নিজস্ব প্রতিবেদক :
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়, সংস্কারের কথা বলে ধোঁয়াশা তৈরি করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা ও খুব দ্রুত নির্বাচন দেয়া।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমানের মাজারে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সংস্কারের নামে জনগণের চোখে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আপনারা সংস্কার করলে করুন। কিন্তু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্কারমূলক যেসব কাজ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ হলো জনগণের ক্ষমতা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। সেজন্য জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য নির্বাচনের তারিখ ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কে সংগঠন তৈরি করবে, কে দল তৈরি করবে, সেই দায়িত্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তির। এই দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার নয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) করতে হবে। তা না হলে জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে যে শেখ হাসিনার কোনো প্রেতাত্মা আবার জন্ম নেয় কিনা।
রিজভী বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাপোর্ট দেই। কিন্তু আপনাদের (সরকারকে) মনে রাখতে হবে যে আপনাদের সিদ্ধান্ত যেন গণবিরোধী না হয়। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। চালের দাম কমাতে পারেননি। তার মধ্যে যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে মরার উপর খাড়ার ঘা ছাড়া কিছুই নয়।’
তিনি আরো বলেন, এই সরকারের জবাবদিহিতা থাকলে ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডারে ১৯ টাকা বাড়াতে পারতো না। যারা সীমিত আয়ের মানুষ, সিএনজি কিংবা রিকশাচালক, যারা দিনমজুরি করে খায়, তাদের ওপর ভয়ঙ্কর চাপ পড়বে। এই যে প্রতি সিলিন্ডারে ১৯ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে, এটা অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। নির্বাচিত সরকার থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি হবে না।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। সেই ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দেশে কে সরকার গঠন করবে, তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করতে দেয়নি। ছাত্র-জনতার রক্তঝরা গণআন্দোলনে সেই ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ফলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য, জনগণের আশা জাগানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক কিছু করার আছে। দেশের জনগণ গত ১৬-১৭ বছর ধরে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। ভোট দিতে পারেনি। জনগণের চাওয়া অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সেই পরিবেশটা তৈরি করবে। দেশের জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার নেই বলে আজ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। বিনিয়োগ করতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে, সাময়িক সময়ের সরকার। সুতরাং মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। মানুষ একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এই অনিশ্চয়তা কাটানোর জন্যই রাজনৈতিক সরকার দরকার। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেবে, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে, সেই ধরনের সরকার দরকার। জনগণের জবাবদিহিতামূলক সরকার হবে নির্বাচিত সরকার।
তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে সঙ্কট, যে কারণে বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমাদের জাতীয় রিজার্ভ আবারো কমতে শুরু করেছে। দিগন্ত রেখায় কালো মেঘ দেখা দিচ্ছে। এগুলো দূরীভূত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে নির্বাচিত সরকারের পথে হাঁটতে হবে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, সহ-অর্থ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, এস এ জিন্নাহ কবিরসহ নেতাকর্মীরা।