স্পোর্টস ডেস্ক :
১৯তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি লাইনে নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ দক্ষতায় নিশ্চিত ছয় থেকে মাত্র ২ রান পায় জিম্বাবুয়ে। শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৪ রান। বাংলাদেশের ২ উইকেট। শান্ত বল তুলে দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। হতাশ করেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের ঘূর্ণিজাদুতে ইনিংসের শেষ ওভারে বাংলাদেশ পায় রোমাঞ্চকর এক জয়।
শুক্রবার (১০ মে) মিরপুরে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থটিতে জিম্বাবুয়েকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। ওই রান তাড়া করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা।
রান তাড়ায় নেমে শুরুতে সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের চতুর্থ বলে কোনো রান করার আগেই ব্রায়ান বেনেটকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। তার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়ানো সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দেন জিম্বাবুয়ে ব্যাটার।
নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আরও এক উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ৪ চারে ১০ বলে ১৭ রান করে তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে যান সিকান্দার রাজা। পরের ওভারে এসে মারুমানিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। এরপর ২৯ বলে ২৫ রানের জুটি গড়েন ক্লিভে মাদানদে ও জনাথন ক্যাম্পবেল।
তাদের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তার বলে এলবিডব্লিউ আউট হন ১৮ বলে ১২ রান করা মাদানদে। এর মধ্যে তাওহীদ হৃদয় ক্যাচ ছাড়েন ক্যাম্পবেলের, বার্লের ক্যাচ গ্লাভস হাতে অনেকটুকু দৌড়ে স্কয়ার লেগে গিয়ে ছাড়েন জাকের। বার্লের সঙ্গে ক্যাম্পবেলের জুটিতে নতুন করে আশা দেখা শুরু করে জিম্বাবুয়ে।
এর মধ্যে তানজিম হাসান সাকিবের ১৩তম ওভারে ২০ রান নেন তারা। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধানও কমে আসে তাতে। তবে ১৫তম ওভারে এসে দুই উইকেট নিয়ে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় বলে অনেকটুকু দৌড়ে দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। ২০ বলে ১৯ রান করে আউট হন বার্ল, ৩০ বলে তার ৩৫ রানের জুটি ভেঙে যায় ক্যাম্পবেলের সঙ্গে। ওই ওভারের শেষ বলে পয়েন্টে রিশাদের হাতে ক্যাচ দেন জংওয়ে।
সেট হয়ে যাওয়া ক্যাম্পবেলকে ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন সাকিব। ২৭ বলে ৩১ রান করে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দেন ক্যাম্পবেল। তাকে ফেরালেও ওই ওভারে ১৪ রান দিয়ে দেন সাকিব। ১৮ বলে ২৭ রানের সমীকরণে চলে আসে ম্যাচ।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ সাকিবের মাথার সামান্য উপর দিয়ে ছক্কা হয়ে যায়। তৃতীয় বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ১০ বলে ১১ রান করা ফারাজ আকরামকে ফেরান তানজিদ হাসান তামিম।
শেষ ওভারে ১৪ রানের সমীকরণ। প্রথম বলেই তানজিদ হাসান তামিম ছেড়ে দেন সহজ ক্যাচ। দ্বিতীয় বলে ডট দিলেও তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মুজারাবানি। কিন্তু পরের বল ওয়াইড করেন সাকিব, সেটিও ছিল বেশ জোরে। এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন মুজারাবানি। পরের বলে রিচার্ড এনাগারভাকে বোল্ড করে খেলা শেষ করেন সাকিব। সবমিলিয়ে সাকিব নেন চার উইকেট, মোস্তাফিজ তিন ও তাসকিনের ঝুলিতে গেছে দুই উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে নাজমুল হাসান শান্তর দল। দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য শতরানের জুটি গড়লে ভালো সংগ্রহের পথে এগোয় টাইগাররা। কিন্তু তার পরেই ছন্দপতন।
ম্যাচের ১১তম ওভারের শেষ বলে সৌম্য সরকার সিঙ্গেল নিলে বিনা উইকেটে শতরানের সংগ্রহে পৌঁছায় টাইগাররা। পরের ওভারেই লুক জঙ্গুয়ের বলে জোনাথন ক্যাম্পবেলের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম। আউট হবার আগে তামিম করেন ৩৮ বলে ৫৩ রান। কিছুক্ষণ পর আউট হন সৌম্য সরকারও। ৩৪ বলে ৪১ রান করে জঙ্গুয়ের দ্বিতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
দুই ওপেনার ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু ৮ বলে মাত্র ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। সিকান্দার রাজার বলে ব্রায়ান বেনেটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন তিনি। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ব্যাট হাসেনি আজকের ম্যাচে। ৩ বল খেলে মাত্র ১ রান করে বেনেটের শিকারে পরিনত হন তিনি। অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত ২ রানে বোল্ড হয়ে বেনেটের দ্বিতীয় শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন।
বিনা উইকেটে শতরানে পৌঁছানো টাইগাররা ১২৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে এক পর্যায়ে ব্যাকফুটে চলে যায়। তারপর একে একে বিদায় নেন জাকের আলী, তাসকিন আহমেদ, রিশাদ হাসান, তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমান। ৭ ব্যাটার আউট জন এক অঙ্কের রানে।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে ২০ রানের বিনিময়ে ৩টি উইকেট তুলে নেন লুক জঙ্গুয়ে। এছাড়া ২টি করে উইকেট পান রিচার্ড নাগারভা ও ব্রায়ান বেনেট। ১টি করে উইকেট পান দলটির অধিনায়ক সিকান্দার রাজা ও ব্লেসিং মুজারাবানি।