নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। দেশব্যাপী পালিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি।
তিনি বলেন, তারা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন দেশকে স্বাধীন করা হয়েছে। দেশকে নতুনভাবে পরিচালনার জন্য আবার সংস্কার প্রয়োজন।আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে একেবারে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরো করে দিয়েছে। রিজার্ভ থেকে ৮শ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। ডলার সংকটে নিত্যপ্রয়োনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এ রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। দুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের পিটিয়ে আহত করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, টিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়নের চাকরির জন্যও ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আমি বলেছিলাম, এ সরকার বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির প্রধান খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে। আরও আছে, তেল আমদানি খাত।
তিনি বলেন, সিআইডি বলেছে, দেশ থেকে প্রতি বছর হুণ্ডির মাধ্যমে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। একটা বালিশ কিনেছে পাঁচ হাজার ৭০০ টাকায়। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকায় বানিয়েছে। আবার নতুন শুরু করেছে পাতাল রেল। উদ্দেশ্য একটাই লুট। ২১ কিলোমিটার পাতাল রেলে খরচ হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সীমাহীন দুর্নীতি দেশকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সব খেয়ে ফেলেছে, এখন বাংলাদেশের মানচিত্রটাও খেয়ে ফেলতে বসেছে। যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আদালত, সবখানেই দুর্নীতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি, সেখানেও ঘুষ দিতে হয়। একজন পিয়নের চাকরির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আদালত প্রাঙ্গণেও এই সরকার ভোট চুরির রূপ দেখিয়েছে।
সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি। এই সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিতে হলে এক-দুই দিনে হবে না, এক মাস সময় লাগবে। তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রতিক্ষেত্রে দুর্নীতি।
এ সময় আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল স্লোগান ধরেন… ‘গলি-গলি মে শোর হ্যায়।’ নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে বলে ওঠেন ‘শেখ হাসিনা চোর হ্যায়।’
সরকারের পতন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রধান কথা দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে। এই সরকার, যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তাদের জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে অবশ্যই তাদের সরাতে হবে।
মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দীন আলম, ডা. রফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রকিবুল ইসলাম বকুল, ইশরাক হোসেন, সাঈদ সোহরাব, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ ও ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল।