সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মা। গায়ে জ্বর ছিল। রাতেই রেজাল্ট এলো করোনা পজিটিভ। পরদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথম সন্তানের জন্ম দেন ডাক্তার শেফা ইসলাম তুলি। দুপুরের পর জন্ম নেয়া সেই ছেলে সন্তান রাতেই মারা যায়। একদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে রোববার মা তুলিও চলে যান না ফেরার দেশে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন শেফা ইসলাম তুলি (২৬)। ওই দিন রাতেই জানা গেল তিনি করোনা আক্রান্ত। পরদিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথম সন্তানের জন্ম দেন সদ্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ শুরু করা এই চিকিৎসক। কিন্তু দুপুরে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেসন্তান রাতেই মারা যায়। অথচ তখনো অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন তিনি। নতুন করে তুলির শরীরে দেখা দেয় ডায়াবেটিস আর প্রসব-পরবর্তী জটিলতা। শেষ পর্যন্ত গতকাল রবিবার সকালে মৃত্যুর কাছে হেরে গেছেন তুলি।
তুলির পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুলি মারা যান। হাসপাতালে ভর্তির এক দিন আগেও তুলির চাওয়া ছিল, তার সন্তানের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। নিজের যা-ই হোক, তার সন্তান যেন ভালো থাকে।
তুলির মৃত্যুতে তার পরিবারের মতো বাকরুদ্ধ বন্ধুমহল এবং সহকর্মীরাও। ইশরাত মৌরি নামের একজন নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “২৩ তারিখে আমাকে মেয়েটা কল দিয়ে বলেছিল, ‘আপু আমার বেবি হবে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে, রেজাল্টটা পেলে ভর্তি হতে পারব।’ মাত্র চার দিন আগে আমাদের (প্ল্যাটফর্ম) মাধ্যমে স্যাম্পল দিয়েছিল। ২৩ তারিখ রাতেই রেজাল্ট পেয়ে মেয়েটাকে মেসেজ দিলাম। আজ শুনি মেয়েটা নেই। তুলি গর্ভবতী ছিল, গত পরশু ওর বাচ্চাটা জন্ম নেয় এবং মাত্র ১ দিন বয়সেই মারা যায়। আজ তুলিও চলে গেল।”
তুলির বন্ধু নাফিসা তাহসীন গণমাধ্যমকে জানান, তুলির জ্বর ছিল, কিন্তু সেটাকে সবাই ভাইরাল ফিভার বলেই ধরে নিয়েছিল। বাসায় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে গত বৃহস্পতিবার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। নাফিসা বলেছেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের দিনও আমরা বন্ধুরা ওকে সাহস দেওয়ার জন্য ভিডিও কনফারেন্সে ছিলাম, সেখানে বারবার কেবল সে একটা কথাই বলেছিল, আমার বাচ্চাটার জন্য দোয়া করিস। আমার যা-ই হোক, আমার বাচ্চাটা যেন ভালো থাকে।’
জানা যায়, তুলি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুনও একজন চিকিৎসক। মা-বাবার সঙ্গে তুলি বনশ্রীর একটি বাসায় থাকতেন। তার ছোট ভাই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী।
গত ১০২ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডা. তুলিসহ দেশে ৭০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। একজন বাদে তাদের সবাই বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সদস্য ছিলেন। গত শনিবার করোনায় মারা যাওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শহীদুল্লাহ বিএমএ সদস্য ছিলেন না।
এই দুই চিকিৎসকের মৃত্যুতে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী শোক জানিয়েছেন।