Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারে কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারে কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪-১৮ এর মতো আবারও সেপথে যেতে চায় সরকার, প্রশ্নই উঠে না, জনগণ সেদিকে যাবে না। ২০১৪-১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আলোচনায় গিয়ে কোনো সুফল আসেনি। বাঘ আর রাখাল বালকের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।

শনিবার (১০ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সংসদে ১০ ভাগ আসনও পাবে না। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা এবং মন্ত্রীরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেথ ইস্যু। ডেথ ইস্যু হবে কেন, এটাই এখন সব চাইতে লাইট ইস্যু। কারণ বিএনপি মনে করে সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ এরা এতো চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, তারা একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি। সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো কারণে নেই। যার জন্য বলেছি একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন। কারণ আমার যে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনের যে ব্যবস্থা এটাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ জানে যে, তারা এতো চুরি করেছে যে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরে থাক, সংসদে ১০ শতাংশের বেশি ভোটও পাবে না, বলেন তিনি।

বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আবার ওই জায়গায় ফেরত যাবে না মানুষ। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদেরকে সংলাপে ডেকেছিল, আমরা গিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের অবস্থা তৈরি হয়, তাহলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে, তাদের ইচ্ছার সরকার গঠন হবে। এখন গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে তখন কাউকে আর গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে না। এই কথায় কে বিশ্বাস করবে। এটা রাখাল বালকের গল্পের মতো। মনে আছে সে গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য প্রায় চিৎকার করতো বাঘ-বাঘ আসছে। গ্রামবাসী লাটি-সোটা নিয়ে বেরিয়ে আসতো আর রাখাল বালক হাসতো। তৃতীয়বার যখন সত্যি-সত্যি বাঘ আসে, সে চিৎকার শুরু করে, তখন আর কেউ আসেনি। আমরা তো দুইবার (২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে) প্রতারণার শিকার হয়েছি। তৃতীয়বার দেশের মানুষ আর প্রতারণার শিকার হবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এসব অন্যায় কেউ ভুলবে না। কারণ তোমরা কখনও কোনোও ওয়াদা রক্ষা করোনি। তোমরা যখন যা জাতির সামনে বক্তব্য দিয়েছ, ওয়াদা করেছ তা রক্ষা করনি।

বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন চায় উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, সেই নির্বাচনে তো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে। সেই প্রতিনিধি নির্বাচন করবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। কারণ সে তো এই দেশের মালিক। সংবিধান বলছে- এই দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন, তারাই নির্বাচন কমিশন করবে, তারাই নির্বাচনের আয়োজন করবে। জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।

বর্তমান সরকারের একটা লক্ষ্য চুরি-চুরি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে কারণে আমরা বারবার বলছি-এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো কারণ নেই।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতি করছে আর উন্নয়নের কথা বলছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আমরা বলেছি গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয় না। আজকে আন্তর্জাতিকভাবেও এটা বলা হচ্ছে। বিদেশি পত্রিকা বলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্ডার গ্রাউন্ডে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে যে ঢাকঢোল পিটিয়েছে, যে টাকা খরচ করেছে এখন সেটা কোথায়? তারা এখন নির্বাচনী ফান্ড তৈরির চেষ্টা করছে। এমনিতেই যেখানে বিমান চলতে পারে না সেখানে এয়ার বাস কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি হবে, আর তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ডে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, কারণ কি? এই যে ভয়াবহ চুরি, নজিরবিহীন দুর্নীতি। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ বিমান নাকি এয়ারবাস কিনবে? যে বিমান চলতেই পারে না, টাকা দিতে পারছে না তেলে প্রতি মুহূর্তে ভর্তুকি দিতে হয়। সেই বিমান কেন এয়ারবাস কিনছে, কেন। আমি কিছুদিন বিমান মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। বিমান বোয়িং কাউকে কমিশন দেয় না। তারা এয়ারবাস কিনছে এজন্য যে কমিশন পাওয়ার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে চুরি। এই চুরির কিছু বিদেশে পাচার করবে, বাকিগুলো দিয়ে আগামী নির্বাচনের টাকাও হয়ে যাবে।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সংগঠনের মহাসচিব এন, তরুণ দে প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সরকারে কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না : ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৩:২৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারে কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪-১৮ এর মতো আবারও সেপথে যেতে চায় সরকার, প্রশ্নই উঠে না, জনগণ সেদিকে যাবে না। ২০১৪-১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আলোচনায় গিয়ে কোনো সুফল আসেনি। বাঘ আর রাখাল বালকের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।

শনিবার (১০ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতা গৌতম চক্রবর্তীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সংসদে ১০ ভাগ আসনও পাবে না। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা এবং মন্ত্রীরা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি এখন ডেথ ইস্যু। ডেথ ইস্যু হবে কেন, এটাই এখন সব চাইতে লাইট ইস্যু। কারণ বিএনপি মনে করে সরকারের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ এরা এতো চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, তারা একটা সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি। সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো কারণে নেই। যার জন্য বলেছি একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন। কারণ আমার যে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, নির্বাচনের যে ব্যবস্থা এটাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ জানে যে, তারা এতো চুরি করেছে যে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরে থাক, সংসদে ১০ শতাংশের বেশি ভোটও পাবে না, বলেন তিনি।

বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আবার ওই জায়গায় ফেরত যাবে না মানুষ। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদেরকে সংলাপে ডেকেছিল, আমরা গিয়েছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম আলোচনার মাধ্যমে যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের অবস্থা তৈরি হয়, তাহলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে, তাদের ইচ্ছার সরকার গঠন হবে। এখন গতকাল আইনমন্ত্রী বলেছেন, যখন নির্বাচন চলবে, নির্বাচন কমিশনের সেই ক্ষমতা থাকবে তখন কাউকে আর গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে না। এই কথায় কে বিশ্বাস করবে। এটা রাখাল বালকের গল্পের মতো। মনে আছে সে গ্রামবাসীকে বোকা বানানোর জন্য প্রায় চিৎকার করতো বাঘ-বাঘ আসছে। গ্রামবাসী লাটি-সোটা নিয়ে বেরিয়ে আসতো আর রাখাল বালক হাসতো। তৃতীয়বার যখন সত্যি-সত্যি বাঘ আসে, সে চিৎকার শুরু করে, তখন আর কেউ আসেনি। আমরা তো দুইবার (২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে) প্রতারণার শিকার হয়েছি। তৃতীয়বার দেশের মানুষ আর প্রতারণার শিকার হবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, তোমাদের এসব অন্যায় কেউ ভুলবে না। কারণ তোমরা কখনও কোনোও ওয়াদা রক্ষা করোনি। তোমরা যখন যা জাতির সামনে বক্তব্য দিয়েছ, ওয়াদা করেছ তা রক্ষা করনি।

বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন চায় উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, সেই নির্বাচনে তো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে। সেই প্রতিনিধি নির্বাচন করবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী। কারণ সে তো এই দেশের মালিক। সংবিধান বলছে- এই দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন, তারাই নির্বাচন কমিশন করবে, তারাই নির্বাচনের আয়োজন করবে। জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।

বর্তমান সরকারের একটা লক্ষ্য চুরি-চুরি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে কারণে আমরা বারবার বলছি-এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো কারণ নেই।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতি করছে আর উন্নয়নের কথা বলছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আমরা বলেছি গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয় না। আজকে আন্তর্জাতিকভাবেও এটা বলা হচ্ছে। বিদেশি পত্রিকা বলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্ডার গ্রাউন্ডে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে যে ঢাকঢোল পিটিয়েছে, যে টাকা খরচ করেছে এখন সেটা কোথায়? তারা এখন নির্বাচনী ফান্ড তৈরির চেষ্টা করছে। এমনিতেই যেখানে বিমান চলতে পারে না সেখানে এয়ার বাস কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি হবে, আর তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি অলরেডি আন্ডারগ্রাউন্ডে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, কারণ কি? এই যে ভয়াবহ চুরি, নজিরবিহীন দুর্নীতি। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ বিমান নাকি এয়ারবাস কিনবে? যে বিমান চলতেই পারে না, টাকা দিতে পারছে না তেলে প্রতি মুহূর্তে ভর্তুকি দিতে হয়। সেই বিমান কেন এয়ারবাস কিনছে, কেন। আমি কিছুদিন বিমান মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। বিমান বোয়িং কাউকে কমিশন দেয় না। তারা এয়ারবাস কিনছে এজন্য যে কমিশন পাওয়ার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে চুরি। এই চুরির কিছু বিদেশে পাচার করবে, বাকিগুলো দিয়ে আগামী নির্বাচনের টাকাও হয়ে যাবে।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সংগঠনের মহাসচিব এন, তরুণ দে প্রমুখ।