শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১২ অপরাহ্ন

সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে : ফখরুল

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে : ফখরুল

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার শুধু দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে শুধু তাই নয়, এ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় চুরি করেছে আমাদের ভোটের অধিকার। আবারও তারা চুরি করে ক্ষমতায় আসতে চায়।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়বাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের উদ্যোগে এই রোডমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ যাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন আপনাদেরই সন্তান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে কেন? ভোটের অধিকার, মানুষের অধিকার, ভাতের অধিকারের জন্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারুণ্যের মিছিলে রাজপথে নেমেছি। সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না জনগণ। সরকারকে হটাতে এক দফার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। বিএনপি ও শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাজানো নির্বাচনে যাবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার নানা ছলে, কৌশল করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, চাল, ডাল, তেল নিত্যপণ্য সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। আমার মায়েরা-বোনেরা তাদের সন্তানদের পাতে একটা ডিম দিতে পারে না। বিদ্যুতের দাম তিন-চার বার করে বাড়ছে। তেলের দাম তিন-চার বার করে বাড়ে। সেদিকে সরকারের কোনো খেয়াল নেই। আবার বলে দাম তো ফিক্স করে দিয়েছি দাম ফিক্স করলেই কি দাম কমানো যায়? চুরি তো করো তোমরা। চুরি করো আর বলো দাম ফিক্স করেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পর আমাদেরকে আবার সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে। আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য ও বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য লড়তে হচ্ছে।

সরকারের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এই সরকার শুধু দ্রব্যমূল্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে তা নয়, এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। এত বড় চোর যে, চুরি করে দেশকে তারা ফোকলা করে দিয়েছে। চুরি করে আর বিদেশে পাঠায়। বিদেশে বাড়ি-ঘর তৈরি করে। আর সবচেয়ে বড় চুরি করেছে—আমার ভোটের অধিকার চুরি করে নিয়ে গেছে। ১৪ তে চুরি করেছে, ১৮ তে চুরি করেছে। এখন আবার পাঁয়তারা করছে ২০২৪ এর নির্বাচনে চুরি করে পার হয়ে যাবে,’ বলেন তিনি।

এ দেশের মানুষ এবার চুরি করতে দেবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ইতোপূর্বে বলেছি, আমাদের কথা অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। এখন সারা পৃথিবীর মানুষ বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশে দুটি নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে যদি জনগণ ঠিকঠাক মতো ভোট দিতে না পারে তাহলে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে সে জন্য আগেই মিথ্যা মামলা-গ্রেফতার; আগের মতো শুরু করে দিয়েছে। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ দেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ জন্য অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। আজকে এই তরুণেরা সবচেয়ে ভুক্তভোগী। তারাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশের জনসংখ্যা ও তাদের এখন চাকরি নেই।

ফখরুল বলেন, এই সরকার বিগত ১৫ বছরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই আমরা বারবার আমাদের দাবিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পেরেছেন? পারেননি। ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে না, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে না। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঘোষণা দিয়েছে যে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, সরকার বলছে তাদের অধীনে আগে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এবারও সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৪ সালে দেখেছি, ২০১৮ সালেও দেখেছি। আজকে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আদালতে গেলে জামিন দেওয়া হয় না বিরোধী আন্দোলনকারী দলগুলোকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে। আজকে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। ডাক্তারা বলছেন, তাকে বাচাঁতে হলে তাড়াতাড়ি তার লিভার ট্রান্সফার করা দরকার সেটা বিদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বার বার বলছি আমরা, পরিবার থেকে বলছে, কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) শুনতে রাজি নন। পরিস্কার করে বলতে চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সকল দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, সাঈদী সাহেবকে কীভাবে জেলে ঢুকিয়ে হাসপাতালে মেরে ফেলেছে; মেরে ফেলেছে না?’ সমস্বরে নেতাকর্মীরা বলে উঠেন হ্যাঁ।

এ সময় মির্জা ফখরুল আরও বলেন, উদ্দেশ্য ওইটা-ই। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তা না হলে সব দায়-দায়িত্ব আপনাকে বহন করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করে যদি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন করতে পারি এবং জনগণের ভোটে সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারি, তাহলে আন্দোলনরত দলগুলোকে নিয়ে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো।

এ সময় নিজেই স্লোগান ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক দফা এক দাবি, (নেতাকর্মীরা বলেন) শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি। দফা এক দাবি এক, (নেতাকর্মীরা বলেন) শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলছি। আজ দেশের সকল রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। আসুন, এই সরকারকে সরিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। জেগে উঠুন, পরাজিত করুন এই দানব সরকারকে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াসিন আলী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, সহ-সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, বিএনপি নেতা তৌহিদুল আলম মামুন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম খাদেম, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া

%d bloggers like this:
%d bloggers like this: