরু করেছিল বঙ্গবাজারের কেনাবেচা। কিন্তু হঠাৎ লাগা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, বঙ্গবাজারে অন্তত ছয়টি মার্কেটে আগুন লাগে। এর মধ্যে শুধু বঙ্গ মার্কেটেই ২৯০০ দোকান এবং সেখানে কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট- এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোকেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এখান থেকে রাস্তার উল্টো পাশে এনেক্সকো ও বঙ্গো হোমিও মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।
মঙ্গলবারের এই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজারের ওপরে দোকান পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারে রাশেদ বেডিং দোকানের ব্যবসায়ী মো. জকি বলেন, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটে দুই টিনশেড মার্কেটে দোকান আছে আট হাজার। ওই মার্কেট সম্পর্ণ পুড়ে গেছে। এমন কোনও দোকান নেই যে সেটি পোড়েনি। এই মার্কেটে দোকানের নম্বরই রয়েছে ১২ হাজার।
এদিকে বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারে ৫ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত পুড়েছে। সেখানে প্রত্যেক তলায় ১১৫টির মতো দোকান রয়েছে।
এদিকে আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ আট জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এসেছেন। তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
করোনার কারণে গত কয়েক বছর ঈদে ভালো ব্যবসা করতে পারেননি তারা। আশা ছিল, গত কয়েক বছরের লোকসান এবার পুষিয়ে নেওয়ার। কিন্তু বিধি বাম! মঙ্গলবার ভোরে মার্কেটে লাগা আগুন তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। দাউ দাউ আগুনে পুড়েছে ব্যবসায়ীদের ঈদের স্বপ্ন।