বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪১ অপরাহ্ন

সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকা সেতু

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
আপডেট : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩৪ কোটি টাকা সেতু

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

প্রান্তিক জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জের ঘিওরের কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে আসছে না সরকারের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে বৈকুণ্ঠপুর কালিগঙ্গা নদীর ওপর ‘গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু (সিআইবিআরআর)’ প্রকল্পের আওতায় ৩৪ কোটি টাকার ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুই পাশে ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ করা কথা ছিল। তবে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেই সংযোগ সড়কের দেখা নেই।

ঘিওর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করে ঢাকার অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স ও মেসার্স কহিনুর এন্ট্রারপ্রাইজ (জেভি) নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে সেতুসহ সংযোগ সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

দরপত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার নির্দেশনা ছিল। এ সময়ের মধ্যেও কাজটি শেষ হয়নি।

এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথমার্ধে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০ কোটি থাকলেও পরবর্তী সময়ে সংযোগ সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য ৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পরও ব্যবহারের উপযোগী হয়নি সেতুটি।

এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, দ্রুত সংযোগ সড়ক তৈরি করে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। তবে সে প্রত্যাশা খুব শিগগিরই পূরণ হবে, এমন বাস্তবতা অবশ্য নেই। কেননা, সংযোগ সড়কের জন্য যেসব জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন, সেই প্রক্রিয়াতেই রয়েছে জটিলতা। জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় রাস্তা ছাড়ছেন না।

এ পরিস্থিতিতে সবুজের সমারোহে ঘেরা ফসলের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি কবে নাগাদ কাজে আসতে পারে, সে জবাব নেই কারও কাছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ও প্রশাসন অবশ্য বলছে, শিগগিরই জমি অধিগ্রহণের জটিলতা শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান হোসেন বলেন, সেতুটি দেখে মনে হয় এটি কোনো গায়েবি সেতু। কারণ সেতুর দুই পাড়ে শুধু ফসলের মাঠ। কোনো রাস্তা নেই। সেতুতে ওঠানামার রাস্তাই যদি না থাকে, সেতু করার দরকার কী? আগে জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা নির্মাণের পর সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া উচিত ছিল। এটি স্পষ্টতই পরিকল্পনার অভাব। আর সে কারণেই ৩৪ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা সেতুটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

ফসলের মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকায় প্রশ্ন উঠতে পারে, সেতুটি তাহলে কেন তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এখন সেতুটি স্থলে দেখা গেলে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই চিত্র পালটে যাবে। তখন সেতুর দুপারেই থাকবে বিস্তীর্ণ জল থই থই এলাকা।

মূলত কালিগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। শুকনো মৌসুমে সেটিকে নদী হিসেবে চিনতে পারা কষ্ট। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিলনালাই সিংজুরী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভায়া হয়ে বৈকুণ্ঠপুর বালিয়াবাধা সড়কে কালিগঙ্গা নদীর ওপর এ সেতুটি চালু হলে ঘিওর উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ সহজ হবে। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।

স্থানীয় বালিয়াবাধা গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, সেতু নির্মাণের আগে ভূমি অধিগ্রহণ করলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। সংযোগ সড়ক না হওয়ার কারণে জেলা শহরে যেতে হলে ১৫ কিলোমিটার ঘুরপথে যেতে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি, জমির মালিকদের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান হোসেনেরও দাবি, সেতু ব্যবহারের রাস্তাটি দ্রুত করা হোক, যেন বর্ষা মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ না পোহাতে হয়।

স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের অংশ হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের প্রচেষ্টায় কালিগঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তা নির্মাণ না করায় সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সবার দাবি, সংযোগ সড়ক তৈরি হোক।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ আর স্থাপনার ক্ষতিপূরণের টাকা দুই বছরেও বুঝে পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না তারা। জমি ও স্থাপনার মালিকরা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে বারবার ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘ভূমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় জমি ছাড়ছেন না। এলজিইডিও জমি বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ফলে কাজ শুরু করতে গেলেই ভূমির মালিকরা বাধা দিচ্ছেন। এ কারণেই বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেলে সংযোগ সড়ক তৈরি সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করতে চার-পাঁচ মাসের বেশি লাগবে না।’

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, দুই বছর আগে সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ঠিকাদার দুই পাশের সংযোগ সড়ক করতে পারছে না। অধিগ্রহণের বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জমির মালিকদের মধ্যে শিগগিরই চেক বিতরণ করা হবে। তখন ঠিকাদার দ্রুত কাজ শুরু করে দেবে।

ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মানিকগঞ্জ রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর এল এ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ জানান, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে ভূমির মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুত ভূমির মালিকদের তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আবহাওয়া